লিখেছেন : Masud Abdullah
নিরূপায় হলে শুকরের মাংস খাওয়া যায় – ১৪০০ বছর আগেই আল্লাহ ফতোয়া দিয়েছিলেন। নিরূপায় হলে শুকরের অঙ্গ মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করা যায় – ফতোয়া দিয়েছেন বর্তমান যুগের আলেমরা।
আসলেই তো, নিরূপায় হলে ইসলামে কত কিছুই না জায়েজ হয়ে যায়! নিরূপায় হলে ৫১ বছর বয়সী পুরুষের ছয় বছর বয়সী বালিকাকে বিয়ে করা জায়েজ হয়ে যায়। নিরূপায় হলে বিবাহিত বড় হুজুরের জন্য ৫০১ নম্বর রুম জায়েজ হয়ে যায়। নিরূপায় হলে মদ্যপান জায়েজ হয়ে যায়। আর তাই, আমাদের দেশের মাদ্রাসা নির্মাণকারী অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ, অভিনেতা ও ব্যবসায়ীদের জন্য ‘নিরূপায় ক্যাটাগরিতে হালাল’ অনেক কিছুই আছে। নিরূপায় ক্যাটাগরিতে ওনারা লাইসেন্স নিয়ে মদ্যপান করেন। নিরূপায় ক্যাটাগরিতে ওনারা নাটক-সিনেমায় অভিনয় করেন। নিরূপায় ক্যাটাগরিতে ওনারা ডিস্কো এবং ক্যাসিনো খোলেন। নিরূপায় ক্যাটাগরিতে ওনারা নাচ ও গান শেখেন এবং দেখেন। নিরূপায় ক্যাটাগরিতে ওনারা দাড়ি শেভ করেন। নিরূপায় ক্যাটাগরিতে ওনারা খোলামেলা পোশাক পরে মডেলিং করেন। নিরূপায় ক্যাটাগরিতে ওনারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বদলে শুধু শুক্রবার জুমার নামাজ পড়েন। নিরূপায় ক্যাটাগরিতে ওনারা রমজান মাসের দিনে ঘরের মধ্যে পাঁচবার খেয়ে রোজা রাখেন। নিরূপায় ক্যাটাগরিতে ওনারা পাজামা-জোব্বার সুন্নতী লেবাসের বদলে তাগুতি পোশাক প্যান্ট-শার্ট পরেন। নিরূপায় ক্যাটাগরিতে ওনারা ওনাদের সন্তানদের বিয়ের সময়ে ডিজে পার্টির আয়োজন করেন। নিরূপায় ক্যাটাগরিতে ওনারা গ্রামের বাড়িতে স্কুল না বানিয়ে মাদ্রাসা বানান। নিরূপায় ক্যাটাগরির কারণেই ওনারা শুদ্ধভাবে কোরআন পড়তে না পেরে মাদ্রাসা থেকে মোল্লা ডেকে এনে মরা বাপের নামে মিলাদ-খতমের আয়োজন করেন।
নিরূপায় ক্যাটাগরিতে ওনাদের সকল ইসলামবিরোধী আচরণ ও হারাম জীবনযাপন হালাল হয়ে যায়। কিন্তু মাদ্রাসার বন্দি কারাগারের বাসিন্দাদের জন্য কোন নিরূপায় ক্যাটাগরি নেই। মাদ্রাসার বন্দিদের জন্য নিরূপায় ক্যাটাগরিতে মদ্যপানের অনুমতি বা লাইসেন্স নেই। মাদ্রাসার বন্দিদের জন্য নিরূপায় ক্যাটাগরিতে নাচগানের চর্চা, অভিনয় করা, প্যান্ট-কোট-টাই পরা, চেয়ার টেবিলে খাওয়া এমনকি জোরে হাসারও অনুমতি নেই। নিরূপায় ক্যাটাগরি শুধু ওনাদের জন্য, আমাদের জন্য নয়। ওনারা নিরূপায় ক্যাটাগরিতে যে মূলত ‘নিষ্পাপ মুন্না’ সেটি প্রমাণ করে আল্লাহর হাত থেকে রক্ষা করে ওনাদের বেহেশতে নেয়ার দায়িত্ব আমাদের। ওনারা যে সত্যিই নিরূপায় ছিলেন সেটি বোঝাতে হলে আমাদেরকে নিষ্পাপ থাকতে হবে, কেননা নিষ্পাপ হুজুরের কথা আল্লাহ শুনবে, আর তাই আমাদের জন্য কোন নিরূপায় ক্যাটাগরি থাকতে নেই। ওনাদের কাছে হাত পেতে জাকাত ও কোরবানি খেয়ে নিজেদের জীবনকে ওনাদের জন্য কোরবানি করে দেয়াটাই আমাদের নিয়তি। ওনাদের আর্থিক সাহায্য নিয়ে জিহাদ করে নিজেদের জীবন ধ্বংস করাই আমাদের কাজ। ওনারা আমাদেরকে এভাবেই সৃষ্টি করেছেন।
হ্যাঁ, তবে ওনাদের কাছ থেকেই আবার কাঠমোল্লা গালি শোনাটাও আমাদের নিয়তি। মিলাদ পড়ে টাকা নিলে আমরা কাঠমোল্লা, জিহাদ করে মানুষ মারলে আমরা জঙ্গি, আবার জিহাদের বিরুদ্ধে কথা বললে আমরা নাস্তিক! আমাদের শান্তি নেই কোথাও, কখনো। ওনাদের জন্য আমাদের ‘জান কোরবান’ করতেই হবে। ওনাদেরকে আগা থেকে এবং মাথা থেকে খাওয়ার সুযোগ দিতে হবে, কিন্তু আমাদের জন্য নেই কিছুই। নেই বলেই আমাদের দিয়ে মানুষ মারার জন্য এবং আমাদেরকে হত্যা করার জন্য ওনারা বিদেশ থেকে আমদানি করেছেন জিহাদ। কিন্তু আমাদের সামনে কিছু করার নেই, কিছু বলার নেই। জিহাদ করলে জঙ্গি, তাবিজ বেচলে কাঠমোল্লা আর ওনাদের আনুগত্য ত্যাগ করলে আমরা নাস্তিক! জঙ্গি, কাঠমোল্লা আর নাস্তিক হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প আমাদের সামনে নেই। আমরা কবিতা লিখতে পারব না, কারণ কবিতা ইসলামবিরোধী। আমরা গান গেয়ে রোজগার করতে পারব না, কারণ গান ইসলামবিরোধী। আমরা উদ্যোক্তা হতে পারব না, কারণ উদ্যোক্তাও ইসলামবিরোধী। আমরা চাকরি করতেও পারব না, কারণ আমাদের সার্টিফিকেট ওনাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। কি আশ্চর্য আমাদের স্রষ্টারা, যারা সৃষ্টি করেন এবং ঘৃণা করেন! যারা সৃষ্টি করেন এবং পরিত্যাগ করেন! যারা সৃষ্টি করেন এবং হত্যা করেন!
Leave a Reply