লিখেছেন দাঁড়িপাল্লা ধমাধম
প্রধানমন্ত্রীর পূর্বপুরুষেরা ধর্মপ্রচার করতে বাংলাদেশে আইছিল, এইটা নতুন কিছু না। ইরেকশন থুক্কু ইলেকশনের আগেও এরকম প্রচারণা দেখা গেছিল। রীতিমত চৌদ্দপুরুষের নাম-ধামসহ লিস্ট পর্যন্ত ফেবুতে ফেরি হইতে দেখা গেছে। কয়েকদিন আগে দস্তারের একটা স্ক্রীনশট দিছিলাম, সে দাবী করছিল সে অরজিনালি নবির বংশধর। দুইদিন আগে রাজু নামের আরেকজন কইলো, সে সৈয়দ বংশের পোলা, আর সৈয়দরা সরাসরি নবির বীর্যজাত। নবির ৩০ জন পুরুষের সমান ক্ষমতার কথা শোনা যায়, কিন্তু তার নিজের বীর্য আছিল, এমন কথা কোথাও পাওয়া যায় না। এই দুইজনকে বলছিলাম, তারা কেমনে নবির বংশধর, তার একটা বিস্তারিত বর্ণনা দিতে। নবি-মারিয়ার বিয়ার দাওয়াত খাওয়ার লাইগা অনেকদিন ধইরা অপেক্ষাইতেছি, তেমনি এদের জন্মবৃত্তান্ত নিয়া পোস্টেরও অপেক্ষায়। যাক, এটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ। আসল কথায় ফেরা যাক।
এই দেশে কে কতবড় মুসলমান, সেইটা প্রচার করতে সবাই মরিয়া। প্রধানমন্ত্রী বইলা কথা না, দেশের প্রতিটা মুসলমানকে জিজ্ঞেস করলেও বলবে, তাদের পূর্বপুরুষ সাতশ-আটশ বছর আগে আরব থিকা এই দেশে আইছিল ইসলাম প্রচার করতে। তার মানে এরা কেউই বাঙালি না, এরা জাতিতে আরব। তাইলে বাঙালি কারা?
তো আরব থেকে আসা মুসলমানদের পূর্বপুরুষরা আটশ বছর ধরে এই বঙ্গে ইসলামের প্রচারণা চালাইছে। তারপর এখন ১ আনায় নাইমা গেলেও এই কয়েক দশক আগেও তথ্যে দেখা যায় এদেশে ৬ আনার বেশি লোক হিন্দু ছিল। তাইলে এরাই শুধু বাঙালি?
আবার শুনি, হিন্দুদেরও অনেকে ইসলাম গ্রহণ করছে, তাইলে সেইসব হিন্দুরা এবং হিন্দুদের পূর্বপুরুষরা এই দেশে কই থিকা আইছিল? হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়া গ্রুপের জাতির পিতাও কি ইব্রাহিম? আরকেটু খুইলা কই, রাম-শ্যাম দুইভাই, হিন্দু। শ্যাম ইসলাম গ্রহন কইরা রহিম হইল। এখন এই রহিমের জাতির পিতা কে হবে? আর হিন্দু রয়ে যাওয়া রামের জাতির পিতাই বা কে?
দস্তার টাইপের মুসলমানরা আরো বলে যে, মুসলমানরাই জঙ্গল কাইটা এই বাংলাদেশ বানাইছে, সুলতানী আমলে বাংলা ভাষার জন্ম দিছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা আটশ বছর আগের এই দেশের ইতিহাস বেমালুম চেপে যায়। এদের কাছে বাংলার ইতিহাস শুরুই হয় বখতিয়ারের ঘোড়ার বীর্য থিকা। আর ইয়ে মানে তাইলে আরব থিকা মুসলমানরা এই দেশে আইসা জঙ্গলের গাছপালার কাছে ইসলাম ধর্ম প্রচার করছিল? গাছপালার কাছে ইসলাম প্রচার করা সেইরাম বুদ্ধিমান আরবদের বংশধররাও দেখি সেইরাম বুদ্ধিমান!
মুসলমানরা যখন বলে তাদের পুর্বপুরুষেরা আরব থেকে আসছিল, তখন প্রশ্ন জাগে: তাদের “পূর্বনারীরা” কই থিকা আসছিল? বঙ্গে প্রথম প্রবেশকারী মুসলমানদের মধ্যে যে তিনশজন পীর-আউলিয়ার কথা শোনা যায়, তারা সাথে কইরা নারী নিয়া আসছিল, এমন কথা তো কোথাও শুনি না। বখরিয়ারের সাথেও ঘোড়া ছাড়া আর কোনো প্রাণী ছিল না। তাইলে মুসলমানদের পূর্বনারী কি বঙ্গের সেই গাছপালাগুলা? নাহ, তা কেমনে হয়। তাইলে বাকি থাকে…মানে ভাগ্যের সন্ধানে যাযাবর হইয়া ঘুইরা বেড়ানো আরবরা সাথে গাধা খচ্চর বকরি রাখত। আর বর্তমানেও ঘোড়া-গাধা-খচ্চর-বকরিদের সাথে আরব মুসলমানদের যে পীরিতের সম্পর্ক দেখা যায়, তাতে তাদের বংশধর অর্থাৎ এ দেশের মুসলমানদের পূর্বনারী খুঁজতে আর বেশি বেগ পেতে হয় না, হেঁ হেঁ…।
[আরব পুরুষ মুসলমান + (ঘোড়া, খচ্চর, গাধা, বকরি) = বাংলাদেশী মুসলমান।]
জন্মপরিচয় নিয়া এদেশের আরব মুসলমানরা বরাবরই হীনমন্যতায় ভোগে। আশা করি জন্মপরিচয় নিয়া এখন থেকে তাদের আর কোনো সন্দেহ থাকবে না। আর ব্যাপারটা স্বীকার করার জন্য এদেশের বুদ্ধিমান আরব মুসলমানদেরকে অনেক অনেক উত্তম জাঝা!
Leave a Reply