অনেকেই মনে করেন ‘রাজাকার’ সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছে ১৯৭১। ভুল।
‘১৯৪৬ সালে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের তেলেঙ্গানা অঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয় যা তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ নামে খ্যাত। যদিও বিদ্রোহটি ছিল অসাম্প্রদায়িক কিন্তু কৃষকগণ ছিল অধিকাংশই হিন্দু এবং শাসক শ্রেণী মূলত মুসলিম। জনৈক কাশিম রিজভি বিদ্রোহের হাত থেকে মুসলিম অভিজাতদের রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমীনের সংসৃষ্ট রাজাকার নামে এক সৈন্যবাহিনী গঠন করেন। কিন্তু অচিরেই রাজাকার বাহিনী তেলেঙ্গানার গ্রামে গ্রামে গ্রামবাসীদের ভয় দেখাতে থাকে।…’
এই হলো ‘রাজাকার’ সৃষ্টির মূল কাহিনী। উইকি (https://goo.gl/vtkXxf) থেকে একটু কপিপেস্ট করলাম। বিস্তারিত ইতিহাস জানতে চাইতে নিজেরা খুঁজে দেখতে পারেন। আর হ্যাঁ, এর সাথে যোগ করতে পারেন ১৯৪৬ সালে নোয়াখালিতে হিন্দুহত্যাযজ্ঞর কাহিনী (https://goo.gl/RifbKk)। ওই সময়ে সোহরাওয়ার্দির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আর তখন তার ডানহাত ছিল শেখ মুজিব। সোহরাওয়ার্দি যদি ‘বড় রাজাকার’ হয়, তো শেখ মুজিব তখন ‘ছোটো রাজাকার’।
৭১-এ যখন আবার নতুন করে রাজাকার বাহিনী গড়ে ওঠে, সেটাও মূলত হিন্দুনিধনের জন্যই। ভুলে গেলে চলবে না, ওই সময়ে যারা রাজাকার হয়েছিল, তারা বাঙালি মুসলমানদেরকেও ‘আধা-হিন্দু’ মনে করত। ৭১-এ বেছে বেছে হিন্দু কোতল হতে শুরু করলে হিন্দুরা কাহিনী বুঝতে পারে এবং নগদে ভারতে পালায়। তারপর কোপটা নেয়ে আসে ওই আধা-হিন্দুদের ওপর।
দুইটা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, তিনটা জায়গায় আমরা রাজাকারদের তাণ্ডব দেখি। তিন জায়গাতেই রাজাকারবাহিনী সৃষ্টির উদ্দেশ্য হিন্দুনিধন ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু হিন্দুনিধন কর্মসূচী শুধু ১৯৪৬ এবং ১৯৭১-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ১৯৪৬শে শুরু হয়ে সেটা ভারতভাগের পরে হয়েছে, পাকিস্তানভাগের পরে হয়েছে… এখনও চলছে।
হিন্দুদের পুড়িয়ে মারা, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া, জায়গাজমি দখল করা, হিন্দুমেয়েদের ধর্ষণ করা, বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা, ভারতে বিতাড়িত হতে বাধ্য করা–এখনও কারা ওসব করে যাচ্ছে?–প্রায় প্রতিটা মুসলমান। এখানে আলাদা করে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামাত-শিবির বলে কোনো কথা নেই। মুসলমানরা সব দলেই আছে। আর প্রায় প্রতিটা মুসলমানই হিন্দুদের বেলায় চরম সাম্প্রদায়িক। রাজাকারদের কর্মকাণ্ড আর এখনকার ওসব আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামাত-শিবির করা মুসলমানদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সেই অর্থে সাম্প্রদায়িক মুসলমান মাত্রেই রাজাকার।
গুটিকয়েক লোকের ৭১-এর কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে তাদেরকে রাজাকার বলা, এবং এই ‘৭১-এর রাজাকার’ ইস্যুটাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা–শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া আর কিছু নয়। যেসব শিক্ষিত শয়তান ওটা জেনেও এতদিন ধরে এই কাজ করে যাচ্ছে, এই নির্বাচন উপলক্ষে একে একে সবার মুখোশ খসে পড়ছে। পারলে প্রতিটা সাম্প্রদায়িক মুসলমান এবং তাদের সমর্থক ও দোসরদের বলে দেন–‘মুখোশের আড়ালে তুই নিজেও একটা রাজাকার!’
২)
টু হুম ইট মে কনসার্ন–
===============
আগে জানেন–রাজাকার কী কেন কবে কারা কীভাবে, তারপর রবীন্দ্রনাথের ‘অন্যায় যে আর অন্যায় যে সহে’ সূত্রটা প্রয়োগ করেন, তারপর দেখেন আপনি নিজেও রাজাকারদের অন্যায় সহ্যকারী কি না, রাজাকারদের সমর্থক কি না, তারপর ভেবে দেখেন আপনি নিজেও রাজাকারদের সমান অপরাধী কি না… অকা?
Leave a Reply