লিখেছেন : কবিতা রায়
হিন্দুদের প্রত্যেকটা ধর্মীয় কাজ ভন্ডামিতে পরিপূর্ণ। যেসব সরল লোকজন গাছতলায় পাথরের দেবতাকে পুজো দেয় তাদের মধ্যে তবু একটু আসল জিনিস আছে, বাকি যারা অতিরিক্ত পন্ডিত তাদের ভন্ডামিও তেমনই অতিরিক্ত।
মুসলিমদের ধর্মে এই ভন্ডামিটা খুব কম। তারা যেমন আল্লা-মহম্মদের নাম জপে তেমনই আল্লা যেটা করতে বলেছে বা মহম্মদ যেটা নিজের জীবনে করেছে সেটাই করে। হিন্দুদের ভন্ডামি এতটাই বেশি যে তারা হরেকৃষ্ণ-হরেরাম গেয়ে অহিংসা প্রচার করে। যে রাম বা কৃষ্ণ কোনোদিন অস্ত্র সঙ্গে না নিয়ে ঘর থেকে বেরোয়নি।
মহাভারতের কৃষ্ণ ছিল একেবারে এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট। যারাই কৃষ্ণের পিছনে লাগতে গেছে তাদের দুচারবার ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যখনই বোঝা গেছে যে ক্ষমা করে দিলে এর চরিত্র বদলানোর আশা নেই, তখনই একেবারে বুলডোজার চালিয়ে সাফ করে দেওয়াটাই কৃষ্ণের কাজ ছিল। সেই কাহিনী মহাভারতের পাতায় পাতায় লেখা আছে।
এই কৃষ্ণকে মানুষের মন থেকে মুছে দেবার জন্য মুসলিম সুলতানদের বেতনভোগী বুদ্ধিজীবি সাহিত্যিকরা কৃষ্ণলীলার মোটা মোটা বই রচণা করেছে। আর সেই বইগুলোর ধর্মীয় ব্যাক্ষা আরো মোটা মোটা হয়েছে। সেই কৃষ্ণলীলা পাড়ায় পাড়ায় কেত্তন করবার লোকের আজও কোনো অভাব নেই। কিন্তু মহাভারতের কৃষ্ণকে নিয়ে কেত্তন? একেবারেই নয়। নাহয় এটা ধরেই নেওয়া হল যে সুলতানি আমলের এই গল্পগুলোও শতভাগ সত্য, কিন্তু সেটাও তো কৃষ্ণের লীলার মাত্র অর্ধেক। বাকি অর্ধেকটা লীলা যে মহাভারতে ছড়িয়ে আছে সেটা বাদ দিয়ে কেন কেত্তনগুলো করা হয়?
আসলে ইস্কন বা ঐ ধরণের যেসব সংস্থা কৃষ্ণচেতনা প্রচার করে তারা গীতা পড়তে বলে, ভাগবত পড়তে বলে, কিন্তু মহাভারত পড়তে বলেনা। কৃষ্ণ সম্পর্কে তারা সবাইকে জ্ঞান দেয়, তবে কৃষ্ণের অর্ধেকটা বাদ দিয়ে। সোজা কথায় নিজেদের সুবিধার জন্য অর্ধেক সত্য গোপন করে। এই হল সততার প্রতীক ধর্মগুরুদের চরিত্র।
এই গুরুরা গীতা শোনাবে, যেখানে লেখা আছে কৃষ্ণের আসার উদ্দেশ্যই ছিল সাধুর পরিত্রাণ ও দুষ্কৃতির বিনাশ। কিন্তু সেই কাজটা কিভাবে করা হয়েছিল? শিশু কৃষ্ণ হামাগুড়ি দিয়া মাখন চুরি করিয়া খাইলেন, হয়ে গেল সাধুর পরিত্রাণ? বালক কৃষ্ণ গরু লইয়া মাঠে চরাইতে গেলেন, হয়ে গেল দুষ্কৃতির বিনাশ? কৃষ্ণ বংশী বাজাইয়া রাসলীলায় নাচিলেন, হয়ে গেল ধর্মসংস্থাপন? এভাবেই যদি হত তবে গীতার পাতাতেও লেখা থাকতঃ
হে অর্জুন, আসলেই যুদ্ধ খুব খারাপ কাজ। তুমি যে এটা বুঝতে পেরেছ তাতে আমি অতি প্রসন্ন হয়েছি। এবার তুমি অস্ত্র ত্যাগ করে হরেকৃষ্ণ জপতে জপতে গিয়ে তোমাদের হারানো রাজ্য অধিকার করো।
Leave a Reply