লিখেছেন ক্যাটম্যান
আল-কুরআনে ‘আসর’ নামে একটি সূরা আছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মতোই বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির পূর্বাভাস দেয়া আছে সূরাটিতে। বর্তমান বিশ্বে আই এস (প্রাক্তন আই এস আই এস), আল-কায়েদা, বোকো হারাম, আল-শাবাব, তালেবান, হামাস, হিজবুল্লাহ ইত্যাদি বর্বর ঈমানদার মুসলিম জঙ্গি গোষ্ঠীর বর্বরতার শিকার হয়ে যে সব নিরীহ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে সূরা আসরে। তবে সূরা আসরের বিশ্লেষণের পূর্বে সূরা বাকারার ৩০ নম্বর আয়াতের বিশ্লেষণ অতি জরুরি। আল-কুরআনে সূরা বাকারার ৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদের বলিলেন, ‘ আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করিতেছি’, তাহারা বলিল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাহাকেও সৃষ্টি করিবেন, যে অশান্তি ঘটাইবে ও রক্তপাত করিবে ? আমরাই তো আপনার সপ্রশংস স্তুতিগান ও পবিত্রতা ঘোষণা করি। তিনি বলিলেন, ‘ নিশ্চয়ই আমি যাহা জানি তাহা তোমরা জান না।’
ওপরোক্ত আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি, আল্লাহ পৃথিবীতে তার দালাল বা প্রতিনিধি প্রেরণ করবেন এই মর্মে একটি পরিকল্পনা ফেরেস্তাদের নিকট প্রকাশ করেছিলেন আদম সৃষ্টির পূর্বে। পৃথিবীতে আল্লাহর দালাল প্রেরণের অসৎ উদ্দেশ্য টের পেয়ে ফেরেস্তারা তত্ক্ষণাৎ উক্ত পরিকল্পনায় ভেটো প্রদান করে বলে; “আল্লাহ আপনার প্রেরিতব্য দালালেরা পৃথিবীতে দাঙ্গা- হাঙ্গামা ও অশান্তি সৃষ্টি করবে।” অর্থাৎ তারা পৃথিবীতে গিয়ে আল-কায়েদা, বোকো হারাম, আল-শাবাব, হিজবুল্লাহ, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি , হামাস, আই এস (প্রাক্তন আই এস আই এস) ইত্যাদি জঙ্গি গোষ্ঠী সৃষ্টি করে নিরীহ মানুষের উপরে অত্যাচার, নির্যাতন চালাবে। তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে পৃথিবীবাসীর এত বড় ক্ষতি করবেন না প্রভু। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আল্লাহর নিকট নিরীহ মানুষের চেয়ে হিংস্র দালাল-উল্লাহগণ বেশি প্রিয়। তাই আল্লাহর অসৎ উদ্দেশ্যের কাছে ফেরেস্তাদের সৎ উদ্দেশ্য পরাভূত হয়। আল্লাহ ফেরেস্তাদের ধমক দিয়ে তাঁর অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বিরোধিতা করতে না করেন। আল্লাহ ফেরেস্তাদের উদ্দেশ্যে কটাক্ষ করে বলেন, “আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না।” অর্থাৎ আল্লাহর অসৎ উদ্দেশ্য ফেরেস্তাগণ তখনও পুরোপুরি জানতো না।
আল্লাহ তখন ফেরেস্তাদের নিকট নিজের কুমতলব প্রকাশ না করলেও সূরা আসরে নিজের কুমতলবের পূর্বাভাস দিয়েছেন। সূরা আসরে আল্লাহ বলেছেন:
“শপথ বিকালের। নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে। তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করছে , আর পরস্পরকে সত্য অবলম্বনের জন্য মন্ত্রণা দিচ্ছে, এবং পরস্পরকে অধ্যবসায় অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছে।”
উক্ত সুরার মূল শিক্ষা এই যে, আই এস ( প্রাক্তন আই এস আই এস ), তালেবান, আল-কায়েদা, হামাস, হিজবুল্লাহ, আল-শাবাব, বোকো হারামের মতো অসভ্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনে বর্বর ঈমানের অধিকারী যত সদস্য রয়েছে, তারা ছাড়া দুনিয়ার সমস্ত নিরীহ মানুষ নিশ্চয়ই ক্ষতি ও বিপদের মধ্যে রয়েছে। যারা সমস্ত নিরীহ জনগোষ্ঠীকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে অসভ্য ইসলামের অগ্নিকূন্ডে নিক্ষেপ করতে চায়, অসহায় নারীদেরকে ধর্ষণ করতে চায়, নারী ও শিশুদেরকে দাস-দাসীতে পরিণত করতে চায়; আল্লাহর নিকট ওই সকল বর্বর ঈমানদার মুসলমানগণ আল্লাহর দালাল ওরফে দালাল-উল্লাহ বলে বিবেচিত।
আল্লাহ নিজের মহত কুমতলব বাস্তবায়নের জন্য ওই সকল বর্বর দালাল-উল্লাহকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। পৃথিবীতে তারা আল্লাহর নামে নিরীহ মানুষ জবাই করছে। আল্লাহর নামের মর্যাদা বৃদ্ধিকল্পে অসহায় নারীদের ইসলামি কায়দায় ধর্ষণ করছে। শিশুদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করছে, যেন জান্নাতে গিয়ে তারা গেলমানের চাকরি পায়। সূরা আসরে বর্ণিত আল্লাহর স্বীকৃত অধ্যবসায় হলো নিরীহ ইয়াজিদি ও খ্রিষ্টানদেরকে হত্যা করা। আল্লাহর প্রাগৈতিহাসিক কুপরিকল্পনা অনুযায়ী বর্বর দালাল-উল্লাহগণ এমন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে চলেছে।
সূরা আসরে ওই সকল দালাল-উল্লাহকেই আল্লাহ বিপদমুক্ত ঘোষণা করেছেন। আর যারা আল্লাহর প্রেরিত বর্বর দালাল-উল্লাহগণের বিরোধিতা করছে, তাদের হীন কর্মে অসহযোগিতা প্রকাশ করছে, তারা নিঃসন্দেহে ক্ষতি ও বিপদের মধ্যে আছে; আল্লাহ এই মর্মে তাদেরকে হুমকি প্রদান করেছেন। আল্লাহর বিবেচনায় দালাল-উল্লাহ ব্যতীত সকল মানুষ ক্ষতি ও বিপদের মধ্যে আছে। কারণ দালাল-উল্লাহরা মানুষ পদবাচ্য নয়; তারা শুধুমাত্র আল্লাহর প্রিয় দালাল। দালাল-উল্লাহদের নিরাপদ রাখাই আল্লাহর প্রধানতম কর্তব্য।
তাই দালাল-উল্লাহর প্রভু আল্লাহ কখনও মানুষের প্রভু হতে পারেন না। নিরীহ মানুষের দুঃখ-কষ্টে আল্লাহর কিছু যায় আসে না বিধায় সূরা আসরে আল্লাহ দালাল-উল্লাহর জয়গান গেয়েছেন, মানুষের নয়। আর মানুষের বিরুদ্ধে আল্লাহর কৃত ষড়যন্ত্র নির্ণয়ে ফেরেস্তারা যে শতভাগ সফল হয়েছিল, সূরা আসর তার উত্তম প্রমাণ। কিন্তু নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আল-কুরআনে থাকা সত্ত্বেও জালেম আলেম সমাজ এতদিনেও তা কেন আবিষ্কার করলো না, তা এক বিরাট রহস্য বটে!
Leave a Reply