লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯> পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আদেশে তাঁর অনুসারীরা আবু আফাক নামের ১২০ বছর বয়সী অতি বৃদ্ধ ইহুদি কবি ও কোলের সন্তানকে স্তন্যপান অবস্থায় আসমা বিনতে মারওয়ান নামের পাঁচ সন্তানের এক জননীকে পরিকল্পিতভাবে রাতের অন্ধকারে অমানুষিক নৃশংসতায় কীভাবে হত্যা করেছিলেন, তার বর্ণনা আগের দুটি পর্বে করা হয়েছে।
আদি উৎসের নিবেদিতপ্রাণ ইসলাম বিশ্বাসীদেরই বর্ণনার আলোকে আমরা জেনেছি যে, আসমা বিনতে মারওয়ানকে হত্যা করার পর প্রত্যুষে “খুনি” তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর সাথে একত্রে সকালের নামাজ (ফজর) আদায় করেন ও নবীকে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা পেশ করেন।
বিস্তারিত জানার পর দলপতি মুহাম্মদ তাঁর প্রিয় অনুসারী এই ঘাতকের সাফল্যে অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং তার এই কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে “বসির (চক্ষুস্মান) নামক উপাধি” প্রদানে সম্মানিত করেন।
পৃথিবীর সকল ইসলাম-বিশ্বাসী গভীরভাবে বিশ্বাস করেন যে, স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন অতীব সৎ, বিবেকবান ও মহৎ চরিত্রের অধিকারী। তাঁরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, মুহাম্মদ ছিলেন মানব ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ।
তাঁরা আরও বিশ্বাস করেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এতই উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন যে, “স্বয়ং আল্লাহ” ফেরেশতা জিবরাইল মারফত স্বয়ং মুহাম্মদকে জানিয়েছেন: “মুহাম্মদ অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী; বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত; সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদ দাতা; ‘আরশের মালিকের’ নিকট মর্যাদাশালী, সবার মান্যবর ও বিশ্বাসভাজন; এবং আল্লাহ নিজে মুহাম্মদের প্রতি রহমত প্রেরণ করেন”।
স্বয়ং মুহাম্মদ (অন্য কেহ নয়) নিজ কানে এই সুসংবাদটি শুনেছেন এবং স্বয়ং মুহাম্মদই তা তাঁর অনুসারীদের অবহিত করিয়েছেন (পর্ব-১৯)।
বিশ্বের সকল ইসলাম-বিশ্বাসী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, “স্বয়ং আল্লাহর কাছ থেকে মহান চরিত্রের সনদপত্র (Character Certificate) প্রাপ্তির দাবীদার” কোনো ব্যক্তি নিজ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ বা অনুমোদন কখনোই করতে পারেন না।
কিন্তু মুহাম্মদেরই স্বরচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থ কুরান (পর্ব-১৮) ও আদি বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের প্রাণবন্ত বর্ণনার (সিরাত ও হাদিস) পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনায় আমরা তাঁদের এই বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখতে পাই ।
প্রতারণার আশ্রয়ে রাতের অন্ধকারে কাব বিন আল-আশরাফকে নৃশংসভাবে খুন:
মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ সাল), আল-তাবারী (৮৩৯-৯২৩ সাল), আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), মুহাম্মদ ইবনে সা’দ (৭৮৪-৮৪৫ খৃষ্টাব্দ), ইমাম বুখারী (৮১০-৮৭০ খৃষ্টাব্দ), ইমাম মুসলিম (?৮১৭/৮২১-৮৭৫ খৃষ্টাব্দ) প্রমুখ আদি ও বিশিষ্ট মুসলিম স্কলারদের সবাই এই ঘটনার বিশদ বর্ণনা বিভিন্নভাবে তাঁদের নিজ নিজ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনা: [1] [2]
সেপ্টেম্বর, ৬২৪ সাল
‘বদর যুদ্ধে কুরাইশদের পরাজয়ের পর আল্লাহর নবী আল্লাহর বিজয় ও কুরাইশদের হত্যার খবর মদিনার মুসলমানদের পৌঁছে দেয়ার জন্য যায়েদ বিন হারিথা ও আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা কে মদিনায় পাঠান।
আবদুল্লাহ বিন আল-মুঘিথ বিন আবু বারদা আল জাফারি, আবদুল্লাহ বিন আবু বকর বিন মুহাম্মদ বিন আমর বিন হাজাম, আসিম বিন উমর বিন কাতাদা ও সালিহ বিন আবু উমামা বিন সাহল – প্রত্যেকেই আমাকে [মুহাম্মদ ইবনে ইশাক] নিম্ন বর্ণিত ঘটনার বিভিন্ন অংশের বর্ণনা দিয়েছেন:
কাব বিন আল-আশরাফ ছিলেন বানু নাভান গোত্রের অন্তর্ভুক্ত এক তাইয়ি [গোত্রের লোক] যার মা ছিল বানু আল-নাদির গোত্রের, সে এই খবরটি শোনার পর বলে,
“এটা কি সত্যি? এই দুই লোক (যায়েদ ও আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা) যাদের নাম বলছে মুহাম্মদ কী সত্যিই তাঁদের কে খুন করেছে? এই লোকগুলো আরবের সম্মানিত উচ্চপদস্থ ও সম্ভ্রান্ত; আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মদ সত্যিই এঁদেরকে খুন করে থাকে, তবে তা শুনে বেঁচে থাকার চেয়ে মরণই ভাল ছিল।”
খবরটির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর আল্লাহর শত্রু শহর ছেড়ে মক্কায় আল-মুত্তালিব বিন আবু ওয়াদা বিন দুবাইরা আল-সাহমির কাছে যায়, যার [আল-মুত্তালিব] বিয়ে হয়েছিল আতিখা বিনতে আবু আল-ইস বিন উমাইয়া বিন আবদ সামস বিন আবদ মানাফের সাথে। সে তাকে ভিতরে নেয় ও অতিথি-আপ্যায়ন করে।
সে [কাব বিন আল-আশরাফ] আল্লাহর নবীর কাজের নিন্দা করা শুরু করে ও কবিতা আবৃতির মাধ্যমে বদর যুদ্ধে যাদেরকে খুন করার পর লাশগুলো গর্তে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে।
[তারপর সিরাতে কাব-বিন আশরাফ ও অন্যান্যদের কবিতার উল্লেখ।]
তারপর কাব মদিনায় প্রত্যাবর্তন করে এবং উম্মে আল-ফাদল বিনতে আল-হারিথ নামক এক মহিলা সম্বন্ধে প্রেমের কবিতা লেখে। তারপর সে লেখে এক মুসলমান মহিলাকে নিয়ে প্রেমের কবিতা, যা ছিল অপমানকর।
আল্লাহর নবী বলেন, যা আমাকে আবদুল্লাহ বিন আল-মুঘিত বিন আবু বারদা বলেছেন, “কে আছে যে আমাকে ইবনুল আশরাফ হতে ভারমুক্ত করবে?
বানু আবদ আল-আশাল গোত্রের মুহাম্মদ বিন মাসলামা নামের এক ভাই বলে, “হে আল্লাহর নবী, আমি আপনার হয়ে তার ব্যবস্থা করবো। আমি তাকে খুন করবো।”
তিনি [মুহাম্মদ] বলেন, “পারলে তাই করো।”
তারপর মুহাম্মদ বিন মাসলামা ফিরে আসে এবং তিন দিন পর্যন্ত একান্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ছাড়া কোন কিছু পান ও আহার না করে অপেক্ষা করে। আল্লাহর নবীকে যখন এই খবরটি জানানো হয়, তখন তিনি তাকে তলব করেন এবং জিজ্ঞেস করেন, কেন সে পানাহার ত্যাগ করেছে।
সে জবাবে বলে যে, তিনি তাকে একটা কাজ দিয়েছেন কিন্তু সে জানে না, ঐ কাজটি সে সম্পন্ন করতে পারবে কি না।
আল্লাহর নবী বলেন, “তোমার দায়িত্ব এটাই যে তুমি তা করার চেষ্টা করবে।”
সে বলে, “হে আল্লাহর নবী, আমাদের মিথ্যা কথা বলতে হবে।”
জবাবে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে তুমি মুক্ত, তোমার যা ইচ্ছা তাইই বলতে পার।”
অবিলম্বে সে [মুহাম্মদ বিন মাসলামা], বানু আল-আশাল গোত্রের সিলকান বিন সালাম বিন ওয়াকাশ যার নাম আবু নায়লা ও যে ছিল কাবেরই পালিত ভাই, আববাদ বিন বিশর বিন ওয়াকাশ, বানু আশাল গোত্রের আল-হারিথ বিন আউস বিন মুয়াদ ও বানু হারিথ গোত্রের আবস বিন যাবর একত্রে ষড়যন্ত্র করে। তারা আল্লাহর শত্রু কাব বিন আশরাফের কাছে আসার আগে সিলকানকে তার কাছে পাঠায়।
সে [সিলকান] তার সাথে কিছু সময় গল্প করে এবং তারা একে অপরের উদ্দেশ্যে কবিতা আবৃতি করে, কারণ সিলকান কবিতা পছন্দ করতো।
তারপর সে বলে, “এই ইবনে আশরাফ, আমি তোমার কাছে একটা বিষয় নিয়ে এসেছি যা তোমাকে বলতে চাই এবং আমি আশা করি তুমি বিষয়টি গোপন রাখবে।”
সে [কাব] জবাবে বলে, “ঠিক আছে।”
সে [সিলকান] বলতে থাকে, “এই লোকটি [মুহাম্মদ] এসে আমাদের কঠিন দুর্ভোগে ফেলেছে। যার প্ররোচনায় আরবদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা একযোগে আমাদের বিরুদ্ধে। আমাদের চলার পথ হয়েছে দুর্গম, যার ফলে আমরা ও আমাদের পরিবার সদস্যরা হচ্ছি চাহিদা বঞ্চিত এবং কঠিন মর্মপীড়াগ্রস্ত।
কাব জবাবে বলে, “এই ইবনে সালামা [সিলকান], আল্লাহর কসম, অবস্থা যে এমনই ঘটবে, এজন্যেই তো আমি তোমাকে সাবধান করে আসছি।”
সিলকান তাকে বলে, “আমি চাই যে, আমাদের কাছে তুমি খাদ্যশস্য বিক্রি করবে, বিনিময়ে আমরা তোমাকে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেব। তুমি উদারতার সাথে এই কারবারটি করো।”
জবাবে সে বলে, “এ কাজের বিনিময়ে তুমি কি তোমার ছেলেদের আমাকে দেবে?” [3]
সে [সিলকান] বলে, “তুমি আমাদের অসম্মান করতে চাও। আমার কিছু বন্ধু আছে, যারা আমার মতে রাজী। আমি তাদেরকে তোমার কাছে নিয়ে আসবো, যাতে তুমি তাদের কাছেও বিক্রি করতে পারো এবং বিনিময়ে আমরা তোমাকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দেবো।”
সিলকানের উদ্দেশ্য ছিল এই যে, তাদেরকে আনার পর সে [কাব] যেন তাদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র দেখে হুশিয়ার না হয়ে যায়।
জবাবে কাব বলে, “[খাদ্য শস্যের] বিনিময়ে অস্ত্রশস্ত্র প্রস্তাবটি ভাল।”
অবিলম্বে সিলকান তার সহচরদের কাছে ফিরে আসে, কী ঘটেছে তা তাদের কে বলে এবং তাদেরকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসার হুকুম করে। তারপর তারা প্রস্থান করে এবং পুনরায় মিলিত হয়ে আল্লাহর নবীর সাথে সাক্ষাৎ করে।
ইবনে আব্বাস হইতে > ইকরিমা হইতে > থাউর বিন যায়েদ আমাকে [মুহাম্মদ ইবনে ইশাক] বলেছেন যে,
আল্লাহর নবী তাদের সাথে বাকি উল ঘারকাব পর্যন্ত হেঁটে আসেন।
তারপর তিনি তাদের কে ছেড়ে যান এই বলে, “আল্লাহর নামে যাত্রা করো; হে আল্লাহ, তুমি তাদের সাহায্য করো।“
এরূপ বলার পর তিনি তাঁর বাসায় প্রত্যাবর্তন করেন।
সেটা ছিল চাঁদনী রাত। তারা তার [কাবের] দুর্গে গিয়ে পৌঁছে এবং আবু নায়লা তাকে ডাকতে থাকে।
সে [কাব] অল্প কিছুদিন আগে বিয়ে করেছে। সে বিছানার চাদরের ওপর লাফ দিয়ে উঠে পড়ে; তার স্ত্রী তাকে ধরে বলে, “তুমি প্রকাশ্য বৈরিতার মধ্যে আছো, যারা বৈরিতার মধ্যে আছে, তারা এ সময় বাহিরে যায় না।”
জবাবে সে বলে, “এ হচ্ছে আবু নায়লা। সে যদি জানতো যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, তাহলে সে আমাকে ডেকে ঘুম থেকে জাগাত না”।
জবাবে তার স্ত্রী বলে, “ঈশ্বরের দোহাই, আমি তার কণ্ঠস্বরে অশুভ লক্ষণ টের পাচ্ছি।”
কাব জবাবে বলে, “যদি তার ডাক ছুরিকাঘাত করার জন্যেও হয় তথাপি একজন সাহসী লোকের অবশ্যই উচিত তার জবাব দেয়া।”
অতঃপর সে নিচে যায় এবং তাদের সাথে কিছু সময় কথা বলে, তারা তার সাথে কথোপকথন করতে থাকে।
তারপর আবু নায়লা বলে, “তুমি কি আমাদের সাথে সি’ব আল-আযুজ পর্যন্ত হাঁটতে চাও যাতে আমরা তোমার সাথে অবশিষ্ট রাত গল্প করতে পারি?”
“যদি তুমি চাও”, জবাবে সে বলে। অতঃপর তারা একত্রে হাঁটতে থাকে।
কিছু সময় পরে আবু নায়লা তার হাত দিয়ে কাবের মাথার চুল চেপে ধরে। তারপর সে তার ঐ হাতের গন্ধ শুঁকে বলে, “আমি এর চেয়ে বেশী সুন্দর গন্ধ কখনো শুঁকি নাই।”
তারা হাঁটতে হাঁটতে আরও দূরে যায় এবং সে [আবু নায়লা] আবারও এই কাজটি করে, যাতে কাব তার দুরভিসন্ধি অনুমান করতে না পারে।
তারপর কিছু সময় পরে সে এই কাজটি তৃতীয় বারের মত করে এবং চিৎকার করে বলে, “আক্রমণ করো আল্লাহর শত্রুকে।”
অতঃপর তারা তাকে আক্রমণ করে, তাদের তলোয়ার ঝনঝন শব্দে তার ওপর আঘাত হানে কিন্তু তাদের সেই তলোয়ারে কোন কাজ হয় না।
মুহাম্মদ বিন মাসলামা বলে,
“আমি যখন দেখেছি যে, আমাদের তলোয়ারগুলো কোন কাজের নয় তখন আমার ছুরির কথা মনে পড়েছিল, আমি তা নিয়ে এসেছি।
এদিকে আল্লাহর শত্রু এত জোরে জোরে চিৎকার করে যে, আমাদের আশে পাশের প্রত্যেকটি দুর্গের আলো জ্বলা দেখা যায়।
আমি ছুরিটি তার শরীরের নীচের অংশে ঢুকিয়ে দিই, তারপর তা ঘুরিয়ে নীচের দিকে টেনে আনি যতক্ষণ না তা তার যৌনাঙ্গ পর্যন্ত পৌঁছে এবং আল্লাহর শত্রু মাটিতে পরে যায়।
আল-হারিথ তারা মাথা কিংবা পায়ে আঘাত পেয়েছিল, আমাদের তলোয়ারের একটি তাকে আঘাত করেছিল।
আমরা ফিরে আসি; বানু উমাইয়া বিন যায়েদ ও তারপর বানু কুরাইজা ও তারপর বুয়াথ অতিক্রম করি এবং তারপর আল-উরায়িদের হাররা গিয়ে থামি। [4]
আমাদের বন্ধু আল-হারিথ তার রক্তপাতের কারণে পেছনে পড়ে গিয়েছিল, তাই সে আমাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত কিছু সময় আমরা তার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। আমরা তাকে বহন করে নিয়ে যখন আল্লাহর নবীর কাছে আসি, তখন রাত্রির শেষ।
আমরা তাঁকে অভিবাদন জানেই, তখন তিনি নামাজের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন।
তিনি আমাদের কাছে বাহিরে আসেন, আমরা তাঁকে জানেই যে, আমরা আল্লাহর শত্রুকে খুন করেছি। তিনি আমাদের বন্ধুর ঘায়ের ওপর থুতু নিক্ষেপ করেন এবং সে [আল-হারিথ] ও আমরা উভয়েই আমাদের পরিবারের কাছে ফিরে আসি।
আল্লাহর শত্রুর উপর আমাদের এই আক্রমণ ইহুদীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে এবং মদিনায় এমন কোন ইহুদি ছিল না যে সে মৃত্যু ভয়ে ভীত হয় নাই।”’ [5][6]7][8]
আল-তাবারীর (৮৩৯-৯২৩ সাল) অতিরিক্ত বর্ণনা:
‘আল-ওয়াকিদি নিশ্চিত করেছেন যে, তারা ইবনে আল-আশরাফের কাটা মুণ্ডুটি আল্লাহর নবীর কাছে নিয়ে আসে।‘ [9]
মুহাম্মদ ইবনে সা’দের (৭৮৪-৮৪৫ সাল) অতিরিক্ত বর্ণনা:
‘তারপর তারা তার মুণ্ডুটি কেটে নেয় এবং তা তাদের সাথে নিয়ে আসে —-তারা সেই কাটা মুণ্ডুটি তাঁর [মুহাম্মদ] সামনে নিক্ষেপ করে। তিনি (আল্লাহর নবী) তাকে খুন করার জন্য আল্লাহর প্রশংসা আদায় করেন।’ [10]
ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। – অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ – লেখক।]
The narratives of Muhammad Ibne Ishaq: [1] [2]
‘After the Quraysh defeat at Badr the apostle had sent Zayd b Haritha to the lower quarter and Abdullah b Rawaha to the upper Quarter to tell the Muslims of Medina og God’s victory and of the polytheists who had been killed. Abdullah b al-Mughith b Abu Barda al-Zafari and Abdullah b Abu Bakr b Muhammad b Amr b Hazam and Asim b Umar b Qatada and Salih b Abu Umama b Sahl each gave me part of the following story:
Ka’b b al-Ashraf who was one of the Tayyi of the subsection B. Nabhan whose mother was from the B. al-Nadir, when he heard the news said,
“Is this true? Did Muhammad actually kill these whom these two men mention? (i..e. Zayd and Abdullah b Rawaha). These are the nobles of the Arabs and kingly men; by God, if Muhammad has slain these people it were better to be dead than alive.”
When the enemy of God became certain that the news was true he left the town and went to Mecca to stay with al-Muttalib b Abu Wada’a b Dubayra al-Sahmi who was married to `Atika d Abul al-Is b Umaayya b Abdu Shams b Abdu Manaf. She took him in and entertained him hospitably.
He began to inveigh against the apostle and to recite verses in which he bewailed the Quraysh who were thrown into the pit after having been slain at Badr.
[The Sirat now lists some of the poems made up by Ka`b and others. The narrative continues:]
Then Ka’b returned to Medina and composed amatory verses about Umm al-Fadl d. al-Harith. Then he composed amatory verses of an insulting nature about the Muslim women.
The apostle said – according to what Abdullah b al-Mughith b Abu Burda told me, “Who will rid me of Ibnu’l-Ashraf?”
Muhammad b Maslama, brother of the B. abd al-Ashal said, “I will deal with him for you, O apostle of God, I will kill him.”
He said, “Do so if you can.”
So Muhammad b Maslama returned and waited for three days without food or drink, apart from what was absolutely necessary. When the apostle was told of this he summoned him and asked him why he had given up eating and drinking. He replied that he had given him an undertaking and he did not know whether he could fulfil it.
The apostle said, “All that is incumbent upon you is that you should try.”
He said, “O apostle of God, we shall have to tell lies.”
He answered, “Say what you like, for you are free in the matter.”
Thereupon he and Silkan b Salam b Waqsh who was Abu Naila one of the B. Abd al-Ashal, foster brother of Ka’b and Abbad b Bishr b Waqsh and al-Harith b Aus b Muadh of the B. abd al-Ashal and Abu `Abs b. Jabr of the B. Haritha conspired together and sent Silkan to the enemy of God, Ka`b b Ashraf, before they came to him.
He talked to him some time and they recited poetry one to the other, for Silkan was fond of poetry. Then he said, “O Ibn Ashraf, I have come to you about a matter which I want to tell you of and wish you to keep secret.”
“Very well”, he replied.
He went on, “The coming of this man is a great trial to us. It has provoked the hostility of the Arabs, and they are all in league against us. The roads have become impassable so that our families are in want and privation, and we and our families are in great distress.”
Ka`b answered, “By God, I kept telling you, O Ibn Salama, that the things I warned you of would happen.”
Silkan said to him, “I want you to sell us food and we will give you a pledge of security and you deal generously in the matter.”
He replied, “Will you give me your sons as a pledge?” [3]
He said, “You want to insult us. I have friends who share my opinion and I want to bring them to you so that you many sell to them and act generously, and we will give you enough weapons for a good pledge.”
Silkan’s object was that he should not take alarm at the sight of weapons when they brought them.
Ka`b answered, “Weapons are a good pledge.”
Thereupon Silkan returned to his companions, told them what has happened, and ordered them to take their arms. Then they went away and assembled with him and met the apostle.
Thaur b. Zayd from Ikrima from Ibn Abbas told me:
The apostle walked with them as far as Baqi ul Gharqad.
Then he sent them off, saying, “Go in God’s name; O God help them.”
So saying, he returned to his house.
Now it was a moonlight night and they journeyed on until they came to his castle, and Abu Na’ila called out to him.
He had only recently married and he jumped up in the bedsheet, and his wife took hold of the end of it and said, “You are at war, and those who are at war do not go out at this hour.”
He replied, “It is Abu Na’ila. Had he found me sleeping he would not have woken me.”
She answered, “By God, I can feel evil in his voice.”
Ka’b answered, “Even if the call were for a stab a brave man must answer it.”
So he went down and talked to them for some time, while they conversed with him. Then Abu Na’ila said, “Would you like to walk with us to Shi`b al-`Ajuz, so that we can talk for the rest of the night?”
“If you like”, he answered, so they went off walking together; and after a time Abu Na’ila ran his hand through his hair. Then he smelt his hand, and said, “I have never smelt a scent finer than this.”
They walked on farther and he did the same so that Ka`b suspected no evil.
Then after a space did it for the third time and cried, “Smite the enemy of God!”
So they smote him, and their swords clashed over him with no effect.
Muhammad bin Maslama said,
“I remembered my dagger when I saw that our swords were useless, and I seized it. Meanwhile the enemy of God had made such a noise that every fort around us was showing a light.
I thrust it into the lower part of his body, then I bore down upon it until I reached his genitals, and the enemy of God fell to the ground.
Al-Harith had been hurt, being wounded either in his head or in his foot, one of our swords having stuck him. We went away, passing by the B. Umayya b Zayd and then the B. Qurayza and then Buath until we went up the Harra of al-Urayd. [4]
Our friend al-Harith had lagged behind, weakened by loss of blood, so we waited for him for some time until he came up, following our tracks.
We carried him and brought him to the apostle at the end of the night.
We saluted him as he stood praying, and he came out to us and we told him that we had killed God’s enemy. He spat upon our comrade’s wounds, and both he ad we returned to our families.
Our attack upon God’s enemy cast terror among the Jews, and there was no Jew in Medina who did not fear for his life.”’ [5][6]7][8]
Al-Tabari added:
‘Al-Waqidi asserts that they brought Ibn al-Ashraf’s head to the Messenger of God.’ [9]
Muhammad Ibn Sa’d added:
‘Then they cut his head and took it with them. … They cast his head before him [Muhammad]. He (the prophet) praised Allah on his being slain.–.’[10]
>>> কী নৃশংস প্রাণবন্ত বর্ণনা!
অতি বৃদ্ধ ইহুদি কবি আবু আফাক ও আসমা বিনতে মারওয়ানের মতই কাব বিন আল-আশরাফের অপরাধ এই যে, তিনি মুহাম্মদের সন্ত্রাসী অপকর্মের বিরুদ্ধে নিন্দা ও মৌখিক প্রতিবাদ করেছিলেন।
তাঁর অপরাধ এই যে, মুহাম্মদের ও তার অনুসারীরা অমানুষিক নৃশংসতায় যে সকল মক্কাবাসী কুরাইশকে খুন করেছিলেন এবং খুন করার পর তাঁদের লাশগুলোকে চরম অবমাননায় বদরের নোংরা গর্তে নিক্ষেপ করেছিলেন (পর্ব ৩২-৩৩), তিনি সেই সংক্ষুব্ধ স্বজনহারা কুরাইশ পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা প্রকাশের জন্য মক্কা থেকে মদিনায় গমন করেছিলেন।
তিনি মুহাম্মদ কিংবা তাঁর অনুসারীকে কখনোই কোনো শারীরিক আঘাত করেননি।
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা
[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৩৬৪-৩৬৮
[2] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-88706-344-6 [ISBN 0-88706-345-4 (pbk)], পৃষ্ঠা (Leiden) – ১৩৬৯-১৩৭২
[3] Ibid ইবনে ইশাক পৃষ্ঠা ৭৫২
ইবনে হিসামের নোট: ‘আরেক সংস্করণে বর্ণিত আছে, “বিনিময়ে তুমি কি তোমার স্ত্রীদের আমাকে দেবে?” সে জবাবে বলে, “কী ভাবে আমরা আমাদের স্ত্রীদের তোমাকে দেবো যেখানে তুমি মদিনার একজন অতিশয় কামার্ত ও অতীব সুগন্ধী প্রিয় ব্যক্তি।” সে বলে, “তাহলে, তুমি কী বিনিময়ে তোমার ছেলেদের আমাকে দেবে?”’
[4] ‘হাররা হলো একটা জেলা যেখানে আছে কালো আগ্নেয়গিরিতুল্য পাথর এবং আল-উরায়িদ হলো মদিনার উপত্যকাগুলোর একটি’।
[5] অনুরূপ বর্ণনা: কিতাব আল-তাবাকাত আল-কাবির – লেখক: মুহাম্মদ ইবনে সা’দ (৭৮৪-৮৪৫ খৃষ্টাব্দ), অনুবাদ এস মইনুল হক, প্রকাশক কিতাব ভবন, নয়া দিল্লি, সাল ২০০৯ (3rd Reprint), ISBN 81-7151-127-9(set), ভলুউম ২, পার্ট – ১, পৃষ্ঠা ৩৫-৩৯
[6] অনুরূপ বর্ণনা – “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক: আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২)
ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬, পৃষ্ঠা ১৮৪-১৯৩
[7] অনুরূপ বর্ণনা – সহি বুখারী: ভলুম ৫, বই নং ৫৯, হাদিস নং ৩৬৯
Narrated Jabir bin ‘Abdullah:
Allah’s Apostle said, “Who is willing to kill Ka’b bin Al-Ashraf who has hurt Allah and His Apostle?”
Thereupon Muhammad bin Maslama got up saying, “O Allah’s Apostle! Would you like that I kill him?” The Prophet said, “Yes,”
Muhammad bin Maslama said, “Then allow me to say a (false) thing (i.e. to deceive Kab)”. The Prophet said, “You may say it.—”
[8] অনুরূপ বর্ণনা – সহি মুসলিম: বই নং ১৯, হাদিস নং ৪৪৩৬
It has been narrated on the authority of Jabir that the Messenger of Allah (may peace be upon him) said: Who will kill Ka’b b. Ashraf? He has maligned Allah, the Exalted, and His Messenger.
Muhammad b. Maslama said: Messenger of Allah, do you wish that I should kill him? He said: Yes.
He said: Permit me to talk (to him in the way I deem fit). He said: Talk (as you like). So, Muhammad b. Maslama came to Ka’b and talked to him-”
[9] আল-তাবারীর অতিরিক্ত বর্ণনা:
Ibid তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক – পৃষ্ঠা (Leiden) ১৩৭৪
Ibid আল-ওয়াকিদি পৃষ্ঠা ১৯৭
[10] মুহাম্মদ ইবনে সা’দ এর অতিরিক্ত বর্ণনা:
Ibid কিতাব আল-তাবাকাত আল-কাবির- পৃষ্ঠা ৩৭
Leave a Reply