স্কুলের গণ্ডি না পেরোতে পারলেও মাঠ পর্যায়ে অপারেশন চালাতে গিয়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই যাতায়াত ছিল। তবে যেদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গিয়ে হাজির হলাম, তখন এর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে একবার মনে হয়েছিল- আহা, এখানে যদি পড়তে পারতাম!
এখানেরই কিছু ঘটনা…(স্মৃতি হাতড়িয়ে পাওয়া- তাই টাইমফ্রেম আগে-পরে হতে পারে)
কাজলা, বিনোদপুর, মেহেরচণ্ডী ইত্যাদি চৌদ্দগ্রামের সাথে ভার্সিটির স্টুডেণ্টদের মারামারির কাহিনীটা হয়তো অনেকেই জানা আছে। ভার্সিটির মধ্যে দিয়ে বাইরের লোকজনের যাতায়াতের পথ ছিল। বাইরে কোন এক বখাতে ভার্সিটির এক ছাত্রীকে কটুক্তি করার মধ্যে দিয়েই খুব সম্ভবত এই মারামারির সূত্রপাত। সেই থেকে আশেপাশের গ্রামের লোকজনেরা ভার্সিটির তখনকার প্রভাবশালী ছাত্রলীগ-ছাত্রমৈত্রীর উপর ক্ষেপা। শিবির এই সুযোগে স্থানীয় মানুষদের সাথে ভাব করে অধিকাংশ মেস দখল করে নেয়। শিবিরের একটা গ্রুপকে রাখা হত আশেপাশের মেসগুলোতে। আরেকটা গ্রুপের কাজ হলো হলের সিটগুলো দখল করে রিজার্ভ করে রাখা। জোহা হলের বেশিরভাগগুলাই হয়ে যায় শিবিরের মগজধোলাইয়ের ফসল। নতুন গরীব-মেধাবী পোলাপানগুলা প্রথমেই হলে সিট পায় না। এরা বাধ্য হয়ে মেসে আশ্রয় নেয়, আর তখন শিবির প্রথমে এদের মগজ ধোলাই, তারপর হলের সিটের লোভ দেখিয়ে দলে ভেড়ায়। এছাড়া আরো নানান ভাবে শিবিরের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়। এগুলা নতুন কিছু নয়, ওপেন সিক্রেট–মোটামুটি সবাই জানে।
প্রথম দিকে শিবির নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে একবার ক্যাম্পাসে মিছিল বের করলে পুরা মিছিল ঘেরাও করে খুব সম্ভবত ৭টাকে কোতল করা হয়। প্রতিশোধ নিতে শিবির রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি ডালিমরে খুন করে। আর তখনই ‘একটা দুইটা শিবির ধর, সকাল বিকাল নাস্তা কর’ টাইপের স্লোগান দিতে দিতে (স্লোগানগুলোর জন্ম খুব সম্ভবত রাবিতেই) লতিফ হল থেকে শিবিরের সভাপতিসহ ৩টার গলা কাটা হয়। এসময় যে মামলা হয়েছিল তাতে খুব সম্ভবত তখনকার ছাত্রমৈত্রীর বাদশাকেও আসামী করা হয়েছিল। সে সেসময় রাবির ভিপি। এর দুইটা বোনও পড়ত রাবিতে। বাদশার ভয়তে কেউ তার বোনদের দিকে চোখ তুলে তাকাতে সাহস করত না। বাদশার পরে মুন্না ভিপি হলো। তারপর ৮৬-এ আমলীগের সেই ঐতিহাসিক ভুলটির জন্য সব হিসাব এলোমেলো করে দিয়ে ভিপি হয়ে যায় বিএনপি থেকে রিজভী। [বিএনপির নেতা এবং সমর্থকদের বড় একটা অংশ তৈরী হয় এইকালেই।]
৮৬তেই লীগের ক্ষমতায় আসার কথা। কিন্তু তার আগে সবার চাওয়া- আগে এরশাদকে ফেলতে হবে। কিন্তু লীগ এরশাদের ফাঁদে পা দিয়ে নির্বাচনে যাওয়াতেই সাধারণ ছাত্রসমাজের সমর্থন হারাতে শুরু করে। ছাত্রদল এই সুযোগ নিতে এগিয়ে এলে ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষ। আর তখন কিভাবে যেন একটা গুলি লাগে রিজভির পায়ে। গুলি খেলে আর জেলে গেলেই আমাদের দেশে যেমন একটা সহানুভূতির সৃষ্টি হয়। এই সহানুভূতি আর লীগের প্রতি সাধারণ মানুষের বিরক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইংলিশ ডিপার্টমেণ্টের এই ছোটখাটো ছাত্র রিজভি হয়ে গেল রাবি থেকে বিএনপির প্রথম ভিপি। [কিন্তু সবগুলো হলের ভিপি লীগের আণ্ডারে থাকলেও তাপসী রাবেয়া হলের ভিপি হয়ে যায় পাপিয়া পাণ্ডে! মাত্র ৪টা ভোটের ব্যবধানে।] চারদিকে একটা শোরগোল পড়ে যায়। অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয় স্বয়ং খালেদা জিয়া।
তারপর থেকে রাবিতে শিবিরের পোনাগুলো কিলবিল করতে করতে বাড়তে থাকে। প্রতিশোধর প্রতিটা পাই-পয়সার হিসাব নিতে শিবির পরিকল্পিত ভাবে একের পর এক রগ-কাটতে শুরু করে। উত্থান হয় রগকাটা-শিবির নামের একপাল হায়েনার যারা আজ সারাদেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। রগকাটা কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেতে এরা এখন ককটেল-মারা বোমাবাজি আগুন দেয়া ইত্যাদি নতুন নতুন পদ্ধতিতে বিবর্তিত হচ্ছে।
শুনছি রিজভীরে আটক করা হয়েছে। এইবার হয়তো এরে কায়দা মত থেরাপি দেয়া যাবে না। তবে আশা করি একদিন এই রিজভীর কাছ থেকেও সব পাই-পয়সার হিসাব নেয়া হবে।
Leave a Reply