পাল্লার নির্দিষ্ট কোনো ‘ফর্ম’ নেই। একেক লেখা একেক রকম। মাঝে মাঝে পুরানো পোস্ট দেখলে নিজেরই বিশ্বাস হতে চায় না সেগুলা পাল্লার লেখা। তখন অনেকের মতো আমারও মনে হয়–এইটা একটা ‘মাল্টিনিক’…
২) অনলাইনে আজাইরা ক্যাচাল করি, খোঁচাখুচি করি, তর্ক করি, কোনো পোস্টের সাথে একমত হলেও শুধু কথা বাড়ানোর জন্য বিপক্ষ অবস্থান নিয়ে মন্তব্য করি… কিন্তু ‘তর্কে জিততে হবে’–এমন চিন্তা মাথায় এলে লজ্জা পাই…
৩) পাল্লাপেজে অনেকদিন পরে সুমিত রায়ের সাথে কিছু কথা হলো। পোস্টের একটা অংশে ‘ইটের বদলে পাটকেল’, ‘যেমন কুকুর তেমনি মুগুর’ টাইপের কথা ছিল। সুমিতের সেখানে আপত্তি। গান্ধীবাদের মতো কথাবার্তা–চোখের বদলে চোখ নিতে শুরু করলে একদিন দুনিয়ার সবাই অন্ধ হয়ে যাবে। আচ্ছা, যে ধর্মের মূলকথাটাই হলো ‘রক্তের বদলে রক্ত’, সেই ধর্ম নিয়া গান্ধী কি কোনো আপত্তি জানাইছিল?
৪) এই সুমিতের সাথে আলাপ করতে গেলেই নিজের উপরেও গান্ধীবাদ ভর করে। গান্ধীবাদী কথাবার্তা যে নিজেও মাঝে মধ্যে বলি না–তাও নয়। কিন্তু পারিপার্শ্বিক ঘটনায় ত্যক্তবিরক্ত হইয়া গেলে এই গান্ধীবাদ একটি অভিশাপের মতো মনে হয়।
৫) শুধু সমস্যার কথা বলি। অনেকে ‘সমাধান’ চান। এই সমাধানগুলো সুন্দর দিতে পারে সুমিত রায়। যেমন, “প্রকৃত গণতন্ত্র মানুষকে আধুনিক ও সভ্য করে, মানবতাবাদ বাড়ায়। আধুনিকতার জন্যই সংগ্রাম করে যেতে হবে।” কিন্তু আধুনিকতার জন্য সংগ্রাম করতে চাইলে আগে তো কল্লা বাঁচাইতে হবে। এই সমস্যারও সমাধান আছে– “আধুনিকতা তৈরির মাধ্যমেই এদের কল্লা নেবার প্রবণতা দূর হবে। দুটো প্রোসেস যদি একসাথে চলে তাহলে বলতে পারি, কতিপয় নাস্তিকের কল্লার বিনিময়েই চেঞ্জটা আসবে, আর সেটা ধরে নিয়েই সংগ্রাম করতে হবে।” এই কথার বাস্তব প্রমাণ আছে–এক অভিজিৎ রায় কল্লা হারাইলে অনেকেই “আমিই অভিজিৎ” হয়ে উঠেছিল। দেশে নাস্তিকের সংখ্যা বাড়ছে।
৬) এই বিষয়ে অভিজিৎ রায়ের নিজেরও একটা পোস্ট ছিল এরকম–“যারা ভাবেন বিনা রক্তে বিজয় অর্জিত হয়ে যাবে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। ধর্মান্ধতা, মৌলবাদের মত জিনিস নিয়ে যখন আমরা লেখা শুরু করেছি, জেনেছি জীবন হাতে নিয়েই লেখালেখি করছি।”
৭) অর্থাৎ লেখালেখির পথটা যাদের কাছে “সংগ্রাম”, তাদেরকে আশেপাশে কী হলো না হলো, কে মরল, কে বাঁচল–এতো কিছু নিয়ে বিচলিত হয়ে ফোকাস নষ্ট করা চলবে না। শুধু ভালো ভালো কথা লিখে যেতে হবে যা পড়ে অন্যরা জ্ঞান অর্জন করবে, আলোর পথে আসবে, আধুনিক হবে।
৮) জ্ঞান বিষয়ে সুমিত রায়ের একটা লাইন মাথায় গেঁথে রাখতে পারেন–“ধর্মীয় জ্ঞান ছাড়া ধর্মের সমালোচনা হয়না, আর সেটা ছাড়া আধুনিকতা, সেক্যুলারিজমও শেখা যায়না।” মুসলমান কেউ আইসা যদি জিগায় কী পড়বে, কী দিয়া শুরু করবে, আমি সোজা কোরান-হাদিসের কথা বলি। হিন্দুরা জিগাইলে কই আগে বেদ-পুরান পইড়া নিতে। এখানে আবার উল্লেখ্য, “মুসলিমরা ইসলাম নিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞানী ও সচেতন, এটার জন্য তাদের মধ্যে কনজারভেটিজম বেড়েছে, গোড়ামি বেড়েছে, অন্য কমিউনিটির সাথে ঠোকাঠুকি বেড়েছে, তাতে সহাবস্থান কঠিন হয়েছে।” এটাকে হিতে বিপরীত বলা যেতে পারে।
৯) আবার সুমিতের কাছে চীন-মিয়ানমারদের কাজও ‘হিতে বিপরীত’। “প্রথমত, তারা আধুনিকতা বিরোধী, স্বৈরাচারী; দ্বিতীয়ত, তাদের কারণে মুসলিমরা কেমন গোড়া ও বিদ্বেষী হয়েছে তা রোহিঙ্গা ও উইঘুর রিফিউজিদের আচরণে বোঝা যায়। সেই সব দেশে এটা স্থায়ী সমাধান আনবে না, কারণ জোড় করে ন্যাশনাল এসিমিলেশন আনা হচ্ছে আদর্শ দিয়ে, কিন্তু একটু স্বাধীনতা পেলেই এগুলো আর কাজ করে না, আর চীন ও মিয়ানমারেও একদিন গণবিপ্লব সফল হবে। সেই সাথে আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশসমূহে এটা এপ্লাই করা সম্ভব ও কার্যকরী না, হিতে বিপরীত হবে, গোড়ামি ও বিদ্বেষ বাড়বে।”
১০) তাহলে করণীয় কী? “মুসলমানদের মধ্যে ট্রেন্ডটা (কল্লা ফেলানো) আছে বলেই তাদেরকে অধিকতর প্রিমিটিভ ধরেই এগোতে হবে। সব ধর্ম এক না, তাই সব ধর্মের ধার্মিকও এক না, একেক কমিউনিটির ধার্মিকের ট্রিটমেন্টও তাই একেক রকম হবে।” অর্থাৎ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মুসলমানদেরকেই সবচেয়ে অসভ্য, অশিক্ষিত, বর্বর, নিকৃষ্ট, মহাবদ, মহাউন্মাদ, মেন্টাল, ইত্যাদি ইত্যাদি ধরে নিতে হবে। [এখানে ‘সব ধর্ম এক না’ কথাটাও নোট করে রাখতে হবে। কেননা, ধর্মকারীস্টাইলে আমরা সব ধর্মকেই সমান ‘গু’ মনে করি।]
১১) ওটা একবার মাথায় ঢুকিয়ে নিলেই মুসলমানদের প্রতি আপনার ব্যবহার সহানুভূতিশীল হবে, বাড়তি এটেশনশন দিতে হবে, পিঠ হাত বুলিয়ে হাতে কলমে শেখাতে হবে, আপনার গালে চড় মারলে অন্য গালটি এগিয়ে দিতে হবে, চাপাতি নিয়ে আসলে কল্লা বাড়িয়ে দিতে হবে–জ্ঞানীগুণীরা এভাবেই শিক্ষা দেন।
১২) এই যে আপনারা গান্ধী, চমস্কি, অরুন্ধতী, অমর্ত্য, রাজ্জাক, ছফা, ফরহাদ, সলিমুল্লাহ, আসিফ নজরুল, রাইসু, জোনায়েদ, ইত্যাদি ইত্যাদি সহ যত বামাতি, আমাতি, চিঙ্কু বাম, সুশীল, টকশোজীবী, বুদ্ধিবেশ্যা, জ্ঞানপাপী দেখেন–এনারা সবাই কমবেশি জ্ঞানী এবং যথেষ্ট বুদ্ধি রাখেন এবং এ কারণেই এনারা মূলত মুসলমানদেরকে ‘অধিকতর প্রিমিটিভ; হিসাবেই ‘ট্রিট’ করেন। একারণে অনেকেই এনাদেরকে ভুল বোঝেন, মনে করেন এনারা ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষ নিয়ে বাকিদের সাথে লড়াই করেন। আসলে তা নয়। এনারা আসলে মুসলমানদের মানুষ হিসাবেই গণ্য করেন না। সে কারণে মুসলমানরা অমানুষের মতো ব্যবহার করলেও পিতৃস্নেহে-মাতৃস্নেহে আগলে-আগলে রাখেন, মানসিক প্রতিবন্দ্বী মনে করে মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন।
Leave a Reply