• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

পাল্লাহু । pAllahu

দাঁড়িপাল্লা ধমাধম-এর বাংলা ব্লগ

  • পাল্লাব্লগ
  • চুতরাপাতা
  • মহাউন্মাদ
  • ধর্মকারী
  • রেফারেন্স
  • ট্যাগস

সাইমুম (উপন্যাস: পর্ব – ৫)

You are here: Home / ধর্মকারী / সাইমুম (উপন্যাস: পর্ব – ৫)
September 26, 2016
লিখেছেন উজান কৌরাগ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪
সংগ্রামে ভরা জীবন শাশ্বতীদির। সত্য এবং নিজের বিশ্বাসে অটল থেকে সমাজ আর পরিবারের সঙ্গে ক্রমাগত লড়াই ক’রে মাথা তুলে দাঁড়ানোর এক আদর্শ চরিত্র। ঘুম যেহেতু আসছেই না, লেখাটা পড়েই ফেলি। ক্লিক ক’রে ওর ব্লগে ঢুকে পড়তে শুরু করলাম।
জন্মান্তর (পর্ব – এক)
রতিক্লান্ত দেহে আমার বর এখন বেঘোরে ঘুমোচ্ছে তার ভাঁজ করা ডান হাত আমার বুকের ওপর দিয়ে বাঁ-কাঁধের কাছে আর দ আকৃতির ডান পা দুই ঊরুর ওপর রেখে; তার নিশ্বাস পড়ছে আমার গলার ডানদিকে, গালেও। আমরা দু’জনই নগ্ন! এই যে আমার বর নগ্ন হ’য়ে তার ডান হাত আর ডান পায়ের ভর রেখেছে আমার শরীরের ওপর, আমার শরীরের সাথে লেপটে সে দিব্যি ঘুমোচ্ছে, এই অভিজ্ঞতা আমার আজই প্রথম নয়; অনেক রাত আমরা এভাবে পার করেছি। তবু আমার মনে হচ্ছে আজই প্রথম, আজই প্রথম আমি বরের স্পর্শ সুখ পেলাম; আজই প্রথম আমার জীবন পূর্ণতা পেল, নারীজীবন! কী যে সুখ অনুভূত হচ্ছে, কী যে ভাল লাগছে, কী যে আনন্দের হড়কা বান বইছে আমার হৃদ চরাচরে, সেই অনুভূতি কখনোই আমি শব্দে শব্দে লিখে বা মুখে ব’লে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারবো না কারো কাছে; এমনকি আমার বরের কাছেও নয়। এই সুখ, ভাললাগা, আনন্দের অনুভূতি অব্যক্ত; সকলের সঙ্গে ভাগ ক’রে নেবার পরও হৃদয়ের কোটরে কিছু গোপন থেকেই যায়, যা কারো কাছে ব্যক্ত করা যায় না, এই অনুভূতির কোনো শরিক হয় না। কোনো শব্দেই গাঁথা যায় না এই সুখানুভূতির মালা, কোনো উপমায়ই স্পর্শ করা যায় না এই সুখানুভূতির নিগূঢ় নিগদ, কোনো ভাষায়ই অনুবাদ করা যায় না এই সুখানুভূতির পংক্তিমালা; এ এক অপার সুখের অলিখিত বিমূর্ত মহাকাব্য, যার রসাস্বাদন কেবল নিজেই করা যায়, তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা যায়! এই অতুল আনন্দে, বিপুল সুখে ঘুম আসছে না আমার! এখন রাত কতো? দুটো তো হবেই। ঝমঝম ক’রে বৃষ্টি নামছে, আষাঢ়ে বৃষ্টি। মহল্লায় কোনো সাড়াশব্দ নেই, সারা মহল্লার মানুষ এখন ঘুমোচ্ছে; আমিই কেবল জেগে জেগে হাবুডুবু খাচ্ছি সুখের ভাবালুতায়। মনে হচ্ছে রাত দীর্ঘ হোক, এমনি ক’রে অঝোর ধারায় কামুক বৃষ্টি নেমে ভেজাক মাটির জরায়ু, যাতে আমি দীর্ঘ সময়ব্যাপী একা একা এই সুখ উদযাপন করতে পারি!
আজ আমার কতো কিছু মনে পড়ছে; শৈশব-বাল্য-কৈশোরের কথা, বাবা-মায়ের কথা, স্কুলের বন্ধুদের কথা, পাড়া-পড়শি এবং আত্মীয়-স্বজনের কথা। মনে পড়ছে সেইসব অপমান, অবহেলা, দুঃখগাঁথা দিনগুলোর কথা। আজকের এমন সুখের রাতে সেইসব কথা মনে করতে চাইনে, যা আমার জন্য মোটেও সুখকর নয়, তবু মনে পড়ছে। তা ব’লে সেইসব দুঃখগাথা দিনের কথা মনে ক’রে আমি আজকের এই সুখের রাতে এই ভেবে কাঁদতে বসবো যে, আহা, কতো অশ্রু দিয়েই না আমি কিনেছি এই সুখ; সেইসব দিনের কথা স্মৃতিতে উথলে উঠবে, আমি আনন্দ অশ্রু বিসর্জন ক’রে বুক ভাসাবো, বালিশ ভেজাবো, বরের গা ভেজাবো; অমন মেয়েই আমি নই। কান্নার দিন আমি অনেক পেছনে ফেলে এসেছি। এখন কেবল হাসবো। হাসবো আর তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করবো জীবন, আহা নারীজীবন! 
আমি জানি যে, আমার এই সুখের জীবন আরো সুখের হতে পারে, যদি সমাজের মানুষের হাতে হাত ধরে, পায়ে পা মিলিয়ে পথ চলতে পারি। কিন্তু সেই সৌভাগ্য কি এই পোড়া দেশে আমার হবে! সমাজের কেউ কেউ কাঁকড় বিছিয়ে রাখবে আমার পথে, বাক্যবাণ নিক্ষেপ ক’রে আমাকে ক্ষতবিক্ষত করতে চাইবে। তবু এই বিরূপ সমাজের ভেতর থেকেই যে অল্প ক’জনকে সঙ্গে পাব, তাদের হাত ধরেই আমি এগিয়ে যাব ভবিষ্যতের পথে। যাত্রাপথে কিছু লোক গায়ে হুল ফোটালে, পায়ে কামড় দিলে তা আমি আমলে নেব না। এরা মহাকালের কাঁকড়া-বিছা জাতীয়; অতীতে ছিল, এখনো আছে, হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। এদের জন্য মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রা কোনোকালে থেমে থাকেনি, ভবিষ্যতেও থেমে থাকবে না। 
আজ আমার মনে পড়ছে তুলিভাবীর কথা। বেচারি তুলিভাবী! অমন ভরপুর যৌবন, কিন্তু বর ইংল্যান্ডে থাকায় তার যৌবন গুমরে কাঁদতো একলা ঘরে। বাড়িতে ছিল কেবল শাশুড়ি আর শ্বশুর। আমাদের বাড়ি আর ভাবীদের বাড়ি ছিল পাশাপশি; ফরিদপুর শহরের শেষ প্রান্তের দিকে, যেখান থেকে শুরু ফসলের উন্মুক্ত মাঠ আর মাঠের পরে গ্রাম। যার ফলে আমরা গ্রাম আর শহরের মিশ্র স্বাদ পেতাম। আজ থেকে পনের বছর আগের কথা, আধুনিকতার ছোঁয়ায় এতোদিনে নিশ্চয় আমাদের পাড়াটা বদলে গেছে; হয়তো বদলে গেছে মানুষও। তখন আমাদের পাড়ায় তো আমরা সবাই সবাইকে চিনতাম, এমনকি ভাড়াটিয়াদেরকেও। 
ভাবী তখন বাইশ-তেইশ বছরের যুবতী, তার শরীরে উছলে পড়া যৌবন; যৌবন ভরা শরীরে নতুন স্বাদ আর লোভ জাগিয়ে তার বর ইকবাল ভাই ফিরে গেছে ইংল্যান্ডে, এদিকে সে তো যৌবন যাতনায় অধীর চঞ্চল! ভাবীর শ্বশুরের নাম সিরাজুল ইসলাম, আমরা সিরাজ চাচা ব’লে ডাকতাম। সিরাজ চাচা, চাচী আর ভাবীর সঙ্গে আমাদের পরিবারের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। এ বাড়ির ভাত-তরকারি ও বাড়িতে যেত, ও বাড়ির ভাত-তরকারি এ বাড়িতে আসতো। যেহেতু ইকবাল ভাই থাকতো বিদেশে, আর সিরাজ চাচা এবং চাচী খুব বৃদ্ধ নয় ব’লে তাদের সেবাযত্নেও অতিরিক্ত সময় ব্যয় হতো না, ফলে সংসারের টুকিটাকি কাজ সামলেও অনেক অবসর পেত ভাবী। তাই যখন-তখন আমাদের বাসায় আসতো সে, মা এবং আমার বড় দুই আপুর সঙ্গে গল্প ক’রে আর লুডু খেলে সময় কাটাতো। আমি তখন আঠারোয় পা দিয়েছি, মাঝে মধ্যে আমিও লুডু খেলতাম তাদের সঙ্গে। এই তুলিভাবীর সঙ্গেই আমার প্রথম যৌনসম্পর্ক!
মহাভারতের একটা গল্পের কথা মনে পড়ছে আমার। ওই যে যুদ্ধ শেষেও কুরুক্ষেত্রে ওঘবতী নদীর তীরে পিতামহ ভীষ্ম যখন শরশয্যায় শায়িত তখন যুধিষ্ঠির তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘পিতামহ, স্ত্রী-পুরুষের মিলনকালে কার স্পর্শসুখ অধিক হয়?’ এই প্রশ্নের উত্তরে ভীষ্ম যে গল্পটি যুধিষ্ঠিরকে শুনিয়েছিলেন, সেই গল্পটি। গল্পটি হলো: 
‘ভঙ্গাস্বন নামে একজন ধার্মিক রাজর্ষি পুত্রকামনায় অগ্নিষ্টুত যজ্ঞ ক’রে শতপুত্র লাভ করেছিলেন। এই যজ্ঞে কেবল অগ্নিরই স্তুতি করা হয়, এজন্য বরাবরের ঈর্ষাকাতর ইন্দ্র ক্রুদ্ধ হ’য়ে রাজর্ষির অনিষ্ট করার সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। একদিন ভঙ্গাস্বন মৃগয়া করতে গেলে ইন্দ্র সুযোগ পেয়ে তাকে বিমোহিত করলেন। ভঙ্গাস্বন দিগ্ভ্রান্ত, শ্রান্ত ও পিপাসার্ত হ’য়ে অরণ্যে ঘুরতে লাগলেন, ঘুরতে ঘুরতে একটি সরোবর দেখতে পেয়ে কাছে গিয়ে তিনি প্রথমে তার অশ্বকে জল পান করালেন। তারপর নিজে সরোবরে অবগাহন করলেন এবং তৎক্ষণাৎ স্ত্রীরূপ পেলেন। নিজের এই আকর্ষিক রূপান্তর দেখে বিস্মিত, লজ্জিত ও চিন্তিত ভঙ্গাস্বন তখনই অশ্বের পৃষ্ঠে আরোহন ক’রে রাজপুরীতে ফিরলেন। তাকে দেখে তার পতœী-পুত্রগণ এবং রাজপুরীর অন্যান্যরা চিনতে না পারলে তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে সকল বৃত্তান্ত জানালেন সবাইকে। এরপর তিনি তার পুত্রদেরকে ডেকে বললেন, “আমি বনে চ’লে যাব, তোমরা সকলে একত্র থেকে সৎভাবে রাজ্য ভোগ কর।” 
স্ত্রীরূপী ভঙ্গাস্বন রাজ্য ত্যাগ ক’রে অরণ্যে গিয়ে এক তপস্বীর আশ্রমে বাস করতে লাগলেন। কালক্রমে সেই তপস্বীর ঔরসে ভঙ্গাস্বনের গর্ভে একশ পুত্রের জন্ম হলো। একদিন তিনি তার এই শতপুত্রকে নিয়ে রাজপুরীতে গিয়ে পূর্বজাত শতপুত্রকে বললেন, “তোমরা আমার পুরুষ অবস্থার ঔরসজাত পুত্র, আর এরা আমার নারী অবস্থার গর্ভজাত পুত্র। তোমরা তোমাদের এই ভ্রাতাদের সঙ্গে মিলিত হ’য়ে রাজ্যভোগ কর।”
ভঙ্গাস্বনের আদেশ অনুসারে তার দুইশত পুত্র একত্রে মহানন্দে রাজ্য ভোগ করতে লাগলো। তাদের সুখ দুষ্টু ইন্দ্রের সহ্য হলো না; ইন্দ্র ভাবলেন, আমি রাজর্ষি ভঙ্গাসনের অপকার করতে গিয়ে উল্টো উপকারই করেছি। তিনি তৎক্ষণাৎ ব্রা‏হ্মণের বেশ ধারণ ক’রে রাজপুরীতে গিয়ে ভঙ্গাসনের ঔরসজাত পুত্রদের বললেন, “যারা এক পিতার পুত্র তাদের মধ্যেও সৌভ্রাত্র থাকে না; কশ্যপের পুত্র সুর এবং অসুরগণের মধ্যে বিবাদ হয়েছিল। তোমরা রাজর্ষি ভঙ্গাসনের ঔরসজাত পুত্র আর ওরা একজন অরণ্যচারী তপস্বীর ঔরসজাত পুত্র; এই পৈত্রিক রাজ্য ভোগ করার অধিকার কেবল তোমাদের, ওরা তোমাদের পৈত্রিক রাজ্য ভোগ করছে কেন?”
ইন্দ্র কু-বুদ্ধি দেবার পর ভঙ্গাসনের উভয় পক্ষের পুত্রদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হলো, তারা যুদ্ধ ক’রে পরস্পরকে বিনষ্ট করলো। পুত্রদের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ভঙ্গাস্বন মুষড়ে পড়লেন। তখন ইন্দ্র তার কাছে গিয়ে বললেন, “তমি আমাকে আহব্বান না ক’রে অগ্নিষ্টুত যজ্ঞ করেছিলে সেজন্য আমি রুষ্ট হ’য়ে তোমাকে শাস্তি দিয়েছি।”
ভঙ্গাস্বন পদানত হ’য়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ইন্দ্র প্রসন্ন হলেন। বললেন, “আমি তুষ্ট হয়েছি; বলো, তুমি তোমার কোন্ পুত্রদের পুনর্জীবন চাও-তোমার ঔরসজাত পুত্রদের, না গর্ভজাত পুত্রদের?”
তপস্বিনীবেশী ভঙ্গাস্বন তখন কৃতাঞ্জলি হ’য়ে বললেন, “আমি আমার স্ত্রী অবস্থার গর্ভজাত সন্তানদের পুনর্জীবন চাই।”
ইন্দ্র বিস্মিত হ’য়ে বললেন, “তোমার গর্ভজাত পুত্ররা ঔরসজাত পুত্রদের চেয়ে বেশি প্রিয় হলো কেন?”
ভঙ্গাস্বন বললেন, “দেবরাজ, পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রী অধিক স্নেহময়ী, পুরুষের চেয়ে স্ত্রীর স্নেহই প্রবল।”
ইন্দ্র প্রীত হ’য়ে বললেন, “সত্যবাদিনী, আমার বরে তোমার সকল পুত্রই জীবিত হোক। এখন তুমি বলো, পুরুষত্ব না স্ত্রীত্ব চাও তুমি?”
ভগ্নাস্বন বললেন, “আমি স্ত্রীরূপেই থাকতে চাই।”
ইন্দ্র আরো বিস্মিত হ’য়ে কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, “দেবরাজ, স্ত্রী-পুরুষের মিলনকালে পুরুষের চেয়ে স্ত্রীরই অধিক সুখ হয়, আমি স্ত্রীরূপেই তুষ্ট আছি।” 
ইন্দ্র তার ইচ্ছাপূরণ ক’রে বিদায় নিলেন।’
আমি একালের ভঙ্গাস্বন। তবে দুষ্টু দেবরাজ ইন্দ্র বা অন্য কোনো দেবতা আমার রূপান্তর ঘটায়নি; প্রকৃতিই আমার ভেতরে বপন ক’রে রেখেছিল নারীত্বের বীজ, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অঙ্কুরিত হ’য়ে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছিল। প্রকৃতিই আমার মনের ভেতরে নারীত্বের বিস্তার ঘটিয়েছে, আর আমার শরীরের রূপান্তর ঘটিয়েছে শল্য চিকিৎসক। আমার রূপান্তরের কথা শুনে কেউ কেউ আমাকে শয়তান কিংবা ডাইনি বলতে শুরু করেছে, কেউ বলছে এটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ, পুরুষমানুষ আবার নারী হয় নাকি? এদেরকে কিছুতেই বোঝাতে পারিনা যে, হয়, পুরুষ নারী হয়, আবার নারীও পুরুষ হয়; যদি প্রকৃতি পুরুষের ভেতর নারীত্বের আর নারীর ভেতর পুরুষত্বের বীজ বপন ক’রে রাখে; যেমনি আমার ভেতরে বপন করা ছিল নারীত্বের বীজ। 
শুধু কি মানুষ, প্রাণীজগতের আর কোনো প্রাণীর মধ্যে এমন রূপান্তর ঘটে না? নিশ্চয় ঘটে, প্রাণিজগতের আরো অনেক প্রাণীর মধ্যে নিশ্চয় এমন রূপান্তরের ঘটনা ঘটে। এতো বড় পৃথিবীতে অগণিত প্রাণীর বাস; হয়তো প্রতি মুহূর্তে বিবর্তন ঘটছে, প্রতি মুহূর্তে বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী হচ্ছে এই পৃথিবী; আমরা তার কতটুকুই বা জানতে পারি! তবু বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে মাঝে মাঝেই আমরা এমন কিছু ঘটনা জানতে পারি, যে-ঘটনা আমরা কোনোদিন দেখিনি, যে-ঘটনা আমাদের পরিচিত প্রাণীদের মধ্যে আমরা ঘটতে দেখিনি। ফলে এই অদেখা-অজানা ব্যাপারটা কারো কারো কাছে অস্বাভাবিক বা প্রকৃতিবিরুদ্ধ মনে হলেও আদতে তা স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক। উত্তর আমেরিকার ক্লিনার ফিশের কথাই ধরা যাক, এই মাছের মধ্যে রূপান্তরকামিতার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Laborides Dimidiatus. এই প্রজাতির পুরুষ মাছ একসঙ্গে পাঁচ থেকে দশটা স্ত্রী মাছের সঙ্গে থাকে এবং যৌনাচার করে। এটা কিন্তু মানুষের মতোই স্বাভাবিক। আমরা জানি যে, শ্রীকৃষ্ণের একাধিক স্ত্রী এবং অসংখ্য সখী ছিল; হযরত মুহাম্মদ তেরো স্ত্রী, একাধিক যৌনদাসী এবং গণিমতের মালের সঙ্গে যৌনাচার করেছেন; আগের দিনের রাজা-বাদশাহ এবং পুরোহিতগণ ডজন ডজন স্ত্রী এবং যৌনদাসী রাখতেন; এখনো সৌদি আরবের বাদশাহ এবং বনেদীদের বিবির বহরের কথা আমরা জানি; আর আজকাল আমাদের দেশের অনেক সামর্থ্যবান মানুষও সামাজিক মর্যাদার জন্য ঘরে এক পত্নী রাখলেও বাইরে অনেক উপপত্নী রাখেন! 
ক্লিনার ফিশ প্রজাতিতে একই সঙ্গে পাঁচ থেকে দশটা স্ত্রী মাছের মধ্যমণি হ’য়ে থাকা পুরুষ মাছটির হঠাৎ মৃত্যু হ’লে স্ত্রী মাছের ভেতর থেকে যে কোনো একটা মাছ বয়োজ্যেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে হোক অথবা প্রভাব খাটিয়েই হোক দলের অন্য স্ত্রী মাছগুলোর দায়িত্ব নেয়। আর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ক্রমে ক্রমে ওই স্ত্রী মাছটির দৈহিক পরিবর্তন হতে থাকে; মাত্র দু-সপ্তাহের মধ্যেই তার গর্ভাশয়ে ডিম্বানু উৎপন্ন বন্ধ হয় এবং নতুন পুরুষাঙ্গ গজিয়ে সে পূর্ণাঙ্গ পুরুষ হ’য়ে যায়। 
রূপান্তরের উদাহরণ আরো আছে। উত্তর আমেরিকার সমুদ্র উপকূলে Atlantic Slipper Shell নামে এক প্রজাতির ক্ষুদ্র প্রাণীর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা; যার বৈজ্ঞানিক নাম Crepidula Formicata. এই প্রজাতির পুরুষেরা একা একা ঘুরে বেড়ায়, ঘুরতে ঘুরতে কোনো স্ত্রীর সংস্পর্শে এলে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হয়; যৌন সঙ্গমের পর পরই পুরুষটির পুরুষাঙ্গ খসে পড়ে এবং সে স্ত্রীতে রূপান্তরিত হয়, রূপান্তরের পর এরা আর একা একা ঘুরে বেড়ায় না, স্থায়ীভাবে কোথাও বসবাস করে। 
এই যে দুটি প্রজাতির একটির স্ত্রী পুরুষে এবং অপরটির পুরুষ স্ত্রীতে রূপান্তরিত হলো, এটা কি প্রকৃতিবিরুদ্ধ? এই দুই প্রজাতির স্ত্রী বা পুরুষের তো এই রূপান্তরে কোনো হাত নেই, প্রকৃতির নিয়মে আপনাআপনিই এরা রূপান্তরিত হয়েছে। পৃথিবীতে নিশ্চয় এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে যা এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। তার মানে রূপান্তরকামিতা প্রকৃতির স্বাভাবিক একটি ঘটনা।
অথচ মোল্লা-পুরোহিতরা তো বটেই সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ থেকে শুরু ক’রে আজকের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা শিক্ষিত প্রজন্মের বেশিরভাগ মানুষই রুপান্তারকামিতাকে আখ্যা দেয় প্রকৃতিবিরুদ্ধ এবং দৈহিক বিকৃতি ব’লে। প্রকৃতিতে উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও এরা বলে, ‘ওসব তো আল্লাহ বা ভগবানের ইচ্ছায় এমনিতেই হয়েছে। আর মানুষ তো শল্য চিকিৎসা করিয়ে স্বেচ্ছায় নিজের শরীরের বিকৃতি ঘটাচ্ছে। আল্লাহ যেভাবে পাঠিয়েছে, সেভাবেই থাকা উচিত; খোদার ওপর খোদগারি করার দরকার কী!’
কী আশ্চর্য, শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে রূপান্তরকামিতা যদি খোদার ওপর খোদগারি হয়, তবে তো খৎনা করাও খোদার ওপর খোদগারি। আল্লাহই যদি মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে থাকবে, তো তিনি নিশ্চয় মানুষকে অপরিপূর্ণভাবে পাঠাননি, যার যেখানে যতটুকু প্রয়োজন, নিশ্চয় ততটুকু দিয়েই তিনি পাঠিয়েছেন। সেই হিসেবে পুরুষ এবং নারীর যৌনাঙ্গ সৃষ্টিতেও তিনি কোনো অপূর্ণতা রাখেননি। তাহলে ইহুদিদের রীতি গ্রহণ ক’রে মুসলিম পুরুষরা কেন তাদের পুরুষাঙ্গের বাড়তি চামড়াটুকু কেটে ফেলবে, নিশ্চয়ই ওই চামড়াটুকুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন বলেই আল্লাহ চামড়াটুকু দিয়েছেন! খৎনা ক’রে চামড়া কেটে ফেলা কি খোদার ওপর খোদগারি নয়! আফ্রিকার কোনো কোনো দেশের মুসলিম নারীদেরকেও খৎনা করা হয়, নিশ্চয়ই তা খোদার ওপর খোদগারি! মুসলমানদের দেহে যে কোনো ধরনের অস্ত্রপাচার করাও নিশ্চয় খোদার ওপর খোদগারি! 
আমি তুলিভাবীকে পছন্দ করতাম তার হাসিখুশি চেহারা এবং অমায়িক ব্যবহারের জন্য। সহজেই সে সবার সাথে মিশতে পারতো, সবাইকে আপন ক’রে নিতে পারতো। তখন আশ্বিন মাস; আমি ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। শুক্রবার দুপুরবেলা; নামাজ পড়তে যাব না শুনে আব্বা গজগজ করতে করতে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে আমি ঘর থেকে বেরোলাম আমাদের গলির মোড়ের দোকানের উদ্দেশে। ভাবীদের বাড়ির সদর গেটের সামনে দিয়ে যাচ্ছি, জানালা দিয়ে আমাকে দেখে ভাবী বললো, ‘কোথায় যাচ্ছ?’ 
বললাম, ‘সুবলদার দোকানে যাচ্ছি।’
‘কেন?’
‘এমনিতেই, কোনো কাজ নেই।’
‘সেমাই রান্না করেছি, খেয়ে যাও।’
এটা আমার জন্য নতুন কিছু নয়, ভাল কিছু রান্না করলে ভাবী আর চাচী হরহামেশাই আমাকে খেতে ডাকে। ভাবী এসে গেট খুলে দিল, আমি মহানন্দে ভাবীর পিছন পিছন চললাম সেমাই খেতে। এ বাড়িতে আমার অবাধ যাতায়াত। ঘরে ঢুকে বেতের চেয়ারে বসলাম, ভাবী গেল আমার জন্য সেমাই আনতে। অল্পক্ষণ পরই ছোট্ট মেলামাইনের বাটিতে একবাটি সেমাই আর চামচ এনে আমার হাতে দিয়ে ভাবী বসলো চেয়ার লাগোয়া বিছানায়। আমি খেতে খেতে বললাম, ‘চাচী কই?’
‘বাবা আর মা আজ সকালে ঢাকায় গেছে, বেলা আপার পেটের টিউমার অপারেশান হবে আগামীকাল।’ 
বেলা আপা, মানে সিরাজ চাচার ছোট মেয়ে, ভাবীর ননদ। 
বললাম, ‘কবে আসবে?’
‘বাবা পরশুদিনই চ’লে আসবে, কিন্তু মা থাকবে আরো কিছুদিন।’ 
আমি সেমাই খাচ্ছি, ভাবীর রান্নার হাত দারুণ, যা রান্না করে তাই যেন অমৃত! আমি খাচ্ছি, ভাবী আদর ক’রে আমার মাথার চুলে-কাঁধে আঙুলের স্পর্শ বুলিয়ে যাচ্ছে। ভাবীর এই আদুরে স্পর্শও নতুন কিছু নয়; মা আর আপুদের সামনেও তো ভাবী আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, পিঠ চাপড়ে দেয়, লুডু খেলতে খেলতে বা অন্য কোনো উপলক্ষ পেলে আদর ক’রে গাল টিপে দেয়! 
সেমাই খেয়ে হাত-মুখ ধুয়ে, জল খেয়ে এসে আবার চেয়ারে বসলাম। ভাবীও আমার এঁটো বাটি রান্নাঘরে রেখে এসে আবার আগের জায়গায় বসলো। আমার লেখাপড়া, কলেজ, বন্ধুবান্ধব সম্পর্কে নানা ধরনের প্রশ্ন করতে করতে ভাবী একইভাবে আমাকে আদর করতে লাগলো। আমার হাতটি তার কোলের ওপর নিয়ে টিপতে লাগলো। এরপর আমার হাতটি নিয়ে তার মুখে ঘষতে ঘষতে হঠাৎ নরম স্তনে চেপে ধরলো। আমি ভয় পেয়ে বেশ জোরেই বললাম, ‘ভাবী, এ কী করছো!’
‘চুপ….!’ পুকুরের জলে খসে পড়া গাছের পাতার মতো নীরবে ভাবীর ডানহাতের তিনটি আঙুল স্পর্শ করলো আমার ঠোঁট।
(চলবে)
Category: ধর্মকারীTag: রচনা
Previous Post: « ক্যাপশন কী হতে পারে?
Next Post: সত্যাসত্য ভগবানেশ্বরাল্যারা »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পাল্লাহু । pAllahu • ফেসবুক • পেজ • টুইটার

Return to top