লিখেছেন : কবিতা রায়
ভারতের মেজরিটি সম্প্রদায় খুবই অসভ্য, বর্বর, অমানবিক, অশিক্ষিত, কুসংস্কারগ্রস্ত মূর্খ। তাদের হাতে ক্ষমতা গেলে তারা অন্য সম্প্রদায়কে আর দেশে শান্তিতে থাকতে দেবেনা।
ইংরেজরা এই যে যুক্তি দেখিয়ে ভারত শাষণ ওরফে ভারতবাসীর উন্নতি করত, সেটা ভারতের সংবিধানও স্বীকার করে নিয়েছে। ইংরেজদের সেই যুক্তিকে সরাসরি সমর্থন জানিয়ে পরমপূজ্য আম্বেদকর বলেছিলেন ভারত এখনই স্বাধীনতা পেলে তা হবে এক বিরাট বিপর্যয় (Great disaster)। কারণ সেক্ষেত্রে বামুন-বানিয়ার দলের হাতে ক্ষমতা চলে যাবে। তাই তিনি এটাও পরিষ্কার বলেছেন যে বামুন-বানিয়াদের স্বাধীনতা সংগ্রামে দলিতরা কখনো অংশ নেয়নি, নেবেও না। মুসলমানেরা একবারই খেলাফত আন্দোলনের সময় এই চেষ্টা করেছিল, কিন্তু খুব দ্রুতই তারা সে পথ ত্যাগ করেছে। আম্বেদকরের দাবীটা সঠিক কিনা তা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে, কিন্তু আম্বেদকরের কাছ থেকে ইংরেজরা এই কথাগুলোই শুনেছিল।
জিন্নার মতোই এবং আম্বেদকরও বলতেন যে ইংরেজরা ভারত ছেড়ে চলে গেলে ওনাদের জাতভাইদের উপর ভয়ানক বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই ইংরেজদের ভারত ছাড়া করতে কেবল বামুন-বানিয়ারাই চেয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই বামুন-বানিয়ার জাতের উপর ইংরেজরা চটে গিয়ে ভিলেন বানাবে এটাই স্বাভাবিক। ইংরেজ কোম্পানী যখন ভারতে রাজ্যবিস্তার শুরু করেছে তখন তাদের এই দখলের প্রধান বাধা ছিল মুসলিম নবাব-বাদশাহরা। তারাই ছিল অত্যাচারী ভিলেন। বাদশাহের ইসলামী রাজত্ব দখল হয়ে যাবার পরে তাদের নজর পড়ল ছোটো ছোটো স্বাধীন রাজ্যগুলোর দিকে, অমনি সেই রাজারা হয়ে গেল অত্যাচারী ভিলেন। সেইভাবেই যারা ইংরেজদের তাড়িয়ে স্বাধীনতা আনতে চেয়েছিল সেই বামুন-বানিয়ারাও হয়ে গেল অত্যাচারী ভিলেন, অন্যদিকে আম্বেদকর-জিন্নারা হয়ে গেল পরম বন্ধু। আর ইংরেজের দান করা এই তত্বটি পরম আদরে ভারতের সংবিধানে গ্রহণ করা হল। এইজন্যই ১০০০ বছর রাজত্ব করা মুসলিম কিম্বা ২০০ বছর রাজত্ব করা ইউরোপিয়ানরা অত্যাচারী বহিরাগত নয়, ভিলেন কেবল বামুন-বানিয়া ওরফে জেনারেল কাস্ট। ব্রিটিশরা যাবার আগে অনুগতদেরই যতটা বেশি সম্ভব দিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
এইভাবে জাতপাতের ভিত্তিকে কোটা দেওয়া গান্ধী চাইতেন না, নেতাজী চাইতেন না, নেহেরুও চাইতেন না। আম্বেদকরও জানতেন যে সব বামুন ভিলেন নয়। তিনি নিজেই এটা স্বীকার করেছেন যে কাস্ট সিস্টেম শুধুমাত্র বামুনেরা তৈরি করেনি এটা সকলের সম্মতিতে হয়েছিল। তারপরেও ইংরেজদের আবিষ্কার করা লর্ড ওয়াভেলের এই সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি ভারতের সংবিধানে সগৌরবে স্থান পেয়েছে। ইংরেজরা চেয়েছিল জেনারেল কাস্টকে ভিলেন বানাতে হবে, তাই তাদের হাত থেকে ক্ষমতা ভিক্ষা পাবার জন্য কংগ্রেস আর মুসলিম লীগ মিলে জেনারেল কাস্টকে ভিলেন বানিয়েছে। আম্বেদকর যে ভারতের মন্ত্রীসভায় মুসলিম লীগের সমর্থনে ঢুকেছিলেন সেটা মনে রাখা দরকার। স্বাধীন ভারতে আম্বেদকর দুবার ভোটে দাঁড়িয়ে কোনোবারেই জিততে পারেননি। ওনার দলের আরেক মহান নেতা যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলও ১৯৬৭ সালে বারাসত কেন্দ্র থেকে কমিউনিস্টদের সমর্থন নিয়ে ভোটে লড়েছিলেন, তিনিও জিততে পারেননি।
কাস্ট নিয়ে আম্বেদকর যেটা বলেছেন তা হলঃ
he spread and growth of the Caste system is too gigantic a task to be achieved by the power or cunning of an individual or of a class. Similar in argument is the theory that the Brahmins created the Caste. After what I have said regarding Manu, I need hardly say anything more, except to point out that it is incorrect in thought and malicious in intent. The Brahmins may have been guilty of many things, and I dare say they were, but the imposing of the caste system on the non Brahmin population was beyond their mettle. They may have helped the process by their glib philosophy, but they certainly could not have pushed their scheme beyond their own confines.
সবকিছু জেনেও ইংরেজের হাত থেকে ক্ষমতা ভিক্ষা নেবার জন্য জেনারেল কাস্টকে ভিলেন বানাতে হয়েছিল। যেভাবে ইংরেজের ইচ্ছায় নেতাজীকে ওয়ার ক্রিমিন্যাল স্বীকার করতে হয়েছিল। আজাদ হিন্দ ফৌজের কোনো সদস্যকে ভারতীয় সেনায় বা পুলিশ বাহিনীতে যুক্ত হতে না দেবার শর্ত জারী করতে হয়েছিল।
Leave a Reply