লিখেছেন : কবিতা রায়
সেকুলারদের মূল উৎস: গুরুজীর আর এক ঐতিহাসিক কর্ম।
———————————
বাইনারি মেন্টালিটি।
বাইনারি সংখ্যামালায় কেবলমাত্র ১ এবং ০, এই দুটি উপাদান থাকে। কোনোকিছুর মান ০ হতে পারে অথবা ১ হতে পারে। যদি ০ না হয় তবে ১ হবে, যদি ১ না হয় তবে ০ হবে। এই দুইয়ের বাইরে অথবা মধ্যবর্তী কোনোকিছু হওয়া সম্ভব নয়। দুটিই একসাথে হওয়াটাও সম্ভব নয়।
বাইনারি মেন্টালিটি একটি ভয়াবহ মানষিক অবস্থা, যা সমস্তকিছুকে এই পদ্ধতিতে বিচার করতে এবং এইভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রেরণা দেয়। আমি ১ বাকিরা ০, আমার নেতাটি ১, বাকিরা ০, আমার দলটি ১, বাকিরা ০, আমার দেশটি ১, বাকি দেশ ০, এই করতে করতে অবশেষে আমার ধর্মটি-দেবতাটিই ১ ও অদ্বিতীয় এবং বাকি সব ধর্ম আর দেবতারা ০ তে এসে দাঁড়ায়। যেটা মৌলবাদী ধর্ম হিসাবে পরিচিত।
বাইনারি মেন্টালিটি অবশ্য কেবল ধর্মে নয়, সবখানেই অল্পবিস্তর দেখা যায়। এর কিছু সুবিধাও আছে। একটা লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে বাকি সবকিছুকে অগ্রাহ্য করা যায় বলে এই মানষিকতার লোকেদের মধ্যে সফলতার হার একটু বেশি। যদিও সেই একদিকে সফল হতে গিয়ে অন্যদিকে অনেক কিছু হারাতেও হয়। তাই বাইনারি মেন্টালিটি যেমন সহজে সফলতা আনতে পারে তেমনই সময়মতো থামতে না জানলে সমস্যাও তৈরি করে। দেশ দখলের ক্ষেত্রে বাইনারি মেন্টালিটি নিয়ে লড়াই করলে সফলতা পাওয়া সহজ, কিন্তু দেশ চালানোর সময়ে এই মেন্টালিটি একদমই কাজে দেয়না। যে কারণে মুসলিমরা কোনো দেশকে ইসলামী দেশ বানানোর কাজে খুবই সফল হলেও দেশ চালানোতে ব্যর্থ।
মহাভারতের যুদ্ধের ময়দানে গীতার বাণীতে এই বাইনারি মেন্টালিটিকে ব্যবহারের একটা বিরাট শিক্ষামূলক উদাহরণ আছে। যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগেই অর্জুন হঠাতই যুদ্ধের বহুরকম খারাপ ফলাফল নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন, আর তখনই কৃষ্ণ বলছেনঃ জগতে আমি ছাড়া আর কিছুই নেই, আমিই সব। সকল ধর্ম পরিত্যাগ করে শুধুমাত্র আমারই অনুসরণ করো। এই জগতের মূল্য শুন্য, তোমার আত্মীয়তার মূল্য শুন্য, যুদ্ধে কার কী ক্ষতি হবে সেসবের মূল্য শুন্য। মূল্য আছে শুধুমাত্র জয়ের। তাই সমস্ত শাস্ত্রের সমস্ত নীতিবাক্য ভুলে যাও, আমি যা বলব শুধুমাত্র তাইই করো।
যুদ্ধ শুরু হবার আগে বহুবছর কেটে গেলেও কৃষ্ণ কিন্তু এরকম একটা হুকুম জারী করেননি। আবার যুদ্ধ শেষ হবার পরে তিনিই পান্ডবদের নিয়ে পিতামহ ভীষ্মের কাছে গেছেন উপদেশ নিতে। শুধুমাত্র ওনাকেই অনুসরণ করার আদেশটা চিরস্থায়ী হলে সেটার কোনো দরকার ছিলনা। অর্থাৎ যুদ্ধে জয়লাভের জন্য অর্জুনকে বাইনারি মেন্টালিটিতে অনুপ্রাণিত করা হয়েছিল মাত্র। যুদ্ধ শেষ হতেই তার প্রয়োজনও ফুরিয়েছে। রাজ্য চালানোর জন্য বাইনারি মেন্টালিটির তুলনায় বহুমুখী চিন্তাশীলতাই বেশি কাজের। তাই পান্ডবদের রাজ্য চালাতে দিয়ে কৃষ্ণও নিজের দেশে ফিরে গেছেন। তারপর শুধুমাত্র কৃষ্ণকে অনুসরণ না করেও পান্ডবদের রাজ্য ভালই চলেছে। বাইনারি মেন্টালিটিকে সেখানে একেবারেই বাড়তে দেওয়া হয়নি।
ভারতীয় সমাজে বাইনারি মেন্টালিটির গুরু যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেও তারা ছিল জনসমাজের বাইরে। কারও মাথায় পরম জ্ঞান লাভের নেশা চাপলে আশ্রমে গিয়ে শিষ্য হত। গুরুরা লোকালয়ে এসে হাজার হাজার সংসারী মানুষকে জড়ো করে তাদের মাথায় গজাল ঠুকে এই জ্ঞান ঢোকানোর চেষ্টা করতেন না। ফলে বাইনারি মেন্টালিটি কখনোই সমাজের মূল পরিচালক শক্তি হয়ে ওঠেনি। এই মানসিকতাটাকে অনুপ্রাণিত করে সমাজের সকল স্তরে মহামারীর মতো ছড়িয়ে দেওয়ার অপকর্মটি করেছিলেন গৌতম বুদ্ধ। যার ফলে ভারতের এমনই বারোটা বেজেছিল যার কুফল এখনও পুরোমাত্রায় বর্তমান আছে।
বৌদ্ধধর্ম ভারতবাসীর কী পরিমাণ ক্ষতি করে গেছে তার হিসাব সঠিকভাবে করা কঠিন। সবচেয়ে বড় সমস্যা এই যে বৌদ্ধদের ধর্মপুস্তক এক লাইনও না পড়া থাকলেও সকলেই বুদ্ধকে এক মহান সংস্কারক মনে করে। অনেকে তো ভগবানের সমানও মনে করে। কিন্তু বুদ্ধের দাবীগুলো আসলে একেবারেই অবাস্তব এবং ক্ষতিকরও বটে। যে ভারতের সীমান্ত থেকে একদিন আলেকজান্ডারকে ভয়ে পালাতে হয়েছিল, বৌদ্ধরা সেই মহাশক্তিশালী ভারতকে শুধু অহিংস বানিয়েই শান্ত হয়নি, সারা দুনিয়ার কাছে সেটার প্রচার চালিয়ে চোরডাকাতের জন্য সবচেয়ে সহজ টার্গেটে পরিণত করেছে। যার ফলে শক, হূণ, পাঠান, মোগল, ইংরেজ দলে দলে এসে দেশটাকে লুটপাট করে গেছে।
বুদ্ধের মতে জন্মালেই দুঃখ পেতে হবে। অন্য সব দুঃখের সমাধান থাকলেও জরা, ব্যধি আর মৃত্যুর কোনো সমাধান নেই। একমাত্র সমাধান হল জন্ম না নেওয়া। সুখ-দুঃখ মিশিয়ে বেঁচে থাকাকে বুদ্ধ বুদ্ধিমানের কাজ মনে করতেন না, তাতে সুখের পরিমাণ যতই বেশি হোক দুঃখ একেবারে শুন্য না হলে তাঁর পছন্দ নয়। মাঝেমধ্যে অসুখে ভোগা কিম্বা বুড়ো হয়ে মরে যাওয়া ছাড়া মানুষের জীবনে আরো অনেক কিছুই করার থাকতে পারে। মরুভূমিতে পিরামিড বানানো, মহাকাশে স্যাটেলাইট বসানো, মঙ্গলগ্রহে জাহাজ পাঠানোর মতো বহু কাজই মানুষেই করেছে। কিন্তু বুদ্ধের মতে দুঃখ যদি একেবারে ০ না হয় তবে এগুলোর কোনো দামই নেই। ১০০% দুঃখহীণ, সমস্যাহীন, ঝুঁকিহীন জীবন না পেলে পৃথিবীতে জন্মানোই উচিত নয়। যদি কেউ পৃথিবীতে জন্মানোর মতো ভুল করে ফেলে তবে সারাজীবন তার যাবতীয় কাজের একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত, পরেরবার যেন আর না জন্মাতে হয় তার ব্যবস্থা করা। এই হল বুদ্ধের বাইনারি ধর্ম।
বুদ্ধভক্তরা অবশ্য বলেন যে উনি নাকি হিন্দুদের জটিল ধর্মকে সরল করে দিয়েছিলেন। একটা রেল-ইঞ্জিনকে গলিয়ে যদি লম্বা-লম্বা কয়েকটা রেল-লাইন বানিয়ে ফেলা হয় তবে সরলীকরণ হয়েছে তা সকলেই স্বীকার করতে বাধ্য। কিন্তু কাজের বেলায় কী হয়েছে সেটা বুঝতেও খুব বেশি জ্ঞানের দরকার হয়না। বুদ্ধ এভাবেই একটা বহুমুখী সমাজব্যবস্থাকে ভেঙেচুরে সবাইকে এক লাইনে এনে একটা অবাস্তব লক্ষ্যের দিকে চালিয়ে দিয়েছিলেন। আব্রাহামিক ধর্মগুলোও ঠিক এটাই করে, তবে তাদের লক্ষ্য দুনিয়াটাকে দখল করা, আর বুদ্ধের লক্ষ্য ছিল যেকোনো উপায়ে দুনিয়াটাকে ত্যাগ করে পালানো। দুটিই বাইনারী ধর্ম, একটাই সরলরেখার দুই দিকে দুজন চলমান। একজন ০ থেকে ১০০% দখল করতে চায়, আরেকজন ১০০% ত্যাগ করে ০ হতে চায়। কিন্তু বহুমুখী ধর্মগুলোর বিরোধীতার ব্যাপারে দুইই সমান কট্টর। দুইয়েরই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হল একবার মরতে পারলেই ১০০% সমস্যাহীন একটা জায়গায় ঢুকে পড়া। তাই ভারতে ইসলাম আসার পর বৌদ্ধরা এত বেশি সংখ্যায় ইসলাম গ্রহণ করে ফেলেছিল যে নেড়ে আর মুসলিম সমার্থক হয়ে গেছে। বাংলার মুসলিমের জাতীয় পোষাক হয়ে গেছে লুঙি, যা আসলে ছিল বৌদ্ধদের। আফগানিস্তান, পাকিস্তান আর বাংলাদেশ এখন মুসলিম রাষ্ট্র। এরাই আগে ছিল বৌদ্ধ সংখ্যাগুরু এলাকা।
বুদ্ধের দিকে যাবার আগে হিন্দুদের ধর্মপুস্তকে একটু নজর দেওয়া উচিত। আধুনিক যুগে, অর্থাৎ ইংরেজ আমলের হিন্দুদের জীবন যে বিধান অনুসারে চলত তা হল মনুসংহিতা।বলা হয়ে থাকে এই মনুর বিধান সনাতন কাল থেকেই চালু ছিল। ভারতে বৌদ্ধযুগ পার হয়ে যখন গুপ্ত রাজাদের রাজত্ব শুরু হয় তখন সুমতি ভার্গব নামে এক ব্রাহ্মণের অধীনে একদল লোক দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে নানা পণ্ডিতের কাছ থেকে একত্র করে এই মনুর বিধান আবার একত্র করে। এই নতুন করে লেখার সময়ে কিছু বিরোধী বক্তব্যও এই বিধানে ঢুকে গেছিল, যেগুলোকে গবেষকরা ভার্গব প্রক্ষেপ নাম দিয়েছেন।
এখানেই প্রশ্ন যে অশোকের সময় থেকে শুরু হওয়া এই লম্বা বৌদ্ধ যুগে এমন কী হয়েছিল যে সমস্ত হিন্দুশাস্ত্র হারিয়ে গেল? অশোক কিম্বা অন্যান্য বৌদ্ধ রাজারা হিন্দুদের নিয়ে ঠিক কী করেছিলেন তার কোনো ঐতিহাসিক উত্তর নেই। তাই ব্যাপারটা অনুমানের উপর ছেড়ে দিতে হবে। তবে অশোকের পর ভারতে যে মহান বৌদ্ধ রাজার ইতিহাস পাওয়া যায় তিনি হলেন হর্ষবর্ধন। এই হর্ষের সরকারে দেবোৎপাটন-নায়ক অর্থাৎ মন্দির-ভাঙা-অফিসার বলেই একটা সরকারি পদ ছিল। কর্পোরেশনের লোকেরা যেমন অবৈধ নির্মাণের লিস্ট বানিয়ে বুলডোজার নিয়ে সেগুলো ভেঙে বেড়ায়, এরাও সেইভাবে মন্দিরের লিস্ট বানিয়ে ভাঙত আর সোনাদানা যা পাওয়া যেত সব সরকারে জমা করত।
বাংলার ইতিহাসও প্রায় সেরকমই। হর্ষবর্ধনের সমসাময়িক কালে বাংলায় শশাঙ্কের রাজত্ব ছিল। তারপর এল বৌদ্ধ সমর্থক পাল বংশ। পালদের রাজত্বের পরে বাংলায় যখন সেন বংশের রাজত্ব শুরু হল তখন সে রাজ্যে হিন্দুধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান রাখে এমন কোনো ব্রাহ্মণই ছিলনা। সেনরা কনৌজ থেকে ব্রাহ্মণ আমদানি করে বাংলায় হিন্দুধর্ম আবার চালু করেছিল।
এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে কয়েকশ বছর বৌদ্ধযুগ চালু থাকলে সেখানে আর সনাতন ধর্মের কিছু থাকেনা। তাহলে গুপ্তযুগে সুমতি ভার্গবের দল হিন্দু জীবন বিধান উদ্ধার করলেন কিভাবে? সেগুলোর রেফারেন্স কোথায় পাওয়া গেল? এখানেই আছে আসল কাহিনী।
চার্বাক দর্শনের কোনো গ্রন্থ না পাওয়া গেলেও আমরা এর সম্পর্কে জেনেছি কারণ আস্তিক্যবাদী লেখকেরা সমালোচনা করার উদ্দেশ্যে এর বিভিন্ন তত্ব উল্লেখ করেছেন। মেগাস্থিনিসের লেখা ভারতবিবরণ পাওয়া না গেলেও তার অনেক অংশই উদ্ধার করা গেছে কারণ পরে অনেক ইতিহাসকার ঐ লেখা থেকে বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করেছেন। সেইভাবেই গুপ্তযুগে হিন্দুশাস্ত্র উদ্ধার করার সবচেয়ে সহজ উপায় ছিল বৌদ্ধদের লেখা বইগুলো। আর সেটা করতে গিয়ে কী ফল হয়েছে তার সামান্য উদাহরণই যথেষ্ট হবে।
শাস্ত্রের নামঃ অঙ্গুত্তরোনিকায়। গুগলে AnguttaraNikaya সার্চ করলে ফ্রি পড়তে পারা যাবে।
সূত্রের নামঃ দোনব্রাহ্মণসূত্র। Doṇabrāhmaṇasutta বা With the Brahmin Doṇa.
এই অংশে দোন নামের এক ব্যক্তি বুদ্ধের কাছে গিয়ে নিজেকে ব্রাহ্মণ পরিচয় দেওয়াতে বুদ্ধ জানতে চাইলেন যে জগতে ৫ প্রকার ব্রাহ্মণ আছে, দোন তার মধ্যে কোনটা?
দোন উত্তরে বললেন যে ব্রাহ্মণ যে নানারকম হয় সে ব্যাপারে জানা নেই। তিনি বুদ্ধের কাছেই ভাল ব্রাহ্মণের সংজ্ঞা জানতে চাইছেন।
“Master Gotama, we don’t know about these five kinds of brahmins. We just know the word ‘brahmin’.
Master Gotama, please teach me this matter so I can learn about these five brahmins.”
“Well then, brahmin, listen and pay close attention, I will speak.”
উত্তরে বুদ্ধ জানাচ্ছেনঃ
“Doṇa, how is a brahmin equal to Brahmā?
It’s when a Brahmin is well born on both the mother’s and the father’s sides, coming from a clean womb back to the seventh paternal generation, incontestable and irreproachable in discussions about ancestry.
যার মাতা ও পিতার কূলের সাত প্রজন্ম অবধি (ব্রাহ্মণত্বে) কোনো ভেজাল নেই।
For forty-eight years he lives the spiritual life, from childhood, studying the hymns.
৪৮ বছর অবধি সাধনা ও শাস্ত্রপাঠ করেছে।
আরো অনেক ভাল ভাল গুণের কথা আছে। তবে সাতপ্রজন্মের খাঁটি ব্রাহ্মণের বংশে জন্মানোটা অন্যতম শর্ত। এই গেল ব্রাহ্মণ কিসে ব্রহ্মের সমান হয়।
And how is a brahmin equal to a god?
ব্রাহ্মণ কখন দেবতুল্য হয়?
It’s when a brahmin is well born on both the mother’s and the father’s sides সেই সাত প্রজন্মের খাঁটি ব্রাহ্মণের বংশ হতেই হবে।
Having offered the fee to his teacher, he seeks a wife, but only by legitimate means, not illegitimate. (ধম্মেনেব, ন অধম্মেন।)
In this context, Doṇa, what is legitimate? ধর্মসঙ্গত কোনটা?
Not by buying or selling, he only accepts a brahmin woman by the pouring of water. শুধুমাত্র ব্রাহ্মণকণ্যাকেই বিয়ে করতে হবে। অন্য বর্ণে বিয়ে করা যাবেনা।
বুদ্ধ বলেছেন, অন্য বর্ণে বিয়ে করলে যেই ব্রাহ্মণ আর দেবতার তুল্য থাকবেনা, অধঃপতন হয়ে যাবে।
—————–
And how is a brahmin a brahmin outcaste?
ব্রাহ্মণ কিসে জাতিভ্রষ্ট হয় তার উত্তর বুদ্ধ দিচ্ছেন। সকলে মন দিয়ে শিখে নিন।
It’s when a brahmin is well born on both the mother’s and the father’s sides, coming from a clean womb back to the seventh paternal generation, incontestable and irreproachable in discussions about ancestry.
যদিও মাতৃকূল ও পিতৃকূলের সাত প্রজন্মের নির্ভেজাল ব্রাহ্মণ হয়
For forty-eight years he lives the spiritual life, from childhood, studying the hymns.
যদি ৪৮ বছর ধরে সাধনা এবং শাস্ত্রপাঠ করে থাকে।
Then he seeks a fee for his teacher by legitimate means and illegitimate means.
যদি ধর্মপথে বা অধর্মপথে গুরুদক্ষিণা দেয়। অধর্মপথে বলতে
By farming, trade, raising cattle, archery, government service, or one of the professions, not solely by living on alms, not scorning the alms bowl.
অর্থাৎ কৃষি, ব্যবসা, গোপালন, যুদ্ধ, সরকারী চাকরি ইত্যাদি করলে ব্রাহ্মণের জাতি যাবে। ব্রাহ্মণ জীবিত থাকবে শুধুমাত্র ভিক্ষার দ্বারা।
A brahmin is called a brahmin outcaste because he earns a living by any kind of work.
Having offered a fee for his teacher, he seeks a wife by both legitimate and illegitimate means. That is, by buying or selling, as well as accepting a brahmin woman by the pouring of water.
গুরুদক্ষিণা দিয়ে (অর্থাৎ শিক্ষা শেষ হলে) টাকাপয়সা না দিয়ে হোক বা দিয়েই হোক, ব্রাহ্মণকন্যাকে বিয়ে করে।
অর্থাৎ আউটকাস্ট ব্রাহ্মণও অন্য জাতে বিয়ে করতে পারবেনা।
এখন চিন্তার বিষয় হল যে বুদ্ধের এই দাবীগুলোর সমর্থন কি হিন্দুশাস্ত্রে পাওয়া যায়? বেদ-উপনিষদে কি ব্রহ্মজ্ঞান লাভের জন্য মাতৃকূল-পিতৃকূলের সাত প্রজন্ম অবধি নির্ভেজাল ব্রাহ্মণ হবার শর্ত দেওয়া হয়েছে? একেবারেই তা নয়। রামায়ণ-মহাভারতেও এর উলটো উদাহরণই আছে। রামায়ণের খলনায়ক রাবণ ছিল পুলস্ত্য ঋষির বংশধর। রাক্ষসবংশে বিয়ে করার কারণে কিন্তু পুলস্ত্য ঋষির ব্রাহ্মণত্ব ডুবে যায়নি। জবালাপুত্র সত্যকামের পিতার পরিচয় কেউ জানত না আর জবালা নিজেও ব্রাহ্মণ ছিলনা, তবুও সত্যকাম ব্রহ্মজ্ঞান লাভের অধিকার পেয়েছিল। মহাভারতের লেখক বেদব্যাসের মাতৃকূল ছিল অব্রাহ্মণ। ঋষি বিশ্বামিত্রের পিতামাতা দুজনেই ক্ষত্রিয়।
গোপালন করলে ব্রাহ্মণের জাত যায়? তাহলে রামায়ণ-মহাভারতে বামুনকে গরু দানের কাহিনী কেন?
যুদ্ধ করলে ব্রাহ্মণের জাত যায়? তাহলে পরশুরামের জাত গেছিল?
সরকারি চাকরি করলে ব্রাহ্মণের জাত যায়? তবে চাণক্য পন্ডিতের জাত গেছে?
বংশগত জাতিভেদের এমন কঠিন নিয়ম হিন্দুশাস্ত্রে না থাকলেও বুদ্ধ কিভাবে পেলেন সেটা গবেষণার বিষয়। এতবড় জ্ঞানী হয়েও তিনি রামায়ণ-মহাভারত জানতেন না এটা মেনে নেওয়া কঠিন ব্যাপার। একমাত্র তিনি যদি হিন্দুদের বদনাম করার জন্য জেনেশুনে এরকম গল্প বানিয়ে থাকেন তবে আলাদা কথা। তবে গুপ্তযুগে যখন এগুলোকে রেফারেন্স হিসাবে নিয়ে হিন্দুদের বিধান পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল ততদিনে বুদ্ধ এক মহাজ্ঞানী অবতার হিসাবে পুজো পাচ্ছেন। অতএব তাঁর মুখের কথাকে আপ্তবাক্য ধরে নেওয়াই স্বাভাবিক। তাছাড়া শাস্ত্রজ্ঞানের গঙ্গারাম হয়ে যাওয়া বামুনদের কাছে এসব বংশগত অধিকারের নিয়ম খুবই কাজের বলে মনে হওয়ার কথা, তাই এর বিরোধী বক্তব্য খুঁজে সময় নষ্ট করাটা বোকামী হত। তবে বংশগত সংরক্ষণের ব্যাপারটা যে বৌদ্ধদের অবদান তার অতি আধুনিক প্রমাণও আছে। ভারতের অন্যতম মহাজ্ঞানী নেতা আম্বেদকর বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং বংশগত কাস্ট সার্টিফিকেট অনুসারে সংরক্ষণ দিয়ে গেছিলেন। এই সংরক্ষণের সুবিধা পাওয়া দলিত হিন্দুরাই কিন্তু আম্বেদকর বা তাঁর পার্টিকে সেদিনও ভোট দেয়নি, এখনো দেয়না। বুদ্ধভক্ত আম্বেদকরের পাশে দৌড়ে এসেছিল ইংরেজ সরকার আর মুসলিম লীগ। কারণ তাদের সকলেরই গোড়া এক জায়গায়।
যেহেতু বৌদ্ধধর্ম আর আব্রাহামিক ধর্মের গোড়া একই, তাই বুদ্ধকে যারা অবতার হিসাবে স্বীকার করে তারা যীশু-মহম্মদকেও অবতার বলতে বাধ্য। শুধুমাত্র গীতা পড়ে যার কৃষ্ণচেতনা জেগেছে তারা কৃষ্ণকেও বাইনারি ধর্মের অবতার ভেবে একই তালিকায় রাখে। হিন্দুদের এরকম বাইনারি গুরু প্রচুর আছে। গীতায় যে বিশেষ পরিস্থিতির প্রয়োজনে সাময়িকভাবে বাইনারি মেন্টালিটিকে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে সেটা মহাভারত পড়লে বোঝা যায়। যুদ্ধকালে ঐ বাণীর আগে তো বটেই, পরেও কেউ কোনোদিন সকল ধর্ম ত্যাগ করে কৃষ্ণকে অনুসরণ করেনি। কৃষ্ণের নিজের রাজ্যেই যাদবদের গণপরিষদ ছিল, সেই পরিষদের সাথে আলোচনা করে কৃষ্ণকে রাজ্য চালাতে হয়েছে। কিন্তু মহাভারতের কৃষ্ণকে নিয়ে আলোচনা করলে তাদের বাইনারি ধর্ম হাওয়ায় উড়ে যাবে, তাই তারা এগুলো যেকোনো উপায়ে চাপা দিতে চায়। কিন্তু কৃষ্ণের নাম ব্যবহার করে গুরু সাজতে গেলে কৃষ্ণের একটা ইতিহাস রেডি রাখা খুবই প্রয়োজন। তাই মহাভারতের কৃষ্ণকে চাপা দেবার উদ্দেশ্যে বৃন্দাবনের কৃষ্ণকে নিয়ে কাহিনী লেখানো আর সেই কাহিনী সরকারি সহায়তায় প্রচার করা সেই সুলতানি আমল থেকেই চালু হয়ে গেছিল। সেগুলোই এখন নিয়মিত কেত্তন গেয়ে শোনানো হয়। মহাভারতে কৃষ্ণের চরিত্র যেহেতু বাইনারি ধর্মের বিরুদ্ধে যায় তাই বর্তমানের বাইনারি গুরুরা সেগুলোকে ত্যাগ করেছে। বাইনারি ধর্মের এটাও একটা সরল পদ্ধতি। যেটা এর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যায় সেটাকে ত্যাগ করা, পারলে একেবারেই মুছে দেওয়া। তাই কৃষ্ণনাম দিয়ে ব্যবসা করা গুরুদের মুখে মহাভারতের কৃষ্ণ নেই। যদিও ওটাই কৃষ্ণের মূল ভূমিকা। কৃষ্ণের নামে চলে দেখে অনেকেই এগুলোকে হিন্দু বলে ভুল করে। কিন্তু আসলে প্রতিটা বাইনারি ধর্মই হিন্দু সংস্কৃতির বিরোধী।
গীতায় যুদ্ধের প্রয়োজনে সাময়িকভাবে বাইনারি মেন্টালিটিকে উৎসাহিত করা হয়েছিল। আব্রাহামিক ধর্মগুলো যেহেতু সবসময় জেহাদী, তাই বাইবেল-কোরানে পুরোটাই এই বাইনারি মেন্টালিটিকেই একমাত্র ধর্ম বলা হয়েছে। এইজন্যই শুধুমাত্র গীতা পড়ে যারা ধার্মিক, তাদের কাছে কৃষ্ণ আর মহম্মদে কোনো তফাত নেই। ইস্ট ইন্ডীয়া কোম্পানীর আমলে গীতাকে মহাভারত থেকে আলাদা করে লেখা হয় এবং শুধুমাত্র গীতাতেই ধর্মের যাবতীয় বস্তু পাওয়া যাবে বলে প্রচার শুরু হয়। এর থেকেই কৃষ্ণের সাথে আব্রাহামিক যীশু-মহম্মদ সমান হতে শুরু করে এবং সেকুলারিজমের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানেও যেসব গুরুরা গীতাকে সবচেয়ে বড় ধর্মগ্রন্থ হিসাবে দেখে তারা সকলেই যীশু-মহম্মদকে অবতার বলে মানতে বাধ্য। কিন্তু আবার গীতার বাণীটা মহাভারতের কৃষ্ণ থেকে নিলেও বাকি মহাভারতের কৃষ্ণকে হিসাবে ধরলে তাদের বাইনারি ধর্মটা টিকবেনা। অতএব ওরা নিজেদের সুবিধামতো গীতার বাইনারি উপদেশগুলো মহাভারতের কৃষ্ণ থেকে নেয় আর বাকি সব ব্যাপারে মহাভারতের কৃষ্ণকে সরিয়ে বৃন্দাবনের বংশীধারী কৃষ্ণকে টেনে আনে।
যেহেতু বাইনারি ধর্মগুলো মানুষের চিন্তাভাবনার প্রয়োজনীয়তা অনেক কমিয়ে দেয়, তাই এটার জনপ্রিয়তা বেশি। আর এই উপায়ে দল ভারী করা যেমন সহজ তেমনই লোক ঠাকানোও সহজ। তাই শুধু যে ধর্মগুরুরা জনগণের মাথায় বাইনারি মেন্টালিটি ঢোকায় তা নয়। এর আরও অনেক ব্যবহার আছে। স্কুল কলেজে শিক্ষিত গাধা তৈরি করতে কিম্বা চাকরির পরীক্ষার নামেও এই জিনিসটা লাগাতার মানুষের মাথায় ঢোকানোর কাজ চালু আছে। এর মধ্যে ট্রু-ফলস দাগ দেওয়া প্রশ্নগুলো একেবারেই বাইনারি, আর মাল্টিপল চয়েস গুলোয় চারটি বিকল্প থাকে এই যা তফাত। এইগুলো ব্যবহার করে এখন সরকারিভাবে প্রায় জন্ম থেকেই শিশুদের মধ্যে বাইনারি মেন্টালিটিকে অনুপ্রাণিত করা হয়ে থাকে। এতে শিক্ষাটা বাদে বাকি সবই খুব সরল হয়ে যায়। ভবিষ্যতের ভোটার আর ক্যাডার তৈরি হয়।
Leave a Reply