বগর বগর-এর ব্লগীয় ভার্সন ব্লগর ব্লগর। নিউইয়র্কের লাইফ নিয়ে কিছু ফাও প্যাচাল।
একাউন্ট্যান্টের কাছে গেছিলাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করার জন্য। এক ফাঁকে জিগাইলাম–সিটিজেনসিপের এপ্লিকেশনটাও ফিলআপ কইরা দিবেন নাকি… হিসাব কইরা কইলেন–আমেরিকায় আইছেন এখনো তো পাঁচ বছর হয় নাই…দেশে থাকতে কোনোদিন জুতা পরা হয় নাই। আমেরিকা আসার বোরখাওয়ালী এলিফ্যান্ট রোড নিয়া গেছিল–জুতা জিন্স জ্যাকেট…আরো কিসব টুকটাক কিনে দিয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো–দেশি ওসব জিনিসে আমেরিকার শীত মানে না। তবুও সেবার খুব একটা শীত পড়ছিল না বলে কোনোরকম চলে গিয়েছিল। তবে দেখলাম জুতাজোড়া কেমন কুঁচকে গেছিল। আর তলা ফেটে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেই পায়ের তলা ভিজে জেত।
আসার খরচ, এসেই নতুন সংসার পাতা–সব মিলিয়ে হাত একেবারে খালি হয়ে গিয়েছিল। পরের সামারে অনেকরে দেখলাম বোতল কুড়াইতে। পার্টটাইম হিসাবে ওটা শুরু করে দিলাম। কয়েকশ টাকা জমলে ভাবছিলাম শীতের জামাকাপড় কিনব।
এর মধ্যে একদিন বোরখাওয়ালী বলে তার কয়েকশ টাকা লাগবে। বললাম কী করবা। বলল–ডিভোর্স ফাইল করতে লাগবে।
২) পরেরবার–একটা প্রয়োজনীয় জিনিস ভেঙে গেছিল। এখানে দিন আনি দিন খাই টাইপের কামলা হলে টাকা জমানো খুব কঠিন। তবুও এটা সেটা খরচ কমিয়ে কিছু টাকা জমাতে হলো। এর মধ্যে দেশ থেকে এক দোস্ত ফোন দিছে। তার এক মেয়ের ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছা। কিন্তু ইন্টারের রেজাল্ট খুব একটা ভালো হয় নাই বলে সরকারিতে চান্স পায় নাই।
বুঝলাম যে তাহলে হয়তো প্রাইভেটে পড়বে। এই দোস্ত চাইলে তার জন্য জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারতাম। মনে মনে হিসাব করলাম যে প্রাইভেটে পড়তে ২৫/৩০ লাখ তো লাগবেই। তবু ভয়ে ভয়ে জিগাইলাম কত লাগবে। সংখ্যাটা বলল শুধু। যা ভাবছিলাম তার মধ্যেই। মনে মনে ভাবছি–একবারে তো আর অত লাগবে না, কয়েকমাস পর পর অল্প অল্প করে লাগবে–ব্যাপার না, ম্যানেজ করে ফেলব। পরে বলল–হাজার।
নিজের কথা ভাবলাম–টাকাটুকা না থাকলে মাঝে মাঝে মনটা কত ছোটো হয়ে যায়! যা হোক, হাতে যা জমছিল, পাঠাইয়া দিলাম। ওর মেয়ে পরেরবার আবার মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা দেবে, তাই একটা স্পেশাল কোচিং করবে–বা এরকম কিছু একটা বলছিল–টাকাটা সেজন্যই।
৩) গতবার নিউইয়র্কে বেশ শীত পড়েছিল, সেই সাথে স্নোও পড়েছিল অনেক। বাসা ভাড়ার খরচ কমাতে সিটি থেকে অনেকটা দূরে আসছি। বাসাটা রেললাইনের কাছে হলেও রেলস্টেশন কিছুটা দূরে। তারপর আবার ওই কাছের রেলস্টেশন মেরামতের জন্য পুরা শীতকালটাই বন্ধ ছিল। ওটা পার হয়ে পরেরটায় যেতে হতো। জামাকাপড়ের চেয়েও বেশি জরুরী ছিল ভালো একজোড়া ওয়াটারপ্রুফ জুতা।
এই বুড়াকালে একেবারে নতুন জিনিস পরতে কেমন যেন আনইজি আনইজি লাগে। সেইসাথে অত টাকা খরচ করার মত অবস্থাও নাই। গেলাম নিউইয়র্কের এক ‘বঙ্গবাজারে’–পুরানো জিনিসপত্র। খুঁজছি জুতা, কিন্তু পেয়ে গেলাম সাইজের একটা লেদার জ্যাকেট। দামও খুব কম। সাথে সাথে বগলদাবা করে ফেললাম।
তারপর আবার জুতা খুঁজছি। পাওয়া গেলো, কিন্তু এক সাইজ বড়। ভাবলাম শীতকাল–মোটা মুজা পরে নিলেই ফিট হয়ে যাবে। কিনে নিলাম। তারপর ভাবলাম–পরনের জিন্সটায় কুচকির কাছে দুইদিকে ছোট দুইটা ফুটা আছে, আর গোড়ালির কাছেও ছেঁড়া। সাইজের জিন্স একেবারেই পাওয়া গেলো না। ভাবলাম ওই দুইটা জানালা দিয়ে কত আর শীত লাগবে। ছেঁড়াটা দিয়েই কোনমতে এই শীত পার করে দিতে হবে।
(রাতে ঘুমানোর সময় আরো যেন কী কী মাথায় ঘুরছিল। মনে করতে চেষ্টা করছি (ওহ লেদার জ্যাকেট নিয়ে…)। বউ মনে করাইয়া দিল কামলা দিতে যাওয়ার টাইম হইয়া গেছে।)
ব্লগর ব্লগর : পার্ট ২
৪) দোকানে চলে আসছি। সবদিন দোকান খুলতে হয় না, সেদিন একটু লেট করে আসা যায়। আজ সেরকম। তবে এরকম দিনে ক্লোজিং পর্যন্ত থাকতে হয়।
৫) …বউ মনে করাইয়া দিল কামলা দিতে যাওয়ার টাইম হইয়া গেছে।… বউরে কইলাম খাবারটা একটু রেডি কইরা দিলে আমি ততক্ষণে রেডি হইয়া নিতে পারি। কইল–সকালে উইঠাই ফেসবুক নিয়া বইছ… ফেসবুকে লেইখা অন্যদের জ্ঞান না দিয়া আগে নিজে ভালো হও (বউয়ের চোখে ভালো ‘স্বামী’ দুনিয়ায় বিরল)… খাবার বানাইয়া নাও। ভাত রান্না করা ছিল, দুইটা ডিম ভাইজা নিয়া চলে আসছি।
৬) পুরানো জিনিসের দোকানটাতে এত বেশি লেদারের জ্যাকেট দেখে তখনই বোঝা উচিত ছিল–অনেকেই তাদের পুরানো লেদারের জ্যাকেট ফেলে দিচ্ছে। আর এ কারণেই এবার নিউইয়র্কে লেদারের জ্যাকেট পরা লোকজন বলতে গেলে চোখেই পড়ছে না। আমারটা ফেলতে একটু মায়া লাগছে, অন্তত এই শীতটা এটা দিয়েই চালাতে হবে। সামারের মধ্যে কিছু টাকা জমিয়ে সামনের শীতের আগে অন্য একটা জ্যাকেট কিনতে হবে।
৭) সেদিন বাসায় আইসা বউরে কইলাম–আসো, একাউন্ট খুইলা দেই। বউ আমার সামনে নিজে নিজেই একাউন্ট খুলল। তার মানে ননটেকি হলেও অন্তত ফেসবুকের সাথে তার পরিচয় আছে। ‘প্রাউড অফ হার’ হব কি না–কথাটা মাথায় আসতেই মনে হইল এখন নিজের নামে একাউন্ট খুললেও আগে নিশ্চয়ই #ঘাস্ফুল্লতাপাতা টাইপের একাউন্ট তার ছিল। হয়তো ডিজেবল হয়ে গেছে, হয়তো হয় নাই। জিব্রাইল আইসা আয়াত নাজিল কইরা গেলো–ঘাস্ফুল্লতাপাতা টাইপের আইডি দেখামাত্র ব্লক দিতে হয়।
ব্লগর ব্লগর আপাতত এখানেই শেষ হলো।
Leave a Reply