লিখেছেন : নাসিমা আক্তার
দেশে চুরি-ডাকাতি, খুনখারাবি, ধর্ষণ, দূর্নীতি এবং নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। এই সকল অপরাধের পিছনে ইসলামের দায় থাকিলেও সবকিছুর জন্য আমরা ইসলামকে সরাসরি দায়ী করিনা। ইসলামি চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হইয়া, ইসলামি সাম্প্রদায়িক চেতনায়, ইসলাম বা ইসলামি অপরাধসমূহ রক্ষার জন্য এবং ইসলাম, ইসলামি শাসন বা ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের জন্য মুসলমানরা বাংলাদেশে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেসব অপরাধ করিতেছে তাহার জন্য আমরা ইসলামকে সরাসরি দায়ী করি। যাহারা বলেন, “ইহার জন্য ইসলাম দায়ী নহে,” তাহারাও ইসলামী অপরাধে অপরাধী।
মুসলমানরা (ইসলামী চেতনায় অথবা ইসলাম রক্ষার জন্য না হইলেও) চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি অন্যান্য যে সকল অপরাধ করে তাহার পিছনেও ইসলামের দায় আছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় অথবা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য যদি রাষ্ট্র বা সরকারের দায় থাকে, তাহা হইলে ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তিকে অপরাধ হইতে বিরত রাখিতে ব্যর্থতার জন্য মোহাম্মদ এবং তাহার প্রচারিত ইসলামের দায় এড়ানোর সুযোগ নাই।
এই কথা অন্যান্য ধর্ম এবং বিশ্বাসসমূহের জন্যেও প্রযোজ্য। এমনকি কেহ যদি নাস্তিক্যবাদে উদ্বুদ্ধ হইয়া অথবা নাস্তিক হওয়ার কারণে কোনো অপরাধ কর্ম করে তাহার জন্য নাস্তিক্যবাদও দায়মুক্ত হইতে পারে না। তবে মনে রাখিতে হইবে, নাস্তিক্যবাদ হইল মূলত মানবতাবাদ। মানবতাবাদ অন্যায় ও জুলুম করিতে মানুষকে প্রলুব্ধ করেনা।
সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড এবং জার্মানির মত দেশসমূহে মানবতাবাদ বিকশিত হওয়ায় সেই সকল দেশে দুর্নীতিসহ সবধরনের অপরাধ কমিয়াছে। কিছু কিছু দেশে অপরাধ প্রবণতা এতই কম যে সেখানে অপরাধী না পাওয়ায় জেলখানা বন্ধ করিয়া দিতে হইতেছে। যেসব দেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, কোরান-হাদিসের চর্চা এবং নামাজ পড়ুয়া যেখানে বেশি, সেইসব দেশে ইসলামি অপরাধসহ সবধরনের অপরাধ বেশি হয়। ইহার কারণ কি? কারণ হইল, ইসলাম একটা সামগ্রিক কুশিক্ষা এবং ভুল বিশ্বাস – যাহা হিংসা বাড়ায়, মানুষকে মানবিক হইতে বিরত করে এবং অপরাধ করিতে প্রলুব্ধ করে। ইসলাম সকল মানুষকে সমানচোখে দেখিতে শেখায়না। ইহুদি, নাসারা এবং মুশরিকদের প্রতি বিদ্বেষ করিতে শিক্ষা দেয়। মুশরিকদের হত্যা করিতে উদ্বুদ্ধ করে। মানবের প্রতি বিদ্বেষ করা আল্লাহর হুকুম বলিয়া বিশ্বাস করিতে শেখায়।
দ্বিতীয়ত, নারীদিগকে কমবুদ্ধির এবং পুরুষের অধিনস্ত হিসাবে ভাবিতে শেখায়। ইহার ফলে যৌন নির্যাতনসহ নারীদের বিরুদ্ধে সবধরনের অপরাধ মুসলমানরা বেশি করে। তাহারা শিশু বিবাহ নবীর সুন্নত বলিয়া মনে করে। নারী বা পুরুষ কেনাবেচা করা এবং দাসীদের ইচ্ছামত ভোগ করা জায়েজ বলিয়া মনে করে। যুদ্ধে পরাজিত নারী, পুরুষ এমনকি শিশুদের গনিমতের মাল বলিয়া মনে করে। এই রকম বিশ্বাস এবং শিক্ষা সমাজের জন্য অতীব ভয়াবহ।
সর্বোপরি ইসলাম মুসলমানদের মনোজগতে একটা ভুল বিশ্বাস ঢুকাইয়া দেয়। তাহা হইল আল্লাহর উপর বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে শয়তানের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। মুসলমানরা মনে করে তাহারা নিজেরা তাহাদের অপকর্মের জন্য দায়ী নহে। ইবলিশ নামক একজন দুষ্ট ফেরেস্তা বাহির হইতে আসিয়া তাহাদিগকে দিয়া অপরাধ কর্মসমূহ করায়। এই বিশ্বাস নিজস্ব চিন্তা ও কর্মের ব্যাপারে মুসলমানদের আত্মপ্রত্যয়ী হইতে দেয়না। নিজের কর্মের দায় নিতে শেখায়না। ইহাতে ব্যক্তিত্ববোধ বিকৃত হয়, মনোজগতে একধরণের তৃতীয় ব্যক্তিত্ব জন্মলাভ করে –যাহা মানুষকে অপরাধ প্রবণ করিয়া তোলে।
মৃত্যুর পরে দোজখে যাইতে হইবে, এই ভয়ে মানুষ অপরাধ করেনা – ইহা ভুল ধারণা। এই ধারণা সঠিক হইলে যে হারে নামাজির সংখ্যা বাড়িতেছে, সেই হারে দুর্নীতি এবং অপরাধ বাড়িতনা। মানুষ তাহাদের মানসম্মান, স্বাভাবিক কাণ্ডজ্ঞান, ভদ্রতাবোদ, মানবিকবোধ, কাউকে আঘাত করিলে পাল্টা আঘাতের ভয়, হেনস্তা হওয়া এবং আইন আদালতের মাধ্যমে শাস্তি পাওয়ার ভয়ের কারণে খুনখারাবিসহ কিছু অপরাধ হইতে বিরত থাকে। ইহাতে ধর্মের কোনো কৃতিত্ব নাই।
আমরা যদি ভুলভ্রান্তি বা অপরাধের জন্য ব্যক্তির শিক্ষাকে দায়ী করি, তাহা হইলে ইসলাম বিশ্বাসী মানুষের যেকোনো কৃতকর্মের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইসলামকে দায়ী করা মোটেই অমূলক নহে।
Leave a Reply