লিখেছেন : কবিতা রায়
১৫ আগস্ট কিসের হিসাবে স্বাধীনতা দিবস হয় বলা মুশকিল। ১৯৪৫ সালে যখন ইউনাইটেড নেশন তৈরি হয়েছিল, তার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের তালিকায় ভারতের নাম আছে। অনলাইনেই দেখা যায়। ভারত তখনই স্বাধীন হয়ে গেছিল। কিন্তু জিন্না জিদ ধরে বসেছিলেন পাকিস্তান না দিয়ে ইংরেজ ভারত ছাড়তে পারবেনা। কমিউনিস্ট পার্টির তো একমাত্র কাজ ছিল মুসলিম লীগের লেজ ধরে চলা। ভীমরাও আম্বেদকরও ভারতের ভালর জন্য সিড্যুলকাস্টদের কোটার দাবীতে রাতের ঘুম ত্যাগ করেছিলেন। তিনিও বললেন ইংরেজ চলে গেলে গ্রেট ডিজাস্টার হবে।
অতএব সেই গ্রেট ডিজাস্টারের ভয়ে ১৯৪৫ সালের পরেও আমাদের অহিংস গান্ধী-নেহেরু ইংরেজের হাতেপায়ে ধরে ভারতে রেখে দিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পরে নেহেরু প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মাত্র, কিন্তু তার পরেও লর্ড মাউন্টব্যাটেনই ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান। এই ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট জিন্নার দাবী মেনে পাকিস্তান দেওয়া হয়েছিল। তার পরেকার গ্রেট ডিজাস্টার সামলানোর জন্য আম্বেদকরকে সংবিধান লেখার দায়িত্ব দিয়ে তবেই মাউন্টব্যাটেন ভারত ছেড়েছিলেন। শুধুই নেহেরুকে গদিটা দিয়ে তিনি পালাতে পারেননি, যাবার আগে জিন্নাকে পাকিস্তান আর আম্বেদকরকে কোটা দিয়ে যেতে হয়েছিল।
নেহেরুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পবিত্র দিন হিসাবে ১৫ আগস্ট দিনটাকে বেছে নেবারও কারণ আছে। পরমাণু বোমায় আক্রান্ত হয়ে ১৯৪২ সালের এই তারিখেই জাপান আত্মসুমর্পন করেছিল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজের বিজয় সম্পূর্ণ হয়েছিল। আর সেইসাথে নেতাজীর আজাদ হিন্দ সরকারেরও পতন হয়েছিল।
১৫ আগস্ট দিনটা আদৌ ভারতের স্বাধীনতা দিবস নয়, এটা স্বাধীন ভারতের পার্টিশান দিবস। এই তারিখে পতাকা অর্ধমনিত রেখে শোক পালন করা উচিত।
১৯৪৫ সালে ভারত স্বাধীন হবার পিছনে অবশ্য কংগ্রেসের কোনো অবদান নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইংলন্ড-আমেরিকা যে আতলান্তিক সনদ চুক্তি করেছিল তারই শর্ত অনুসারে যুদ্ধ থামার পরেই ভারত স্বাধীন হবার কথা। এরপর ১৯৪৫ সালে রাশিয়াও পরমাণু বোমা বানাতে সক্ষম হয়। তখনই দুই পরমাণু বোমার মালিক সুপার পাওয়ারের চাপে ভারতের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়ে যায়। এর সাথে ১৫ আগস্ট তারিখটার কোনো সম্পর্ক নেই। ১৫ আগস্টে ইংরেজরা চলে যায়নি, ক্ষমতাও ছাড়েনি। ঐ তারিখে জিন্নাকে খুশি করে নেহেরু প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মাত্র।
Leave a Reply