আয়েশা বেবির বিবাহের পিছনে আসল গল্প
লিখেছেন : জুপিটার জয়প্রকাশ (দুপেয়ে গাধ)
খাদিজা বিবির মতোই আবু বকর ছিল এক ধনী ব্যবসায়ীর পুত্র। নিজেও খাদিজার মতোই বিদেশের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য করত। মক্কার প্রধান পুরোহিতের আদরের নাতি হিসাবে এবং খাদিজার জামাই হিসাবে ব্যবসা সূত্রে মহম্মদ আবু বকরের বেশ ভাল বন্ধু ছিল। তাদের বয়সও ছিল কাছাকাছি। মহম্মদ ছিল আবুবকরের চেয়ে দুই বছরের বড়ো। ছোটোবেলা থেকেই দুজনের বন্ধুত্ব।
মহম্মদের নবি হওয়া এবং আল্লার সাথে বাতচিত করাটা সে সময়ে খুব বিরাট অবাক করার মতো ঘটনা কিছু ছিল না। প্রায় প্রতি শহরেই এরকম লোক তখন পাওয়া যেত। মহম্মদের নাম প্রচার হলে খাদিজা বিবির যেমন ব্যবসার প্রচার ভালো হত তেমনই সুবিধা আবু বকরের বেলাতেও ছিল। বেশি পয়সাওয়ালা লোকেদের বেলায় এরকম দাবী করলে সহজে কেউ বিশ্বাস করেনা, তাই খাদিজার পরিবারের কেউ কিম্বা আবুবকর নিজে অলৌকিক পয়গম্বর সাজতে পারেনি। মৃগি রোগে আক্রান্ত মহম্মদ ছিল সেদিক দিয়ে উপযুক্ত। খাদিজার জামাইয়ের মাথাখারাপ এটা সামাজিক সম্মানের পক্ষে খুবই সমস্যাজনক ছিল। তাই খাদিজা বিবি তার পন্ডিত ভাই নওফেলকে একটা কিছু সমাধান বের করতে চাপ দেয়। খাদিজার ইচ্ছায় ভাই নওফেল মহম্মদের মৃগি রোগের লক্ষণগুলোকে অন্য কিছু বলে চালানোর জন্য অনেক কেতাব সন্ধান করে অবশেষে বাইবেলের পয়গম্বরদের সাথে মিল পেয়ে যায়। খাদিজার খেয়েপরে বেঁচে থাকা নওফেল এরপর মহম্মদকে নবি সার্টিফিকেট দেবার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। কিন্তু নিজে কোনোদিনই ইসলাম গ্রহণ করেনি। সোজা কথায় সে ভন্ডামিটা ভালই বুঝত। খাদিজার জীবিতকালে ইসলামও বর্তমান ইসলাম ছিল না। খাদিজার পছন্দ নয় এরকম কোনো আয়াত নামিয়ে আনলে মহম্মদের কপালে কষ্ট ছিল। তাই তখনকার ইসলাম গ্রহণ করতে খাদিজা বা আবু বকরের তেমন সমস্যা হয়নি।
মহম্মদকে সততার প্রতীক হিসাবে খাড়া করে খাদিজা আর আবু বকরের ব্যবসা ভালই চলছিল। সেই সময়ে ইসলাম ছিল প্যাগান মক্কাবাসীকে না চটিয়ে আব্রাহামিক ইহুদি-ক্রিশ্চানদের আরো একটু কাছের লোক হবার চেষ্টা। কারণ খাদিজা আর আবুবকর, দুজনেরই ব্যবসা এতে ভাল চলত। পরের দিকে মহম্মদের ইসলাম উগ্র হয়ে ওঠার কয়েকটা কারণ আছে।
প্রথমতঃ খাদিজা বিবির বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্যবসা এবং ক্ষমতা মহম্মদের হাতে আসতে থাকে। ক্ষমতা যত বাড়ে, তেজ ততই বাড়ে। শুরুতে যেসব হাসিতামাশা শুনে মুখ বুজে থাকা যেত সেরকম আর সহ্য হয়না।
দ্বিতীয়তঃ মক্কার প্রধান পুরোহিতের পরিবারের সদস্য হিসাবে মক্কার মন্দিরের একটা ভাগ পাবার আশা মহম্মদ একেবারে ত্যাগ করেনি। যদিও বাপ মারা যাবার আড়াই বছর পরে জন্মানোর ব্যাপারটা মক্কার সকলেই জানত তবে এজন্য তারা মহম্মদকে তেমন দোষ দেয়নি। কিন্তু মন্দিরের ভাগ পাওয়ার ব্যাপারটা অনিশ্চিতই ছিল। যখন চাচা আবু তালেব অসুস্থ হলেন এবং মহম্মদ কোনো ভাগ পাবেনা এটা নিশ্চিত হয়ে গেল তখন থেকে আর প্যাগানদের মন জোগানোর কোনো প্রয়োজন রইল না। প্রাণ খুলে মক্কার মন্দিরের মূর্তিগুলোকে গালাগালি দেওয়া শুরু হল।
এরই মধ্যে মক্কায় একদিন মেরাজের চিটিংবাজি কাহিনীটা ঘটে গেল। খাদিজা মারা যাবার পর মহম্মদকে এক রাতে প্যাগানদের প্রধান পুরোহিতের কন্যা উম্মেহানীর বাসায় হাতেনাতে ধরা হল। তখন ভেবেচিন্তে বানিয়ে আয়াত নামানোর সময় ছিলনা বলে মহম্মদ চোখকান বুজে প্যাগান উপাস্য নদী, পাহাড়, মেঘ, সমুদ্র, নক্ষত্র ইত্যাদির কসম খেয়ে আয়াত নামানো শুরু করে দেয়। এইসব নিতান্ত জড়বস্তুদের কসম খেয়ে দাবী করে আল্লা নাকি তাকে এক উড়ন্ত গাধায় চড়িয়ে মক্কা থেকে জেরুজালেম হয়ে বেহেস্ত দেখিয়ে এনেছে। ভেবেচিন্তে বলার সময় না পাওয়াতে বেহেস্ত সম্পর্কে মহম্মদ তার ছোটোবেলাকার প্যাগান কাহিনীগুলোই শুনিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু আব্রাহামিক তত্বের সাথে সেটা মেলেনা, কারণ কেয়ামতের বিচারের আগে আব্রাহামিক স্বর্গ-নরকে কোনো মানুষ থাকার কথা নয়। ওটা প্যাগানদের থাকে। কথাগুলো পরে কোরানে লেখাও হয়নি, কারণ লিখলে ইসলামের বারোটা বেজে যাবে।
মক্কার লোকেরা অবশ্য স্বর্গ নরকের গল্প শুনে খুশি হয়নি। ছোটো থেকেই সবাই ওগুলো জানত। তাদের দরকার ছিল এমন কোনো প্রমাণ যেটা বাস্তবে মিলিয়ে দেখা যায়। কিন্তু মহম্মদের গল্পে তেমন কিছুই ছিলনা আর আল্লা বা ফেরেস্তাদের কেউ এসে সাক্ষী দেবার চেষ্টাও করেনি। সাক্ষী দিয়েছিল আবুবকর। সে বয়ান দিয়েছিল যে সলোমন মন্দিরের যে বর্ণণা মহম্মদ দিয়েছে তা একেবারে সঠিক। যদিও এটা শতভাগ মিথ্যা সাক্ষী ছিল। ইতিহাসে প্রমাণিত যে মহম্মদ তথা আবুবকরের জন্মের আগেই সেই মন্দির ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। ফলে মেরাজের সময়ে মহম্মদের পক্ষে সেই মন্দির দেখাও সম্ভব ছিলনা আর আবুবকরের পক্ষেও সেই মন্দির দেখে মহম্মদের বিবরণের সাথে মেলানো সম্ভব ছিলনা। নিতান্তই যদি ধরা হয় যে মহম্মদকে দেখানোর জন্য আল্লায় শুধু সেই রাতে মন্দিরটা খাড়া করেছিল তবুও আবুবকর তো কোনোভাবেই সেই মন্দির দেখেনি। এতে খুব ভালই বোঝা যায় যে মহম্মদের চিটিংবাজিতে আবুবকর সমান অংশীদার ছিল। এটা শুধু একটা উদাহরণ, আবুবকর আর মহম্মদ মিলে এরকম অনেক চিটিংবাজি করেছে।
এই চিটিংবাজ আবুবকরকে মুসলমানেরা সিদ্দিকি অর্থাৎ সততার প্রতীক বলে থাকে। এটাও ইসলামের একটা বড় গুণ। কাফেরদের মিথ্যা বলে ঠকানোকে ইসলামে কখনোই মিথ্যা কিম্বা প্রতারণা বলে ধরা হয়না। বরং ইসলামের সুবিধা করে দিতে কাফেরদের সাথে যে যত বেশি মিথ্যাচার আর প্রতারণা করতে পারে তাকে ততই সম্মান দেওয়া হয়।
কিন্তু এইটুকুতে মহম্মদের মন খুশি ছিলনা। আব্রাহামিক পয়গম্বরদের কাহিনী শুনে শুনে তার পুরো আরব জাতির উপর রাজত্বের শখ হয়েছিল। কিন্তু মহম্মদের পিছনে সাহায্য দেবার লোক হিসাবে আর খাদিজা নেই, চাচা আবুতালেব নেই। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর সেখানেও খুব একটা পয়সাওয়ালা লোকের সাহায্য নেই। এই অবস্থায় যুদ্ধের পরিকল্পনা করতে ভালরকম ঝুঁকি ছিল। ভরসা বলতে ছিল একেবারে শুরু থেকে মহম্মদের সাথী এবং সমস্ত চিটিংবাজি জানা আবুবকর। যুদ্ধে ভাল ফল না হলে আবুবকর যদি মহম্মদকে ছেড়ে নিজ ধর্মে ফিরে যেত তবে বাকি মুসলমানদেরও আর ধরে রাখা যেত না। তাই বড় কাজে নামার আগেই একমাত্র ভরসা আবুবকরকে শক্ত বাঁধনে বাঁধার খুবই দরকার ছিল। ধর্মের ভাই বন্ধন দিয়ে সে কাজ হবার ছিলনা। তাই আয়েশায় সাথে মহম্মদের বিয়ে হয়ে গেল, তার বিনিময়ে আবুবকরকে মহম্মদের রাজত্বের উত্তরাধিকারী করার চুক্তি হল। দুই মাফিয়ার আত্মীয়তা খুবই চেনা ছক, সিনেমায় এমন নিয়মিত হয়।
Leave a Reply