শোনো, ষোলো আনা গানটা তো শুনছো। ওই যে নৌকাবিলাসে… কৃষ্ণ কইতেছে সে ষোলো আনা ছাড়া পার করে না… কৃষ্ণ শুধু রাধার কাছেই যাইত না, সুযোগ পাইলে অন্যান্য গোপীদের কাছেও যাইত। আবার রাধার কাছে ফিরা আসত। এই যে রাধার কাছে ফিরা আসত, সেজন্য অন্যান্য গোপীরা মাইন্ড খাইত না… কৃষ্ণ অন্যদের কাছে গেলে রাধা যদিও একটু অভিমান করত–এইটা হইলো প্রেমের মজা–কৃষ্ণ ভালোবাইসা সেই অভিমান পানি কইরা দিত। পুরা বিষয়টা হইলো–কৃষ্ণ যখনই যার কাছে যাইত, তখনই তারে নিজেরে উজার কইরা দিত–একেবারে ষোলো আনা… কোনো গোপীরে ৫ মিনিটও সময় দিত, ওই ৫ মিনিটে কৃষ্ণ দুনিয়াদারী সব ভুইলা যাইত…গোপীরাও তাই। ফলে ওই সময়টুকুতে একে অন্যরে পরিপূর্ণ ভাবে পাইত। তারপর সুখী মনে সংসারের অন্য কাজে ব্যস্ত হইয়া যাইত, কিন্তু মনে অপূর্ণতা থাকত না। এই কারণে কৃষ্ণও রাধার কাছ থিকা ষোলো আনা আশা করত… সেইটা না পাইলে সে ‘পার’ করত না…
এই ষোলো আনা নিয়া আরো একটা রূপক কাহিনী আছে–গোপীরা গোসল করতে নামলে কৃষ্ণ সবার কাপড় চুরি কইরা গাছের উপর লটকাইয়া রাখছিল। গোপীরা এমনিতে কাপড় চাইলে কৃষ্ণ দিতে রাজি হইল না। তারা পানি থিকা উইঠা গাছের তলায় আসল, কিন্তু তখন তারা এক হাতে বুক আরেক হাতে উরুসন্ধি ঢাইকা রাখছিল। কৃষ্ণ তখনও কাপড় দেয় নাই। তখন তারা এক হাত তুলল… তখনও দেয় নাই… তারপর লাজ-লজ্জা সব কিছু ভুইলা যখন দুই হাত তুইলা কইল কাপড় দিতে, তখন কাপড় ফেরত দিছিল… বুঝতে পারছো ব্যাপারটা?
তো এই যে আমি তোমার ঘর করি, যতক্ষণ সংসারের বা তোমার কোনো কাজ করি, সেইটা মন দিয়াই করি। আবার যখন তোমার কাছে বা প্রেমিকদের কাছে যাই, তখন দুনিয়াদারি ভুইলা যাই–যখন যার কাছে যাই, ৫ মিনিটের জন্য হলেও, তখন শুধু তারেই ভালোবাসি… মনে তখন আর কেউ থাকে না। এর ফলে আমার কখনো মনে হয় না যে তোমারে বা প্রেমিকদের কাউরে ঠকাইতেছি–মনে কোনো অনুশোচনা থাকে না, কোনো অতৃপ্তি বা অসুখ থাকে না… কিন্তু তুমি আমার কাছে আসলেও তোমার মন জুইড়া থাকে তোমার মনের মানুষ, তোমার কল্পনার প্রেমিকা…তারে কাছে না পাইয়া আমার মধ্যে তুমি হয়তো তোমার প্রেমিকারে খোঁজো–সেইটা তো বাস্তবে সম্ভব না… অবাস্তব আর বাস্তব আলাদা জিনিস… আর এই কারণেই তুমি আমার কাছে আইসা সুখ পাও না, ঘুম হয় না, তোমার মুখের চামড়া পুইড়া যাইতেছে…। শুধু আমার কাছে কেন, অন্য যে কারো কাছে গিয়াও সুখ পাবা না, যতক্ষণ না বাস্তববাদী হইতে পারবা… ফেসবুকে এমন ভাব ধরো যেন তুমি বিশাল বাস্তববাদী… আসলে তুমি সবসময় একটা কল্পনার জগতে বাস করো…
[বউয়ের কাছ থিকা পদাবলীর পাঠ নিচ্ছিলাম। আর নিতে না পাইরা পাশ ফিরা শুইয়া কইলাম–পিঠটা একটু চুলকাইয়া দাও, সকালে কাজ আছে… ঘুমাই…]
Leave a Reply