লিখেছেন : কবিতা রায়
গুরু সেজে বসা কিছু পাগল অথবা প্রতারকের কাছে গীতা খুবই কাজের জিনিস। এটা দিয়ে মানুষকে মুরগি বানানো যায়। যারা গীতা পড়ে দেখেনি তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুবই সহজ। যারা পড়েছে তাদেরও ঠকানো সহজ, শুধু ভুলভাল অর্থ করলেই চলে। কিন্তু যারা পুরো মহাভারত সহ গীতা পড়েছে তাদের মাথায় কাঁঠাল ভাঙা অনেক কঠিন। তবে সেরকম লোকের সংখ্যা কম।
গীতার মধ্যে এক জায়গায় কৃষ্ণ বলেছেন সব ধর্ম ত্যাগ করে শুধুমাত্র আমার অনুসরণ করো। এটাকেই গুরুরা খুব সহজে কাজে লাগায়। কিন্তু মহাভারত পুরোটা পড়লে দেখা যাবে এই বাণী আসার আগে তো বটেই, যুদ্ধ শেষ হবার পরেও কেউ সবকিছু ত্যাগ করে কৃষ্ণের অনুসরণ করেনি। এই আদেশটা যুদ্ধের ময়দানেই শুরু আর সেখানেই শেষ।
একেবারে ৭০ বছর বয়সে অর্জুনকে এরকম একটা আদেশ কেন দিতে হল? কারণ তার আগে যুদ্ধের যাবতীয় পরিকল্পনা হয়ে গেছে। দুইপক্ষের মিত্র রাজারা সৈন্য নিয়ে হাজির। দুইপক্ষের সৈন্য ময়দানে মুখোমুখি। ঠিক এই সময়ে অর্জুন বলছেন যুদ্ধ করবনা। তাহলে কী করা যাবে? দেখা গেল অর্জুনের কাছে কোনো বিকল্প পরিকল্পনাও নেই, অথচ তিনি যুদ্ধও করবেন না। তাহলে রাজ্য উদ্ধারের কী হবে? অন্যায়ের প্রতিকারের কী হবে? অর্জুন বলছেন এসব কিছুই আমার দরকার নেই। কৃষ্ণকেই ভেবে কোনো বিকল্প পথ বের করতে হবে। নাহলে আমি ভিক্ষা করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবো, তবু যুদ্ধ করবনা।
এই অবস্থায় কৃষ্ণ জবাব দিয়েছেনঃ হে অর্জুন, যুদ্ধের ময়দানে অষ্টযোগই বলো আর অন্য পথই বলো, কিছুই কাজে দেয়না। ওগুলো আশ্রমে কিম্বা তপোবনে ভাল চলে। যুদ্ধক্ষেত্রের ধর্ম একটাই, তা হল নেতার হুকুম অনুসরণ করা। তোমরা পাণ্ডবেরা আমাকেই নেতা নির্বাচন করেছ অতএব অন্যসব ধর্মের কথা ভুলে গিয়ে যতক্ষণ যুদ্ধের সমাপ্তি না হয় আমারই আদেশ অনুসরণ করতে হবে। আর আমার আদেশ হচ্ছে, নিজের পাওনা আদায় করে নাও। ভাল কথায় না দিলে অস্ত্র ধরো।
সেইসাথে কৃষ্ণ আরো বলেছেনঃ তোমার নিজের দরকার হলে তুমি যুদ্ধ করবে, আর দরকার নেই বলে করবেনা এটা স্বার্থপরের মতো চিন্তা। দরকারটা তোমার একার নয়, এর সাথে আরো বহুজনের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে। তাই তোমার নিজের কোনো প্রয়োজন না থাকলেও কাজটা তোমাকে করতে হবে। তাদের মধ্যে আমিও আছি, যুদ্ধটা আমারও দরকার, তুমি আমার দরকারে যুদ্ধ করবে।
কৃষ্ণকে কখন দরকার সেটাও গীতায় খুব পরিষ্কারভাবেই বলা আছে। যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি… যখন প্রচলিত ধর্মের বিধানে সাধুর পরিত্রাণ বা দুষ্কৃতির বিনাশ সম্ভব হয়না তখন তিনি আসেন। অর্থাৎ কৃষ্ণ জিনিসটা সকালে বাতাসা আর সন্ধ্যায় মালপোয়া খেয়ে কেত্তন করার বস্তু নয়। এটা এমার্জেন্সিতে কাজে লাগানোর জিনিস।তার সাথে রাজনীতি আর যুদ্ধ সরাসরি জড়িত। কিভাবে করতে হবে সেটা গীতায় লেখা নেই, মহাভারতে আছে।
Leave a Reply