ধুরন্ধর, নারীবিদ্বেষী, মিথ্যুক, অসৎ, নিষ্ঠুর, খুনী, ক্ষমতালোভী–সব ধরনের বিশেষণ ছাপিয়ে যেটা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় সেটা হলো–পেডোফাইল–আমরা বাংলা বাগধারায় ‘নয়-ছয়’ করি, কিন্তু তিনি করেছিলেন ‘ছয়-নয়’। তবে সময়, সমাজ, পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট নিয়ে সমাজবিজ্ঞানের আলাপ দিলে উল্লেখিত পাত্র-পাত্রীদের বয়স-বিয়ে-বিছানায় তোলা–এগুলা আসলেই কোনো ব্যাপার না। ব্যাপার নয় অন্য বিশেষণগুলোও। বরং সমাজবিজ্ঞানের আলোকে তিনি অবশ্যই একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। এবং তেনাকে যদি এইসব বিশেষণে ভূষিত করতে না হতো, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে খুবই খুশি হতাম।
তাহলে উনার ব্যক্তিজীবনের ওইসব ব্যাপার বার বার এতো সামনে আসে কেন, এবং সেটা এই যুগের কেন বার বার আসে? আগের যুগেও তো উনাকে নিয়ে অনেকে অনেক আলোচনা করেছেন, কিন্তু কেউ তো এইসব ব্যাপার সামনে আনেন নাই–কেন আনেন নাই? কারণ সমস্যাটা হয়েছে ‘সুন্নত’ নিয়ে। আগের আমলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘সুন্নত’ পালনের বাড়াবাড়িটা ছিল না। বলতে গেলে তখনকার দিনে যারা ইয়ের সায়াতলে এসেছে, তারা তো মূল ধর্মগ্রন্থে কী আছে, সেটাই জানত না। তারা কিছু লোকের মুখে শুনে বা তরবারির ভয়ে ধর্মান্তরিত হয়েছে। বাকি কিছুও তারা পড়ে দেখেনি। স্কলারদের কথাই চোখ বুজে মেনে নিয়েছে।
তারপর ধীরে ধীরে অনুবাদ হয়েছে, অনেকে জেনেছে। স্কলাররা সুন্নত পালনের নামে যেটুকু করলে নিজেদের সুবিধা হয়–যেমন একাধিক বিয়ে, বিবিদের লোকচক্ষুর আড়ালে রাখা, সেটুকু পালন করা শুরু করেছে। পরে অন্যরাও জানতে পারছে–তখন তারাও সুযোগ-সুবিধামতো সুবিধাগুলো লুফে নিয়েছে। এখন যার সামর্থ নাই, সে-ও মনে মনে ওসব কামনা করে।
স্বাভাবিক ভাবেই কিছু লোক ওগুলার বিরোধিতা করা শুরু করেছিল, করছে। উদাহরণ হিসাবে আবুল মনসুর আহমদের ‘হুযুর কেবলা’, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘লালসালু’, ইত্যাদি ইত্যাদি উল্লেখ করা যেতে পারে। তখন স্কলাররা একটু রেখেঢেকে এসব করত, তাই সমালোচনাও হতো একটু রেখেঢেকে। এখন স্কলাররা খুল্লামখুল্লা, ওয়াজেও শোনা যায় প্রকাশ্যে… উম্মতরাও কোনো অংশে কম যায় না, নাস্তিকরাও আর রাখঢাক করে না। আবার এনারা অন্য ধর্ম নিয়েও বলেন, তাই অন্য ধর্মের লোকেরাও এদেরকে নিয়ে বলা শুরু করছেন…
মোট কথা, সমস্যাটা তেনারে নিয়া না, সমস্যা তেনার উম্মতদের নিয়া, তেনার সুন্নত নিয়া… যেমন, খুব বেশি লোকে হয়তো একাধিক বিবি নিয়ে বা ৬/৯ বছরের বাচ্চা বিবি নিয়ে ঘোরাঘুরি করেন না, তবে বাকিরা সেটা না করলেও এসব ব্যাপারে তাদের সম্মতি বা সুপ্ত বাসনা থাকে। যদিও এসব নিয়ে তর্কের সময়ে তারা তখনকার দিনের সময়, সমাজ, পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে বলেন, কিন্তু বর্তমান সময়, সমাজ, পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় ‘সুন্নতের’ প্রায় সবগুলো বিষয়ই বেমানান এবং বেআইন–এটা তারা মানতে রাজি নন। ।
তেনারা তখনকার দিনের নিয়মগুলারে শুধু এখনকার দিনের নয়, সর্বকালের সর্বমানুষের বেলায় প্রযোজ্য বলে মনে করেন। তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া যায় যে, ইসলাম সর্বকালের সর্বমানুষের বেলায় প্রযোজ্য হলেও হতে পারে–এই ইসলাম জিনিসটা কী?–সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস–এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু সুন্নত নামক পুরাতন রীতিনীতি-আচার-আচরণ-ব্যবহারগুলা কীভাবে এই উন্নত যুগে প্রয়োগ করা সম্ভব? টিস্যু থাকতে ঢিলা-কুলুখ, টুথব্রাশ থাকতে মেসওয়াক–এগুলো কোনো মুমিনবান্দার পক্ষেও কি পালন করা সম্ভব, বা কেউ যদি করেও তাহলে সেটা পাগলামি বলে মনে হবে না?
আমার কথা হলো–আপনি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী মানুষ, কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আর তেনাকে এক করে ফেলছেন কেন? বা কখনো কখনো তেনাকে তো সৃষ্টিকর্তার চেয়েও বড় বলে মনে করেন, কেন করেন এগুলা?–এটা শির্ক হবে না? তিনি একটা ‘ইয়াহু মেসেঞ্জার’ মাত্র যা এই যুগে আর চলে না–সেটা এখনো ইনস্টল করে বসে থাকলে হবে? তর্ক-আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত সৃষ্টিকর্তা আছেন না কি নেই। যত ইচ্ছা সৃষ্টিকর্তার চরণে নিজের বিচার-বুদ্ধি-বিবেচনা ‘আত্মসমর্পণ’ করেন–কেউ বাধা দিতে যাবে না। ইসলাম মানে তো তাই-ই, তাই না? যত ইচ্ছা ইসলাম পালন করেন, কোনো ব্যাপার না। কিন্তু সুন্নত পালনের নামে যদি তখনকার দিনের রীতিনীতি পালন করতে শুরু করেন, অন্যদেরকেও জোরাজুরি করে, তাহলে সেটা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে হাস্যকর হলে লোকে হাসবে, বেআইনী বা অপরাধ হলে আইন যদি কিছু না করে তাহলে গ্যারান্টি দিয়ে বলছি–এই যে অনলাইনে-অফলাইনে যা হচ্ছে–তেনার ফুলের মতো চরিত্র বিশ্লেষণ–এমনটাই চলতে থাকবে। হ্যাভ সাম কমনসেন্স প্লিজ…
Leave a Reply