বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম–পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করিলাম। তারপর শুরু করি আসিফ মহিউদ্দীন (বানান ঠিক আছে?) স্যারের নামে। ভুলটা অবশ্য আমারই। সেই ভুলটা আগে সংশোধন কইরা তারপর বাকি কথা–
আসিফ স্যার ইনবক্সে ভুলটা ধরাইয়া দিছিলেন–//আপনার ‘প্রমাণ’ পোস্টটা পড়লাম… একটা বিষয় উল্লেখ করা উচিত ছিল। নাদিয়া পুলকের পোস্টে গণহারে সবাইরে গাইল্লাইতেছিল… সেইটা আপনার চোখে পরলো না কেন বুঝলাম না। সেইটুকু ইগনোর কইরা গেলেন, আপনার কথাগুলা তো রেকর্ড হইয়া থাকলো…// প্রমাণ পোস্টটার (545248769624664) এই জায়গায় ‘রেফারেন্স দিমু না’ লেখা ছিল। মনে হয় দেয়া উচিত ছিল, তাহলে এই ভুলটা হইত না। কিন্তু গালাগালি শুরু হইতেই অফ গেছিলাম। তাই এগুলায় এতটা গুরুত্ব দেয়া হয় নাই। পুলক স্যারের পোস্ট এবং পোস্টের কমেন্টগুলা যারা প্রথম থিকা পড়েছেন, তারা জানেন কীভাবে কী হইছিল। তাই এই নিয়া নতুন কইরা কিছু বলার নাই। (পরে সময় কইরা ফেবুপোস্ট আর ব্লগপোস্ট–দুইজায়গাতেই ভুলটা সংশোধন কইরা দেব।)
এইবার আরিফুর রহমান স্যারের বিষয়ে আসি। তিনি এবং তেনারা বেশ কিছুদিন ধরে একটা অন্যরকম ‘সৃজনশীল’ লেখালেখির দিকে ঝুঁইকা পড়েছেন। তার একটা বিষয় হইলো–নাস্তিকরা খালি নবির যৌন-কেচ্ছা-কেলেঙ্কারী নিয়া পইড়া আছে। (সব নাস্তিক এক না।) অনেকেই জানেন উনার ব্লগ জীবনের শুরু থিকা অনেকদিন পর্যন্ত উনি প্রচণ্ড ‘গালিবাজ’ আছিলেন। আবার ধর্মকারী নিয়াও উনার কোনো চুলকানি আগে চোখে পড়ে নাই। সেই কারণে সুশীল নাস্তিকদের অপছন্দের সানিস্বতী পূজা টাইপের ইভেন্ট-টিভেন্ট হইলে উনাকেও এডমিন বানায়া সঙ্গে রাখার চেষ্টা করতাম। উনি কখনো রুচিবোধের দোহাই দিয়া সইরা গেছেন বইলাও মনে পড়ে না।
নবির এই যৌনতা বিষয়ে আমার কথা হইলো–বাঙালিদের একটা কমন চরিত্র তো জানেন–ভেতরে ভেতরে আমরা যতই সদরঘাট হই না কেন, উপরে উপরে আমাদের সবার ‘চরিত্র’ ফুলের মতো পবিত্র–আর তাই যৌনতা বিষয়ে আমরা অন্যদের বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নই। কাউকে হেয় করতে হলে তার যৌনজীবন নিয়ে হাউকাউ করতে ভালোবাসি–কারো কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির স্নাপশট পাইলে তো কথাই নেই। আস্তিকরা তো আছেই, নাস্তিকরাও কোনো অংশে কম না–খুব কম নাস্তিক আছে যারা কখনো না কখনো অন্যের সমালোচনার নামে যৌনজীবন নিয়া চর্চা করে নাই–
তো নাস্তিকরা যখন আস্তিকদেরকে নবির যৌনতা বিষয়ক কাহিনী শোনায়, তখন তারা প্রথম একটা বড়সড় ধাক্কার মতো খায়–কী, আমাদের ফুলের মতো চরিত্রবান নবির এই কাহিনী! আর এই বিষয়ে এদেরকে তথ্যপ্রমাণ দিতে পারলে একটা পর্যায়ে শুধু এই কারণেই এরা নাস্তিকতার পথে আসতে শুরু করে। তারপর এরাই আবার অন্য আস্তিকদেরর উপর এই একই ফর্মূলা এপ্লাই করে। যারা হেঁহেঁ গ্রুপে ছিলেন, তারা জানেন এই ফর্মূলা কতটা কার্যকরী, আর কাউরে ক্ষেপাইতে পারাটা কেমন! এই কারণে প্রথমদিকে অনেক নাস্তিকই এই একটা ক্যাচাল নিয়া পইড়া থাকে। আর যারা রুট লেভেলে কাজ করে, তাদের কাছে এইটা তো একটা পারমাণবিক অস্ত্রের মতো।
নতুনরা বেশ কিছুদিন এই চক্রের মধ্যে ঘুরপাক খায়। কেউ কেউ হয়তো এই চক্র থেকে বের হয়ে যায়–আরো অনেক পড়াশোনা করে… সামনে আগায়… আবার নতুন নাস্তিকরা ওই চক্রের মধ্যে আইসা পড়ে। তাই বের হয়ে যাওয়া পুরাতন নাস্তিকদের চোখের সামনে যখন নতুন নাস্তিকদের এই কাজকর্ম চোখে পড়ে, তখন কেউ কেউ হয়তো বিরক্ত হয় এই ভেবে যে–পোলাপানরা খালি এই নিয়াই পইড়া আছে।
পুরান আইডি হারাইয়া গেলে নতুন আইডি বাঁচাইতে নিজে ওই পথ থিকা কিছুটা সইরা আসছিলাম। তখন আবেগের বসে কিছু কিছু পোস্টও দিছি। যেমন ধরেন–শুধু নাস্তিক হইয়া লাভ কী! কুত্তার বাচ্চা শুয়ারের বাচ্চারাও তো নাস্তিক হয়। এরাও তো ভগবানেশ্বরাল্লাতে বিশ্বাস করে না। ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন যখন আবেগ আর যুক্তিরে আলাদা রাখার চিন্তা করি, তখন বুঝতে পারি ওসব কথা বলা ভুল ছিল। কেউ সারাজীবন নাস্তিক থাকতে পারবে না কেন? থাকলে আমার কী সমস্যা? সবাইরে আমার মতো হইতে হবে কেন! যে যেমনে ভালো থাকে, থাকুক… কারো ক্ষতি না করলেই হয়…
আবার ধরেন কেউ যদি নাস্তিক হইয়া লীগের দালালি করে–করুক, আমি বাধা দেয়ার কে? হ, আবেগের বশে অনেকরে হুদাই ট্যাগাই– কিন্তু যখন বলি, লেখার জবাব লেখা দিয়া দেন–তখন ভাবি, না ট্যাগাইয়া বরং লেখালেখি দিয়া পরিবর্তন হয়তো বেশি সম্ভব।
সেদিন বিশু স্যার একটা কথা বলছিলেন যে, পিনাকী স্যারদের সাথে লেখালেখিতে পাল্লা দেয়ার মতো তেমন কেউ নাই। এদেরকে হুদাই ট্যাগাইয়া লাভ নাই। বরং দিনকে দিন এদের ফ্যান-ফলোয়ার বাড়তেছে… নাস্তিকদের কাজটা এমনিতেই কঠিন… প্রতিকূল পরিবেশ, সংখ্যায় কম… পিনাকী স্যারেদের পক্ষে লোকজন বেশি থাকবে, সেইটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ওদেরকে সরাইয়া আনার মতো আরো কঠিন কাজটা নাস্তিকরা কি করতেছে? আবার ধরেন কেউ নাস্তিক হইয়াও পলিটিক্যালি লীগার–এই নিয়া বামেরা আক্ষেপ করে… কিন্তু ওরা কেন সাম্যবাদী হইতেছে না, ওদের উপর কেন প্রভাব ফেলতে পারতেছে না পুরাতন বামেরা?
এই কারণেই বলি–কেউ যখন আস্তিক হয়, তখন তারে দোষ দেয়া যায় না, কারণ যে নাস্তিক, তার বোঝা উচিত যে একটা মানুষ কখন কীভাবে আস্তিক হয়–এবং কী কী কারণে আস্তিকীয় অবস্থায় জীবন পার করে। আবার হুট কইরাই কেউ সাম্যবাদী হইয়া যায় না। এর আগে পলিটিক্যালি এদের নানান ধারা থাকে। কেন থাকে–সেটাও যারা সাম্যবাদী হইয়া গেছেন, তাদের বোঝা উচিত। আস্তিক থিকা নাস্তিক হওয়াটাই যেখানে এতো কঠিন, সেখানে নাস্তিক থিকা আরো সামনের পথগুলা তো আরো কঠিন…
আমরা প্রায়ই শুনি–নাস্তিকতা হলো ‘মানুষ’ হওয়ার প্রথম ধাপ। কিন্তু অবশ্যই এর শেষ ধাপ আমরা জানি না। এই পথের কোনো শেষ নাই… কিন্তু যারা একটু একটু করে সামনে আগাইছেন, তারা জানেন পিছনের পথগুলা কেমন ছিল। কেউ হুট কইরা ‘এলিট’ হইয়া যান নাই। পেছনের কথা ভুইলা গেলে নিজের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।
এদিকে নাস্তিক মহলে গ্রুপ নিয়া নতুন ইস্যুর সৃষ্টি হইছে। আসিফ স্যার মেসেজ দিয়া বললেন, আরিফ এথিস্ট বাঙলাদেশ গ্রুপ হাইজ্যাক করছে। কিছু লেখেন। অনেক স্মৃতির গ্রুপ।
আমার নিজের অবশ্য এই গ্রুপ নিয়া সেরকম কোনো স্মৃতি মনে পড়ে না। একটা ‘এলিট এলিট ভাব’ আর উচ্চমার্গীয় সুশীল সুশীল আলোচনা–বুঝতাম এনারা অনেক দূর পর্যন্ত আগাইয়া গেছেন, আর আমি এখনো জ্ঞানহীন নাস্তিকতার লেভেলেই পইড়া আছি। তাই প্রথম আইডিতে যুক্ত থাকলেও নড়াচড়া বলতে গেলে তেমন একটা ছিল না…
যাই হোক, আসিফ স্যারকে কইলাম, আরিফ স্যার পোস্ট দিছেন এই নিয়া? উনার বক্তব্য শুনতে চাই আগে।
এখন পর্যন্ত আরিফ স্যারের কোনো পোস্ট চোখে পড়ে নাই। তবে একটা মাঝারি সাইজের কমেন্ট চোখে পড়েছিল। তাতে মনে হইলো, তিনি ব্যাপারটা আরো জটিল বা ঘোলাতে কইরা ফেলাইছেন। জানি না শেষ পর্যন্ত উনার জল ঘোলা কইরা তারপর পানি খাওয়ার ইচ্ছা কি না। ওদিকে অন্যরাও মনে হয় গ্রুপ ফিরা পাওয়ার আশা ছাইড়া দিছেন–নতুন গ্রুপ দেখছিলাম মনে হয়। ব্যাপারটা হইলো–দুনিয়ায় কোনো কিছু বা কারো জন্য কিছু থাইমা থাকে না… আর জানেনই তো–আল্লায় যা করেন ভালোর জন্যই করেন। সবাইকে হ্যাপি জুম্মাবারের হ্যাপি হ্যাপি শুভেচ্ছা।
শহীদুজ্জামান সরকার
আল্লা যা করেন ভালোই করেন।
তাহলে এই সব নিয়া নতুন করে বলার কি দরকার?