লিখেছেন গোলাপ
২:৬-৭ – “নিশ্চিতই যারা কাফের হয়েছে তাদেরকে আপনি ভয় প্রদর্শন করুন আর নাই করুন তাতে কিছুই আসে যায় না, তারা ঈমান আনবে না। আল্লাহ তাদের অন্তঃকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।”
>>> মুহাম্মদ তার নবী জীবনের বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুরূপ দাবি করেছেন বহুবার। অল্প কিছু উদাহরণ:
৪:১৫৫ – অতএব, তারা যে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল, তা ছিল তাদেরই অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য এবং অন্যায়ভাবে রসূলগণকে হত্যা করার কারণে এবং তাদের এই উক্তির দরুন যে, আমাদের হৃদয় আচ্ছন্ন| অবশ্য তা নয়, বরং কুফরীর কারণে স্বয়ং আল্লাহ্ তাদের অন্তরের উপর মোহর এঁটে দিয়েছেন| ফলে এরা ঈমান আনে না কিন্তু অতি অল্পসংখ্যক।
৯:৮৭ – তারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছে এবং মোহর এঁটে দেয়া হয়েছে তাদের অন্তরসমূহের উপর। বস্তুতঃ তারা বোঝে না।
৩০:৫৯ – এমনিভাবে আল্লাহ জ্ঞানহীনদের হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন।
৯:৯৩ – অভিযোগের পথ তো তাদের ব্যাপারে রয়েছে, যারা তোমার নিকট অব্যাহতি কামনা করে অথচ তারা সম্পদশালী। যারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থাকতে পেরে আনন্দিত হয়েছে। আর আল্লাহ মোহর এঁটে দিয়েছেন তাদের অন্তরসমূহে। বস্তুতঃ তারা জানতেও পারেনি।
৪৭:১৬ – তাদের মধ্যে কতক আপনার দিকে কান পাতে, অতঃপর যখন আপনার কাছ থেকে বাইরে যায়, তখন যারা শিক্ষিত, তাদেরকে বলেঃ এইমাত্র তিনি কি বললেন? এদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের খেয়াল–খুশীর অনুসরণ করে।
৭:১০০ – তাদের নিকট কি একথা প্রকাশিত হয়নি, যারা উত্তারাধিকার লাভ করেছে। সেখানকার লোকদের ধ্বংসপ্রাপ্ত হবার পর যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তবে তাদেরকে তাদের পাপের দরুন পাকড়াও করে ফেলতাম| বস্তুত: আমি মোহর এঁটে দিয়েছি তাদের অন্তরসমূহের উপর| কাজেই এরা শুনতে পায় না।
৬:২৫-তাদের কেউ কেউ আপনার দিকে কান লাগিয়ে থাকে। আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ রেখে দিয়েছি যাতে একে না বুঝে এবং তাদের কানে বোঝা ভরে দিয়েছি। যদি তারা সব নিদর্শন অবলোকন করে তবুও সেগুলো বিশ্বাস করবে না| এমনকি, তারা যখন আপনার কাছে ঝগড়া করতে আসে, তখন কাফেররা বলে: এটি পূর্ববর্তীদের কিচ্ছাকাহিনী বৈ তো নয়।
১৭:৪৫–৪৬ – যখন আপনি কোরআন পাঠ করেন, তখন আমি আপনার মধ্যে ও পরকালে অবিশ্বাসীদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন পর্দা ফেলে দেই। আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ রেখে দেই, যাতে তারা একে উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদের কর্ণকুহরে বোঝা চাপিয়ে দেই। যখন আপনি কোরআনে পালনকর্তার একত্ব আবৃত্তি করেন, তখন ও অনীহাবশতঃ ওরা পৃষ্ট প্রদর্শন করে চলে যায়।
১৮:৫৭ – তার চাইতে অধিক জালেম কে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছি, যেন তা না বোঝে এবং তাদের কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন, তবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না।
১৬:১০৮ – এরাই তারা, আল্লাহ তা’য়ালা এদেরই অন্তর, কর্ণ ও চক্ষুর উপর মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এরাই কান্ড জ্ঞানহীন।
২:১০ – তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহতাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদেরজন্যনির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদেরমিথ্যাচারের দরুন।
৬:১১০ – আমি ঘুরিয়ে দিবতাদের অন্তর ও দৃষ্টিকে, যেমন–তারা এর প্রতি প্রথমবার বিশ্বাস স্থাপন করেনি এবং আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্ত ছেড়ে দিব।
৬:১২৩ – আর এমনিভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে অপরাধীদের জন্য কিছু সর্দার নিয়োগ করেছি–যেন তারা সেখানে চক্রান্ত করে। তাদের সে চক্রান্ত তাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই; কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারে না।
৭:২৭-হে বনী–আদম শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্খায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি–যাতে তাদেরকে লজ্জা স্খান দেখিয়ে দেয়| সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, , যারা বিশ্বাস স্খাপন করে না।
১৩:৩৩ – ওরা প্রত্যেকেই কি মাথার উপর স্ব স্ব কৃতকর্ম নিয়ে দন্ডায়মান নয়? এবং তারা আল্লাহর জন্য অংশীদার সাব্যস্ত করে। বলুন; নাম বল অথবা খবর দাও পৃথিবীর এমন কিছু জিনিস সম্পর্কে যা তিনি জানেন না? অথবা অসার কথাবার্তা বলছ? বরং সুশোভিত করা হয়েছে কাফেরদের জন্যে তাদের প্রতারণাকে এবং তাদেরকে সৎপথ থেকে বাধা দান করা হয়েছে। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথ প্রদর্শক নেই।
১৭:১৬ – যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাপন্ন লোকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করি অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। তখন সে জনগোষ্টীর উপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি তাকে উঠিয়ে আছাড় দেই।
২৭:৪ – যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকান্ডকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতএব, তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়।
৪০:৬৩ – এমনিভাবে তাদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে।
৬৮:৪৫–৪৫ – অতএব, যারা এই কালামকে মিথ্যা বলে, তাদেরকে আমার হাতে ছেড়ে দিন, আমি এমন ধীরে ধীরে তাদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাব যে, তারা জানতে পারবে না। আমি তাদেরকে সময় দেই। নিশ্চয় আমার কৌশল মজবুত।
৪:১৪৩ – এরা দোদুল্যমান অবস্খায় ঝুলন্ত; এদিকেও নয় ওদিকেও নয়। বস্তুত: যাকে আল্লাহ্ গোমরাহ করে দেন, তুমি তাদের জন্য কোন পথই পাবে না কোথাও।
৬৩:১–৪ – মুনাফিকরা আপনার কাছে এসে বলেঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল। আল্লাহ জানেন যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। তারা তাদের শপথসমূহকে ঢালরূপে ব্যবহার করে। অতঃপর তারা আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে। তারা যা করছে, তা খুবই মন্দ।এটা এজন্য যে, তারা বিশ্বাস করার পর পুনরায় কাফের হয়েছে। ফলে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। অতএব তারা বুঝে না। আপনি যখন তাদেরকে দেখেন, তখন তাদের দেহাবয়ব আপনার কাছে প্রীতিকর মনে হয়। আর যদি তারা কথা বলে, তবে আপনি তাদের কথা শুনেন। তারা প্রাচীরে ঠেকানো কাঠসদৃশ্য। প্রত্যেক শোরগোলকে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে। তারাই শত্রু, অতএব তাদের সম্পর্কে সতর্ক হোন। ধ্বংস করুন আল্লাহ তাদেরকে। তারা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছে?
অমুসলিম লেখক/বুদ্ধিজীবীরাও একইভাবে পঙ্গু। শাসক, ক্ষমতাসীন ও নিবেদিতপ্রাণ ইসলাম অনুসারীর পেশীশক্তি এবং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক যাঁতাকলকে অবজ্ঞা করার পরিণতি ভয়াবহ! মুহাম্মদ সময়কালের আবু লাহাব-ক্বাব বিন আশরাফ-আবু রাফি-আসমা বিনতে মারোয়ান (দ্বাদশ পর্ব) থেকে শুরু করে বর্তমানের হুমায়ুন আজাদ-তসলিমা নাসরিন-সালমান রুশদী-আয়ান হারসি আলি ও সাবমিশান (Submission) চলচ্চিত্র নির্মাতা থিও ভ্যান গোগ সহ অসংখ্য উদাহরণকে কি অবজ্ঞা করা যায়? ইসলামী মতবাদের সামান্যতম প্রতিবাদ করে চরম মূল্যের জন্য সদা সন্ত্রস্ত থাকার দুঃসাহস কে দেখাতে পারে? পলিটিকাল কারেক্টনেস (Political correctness) নামের চতুরতার আশ্রয়ে সুবিধাজনক লেখা-বক্তৃতা-বিবৃতি-মন্তব্য-টক শো-এর নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে কে যেতে চায়? এ পরিস্থিতির অবশ্যম্ভাবী ফলাফল “সত্যের সমাধি“! এমত পরিস্থিতিতে সত্যকে আবিষ্কার করতে হলে খুঁড়তে হবেইতিহাসের “কবর”। গত ১৪০০ বছরের হাজার হাজার পৃষ্ঠার পক্ষপাতদুষ্ট লেখা থেকে সত্যকে উদ্ধার অত্যন্ত দুরূহ, গবেষণাধর্মী ও সময়সাপেক্ষ কার্যক্রম। কিন্তু তা কক্ষনোই অর্থহীন নয়। বিশেষ করে যে মানুষের অনুসারীর সংখ্যা ১৪০ কোটি!
সে কারণেই ঘুরে ফিরে এই মৃত মানুষটিকে নিয়ে এতো আলোচনা-সমালোচনা। তার উপর আক্রোশবশতঃ নয়। আমি মনে করি, মৃত মানুষের উপর জীবিতের কোনোরূপ আক্রোশ থাকা উচিত নয়। কারণ তা অর্থহীন! মৃত মানুষের কোনো কর্মক্ষমতা নেই। সে জাগতিক যাবতীয় ভাল-মন্দ ও আলোচনা-সমালোচনার অতীত। মুহাম্মদ-পরবর্তী ইসলামবিশ্বাসী রাষ্ট্রনায়ক ও অনুসারীদের যাবতীয় অমানবিক কর্মকাণ্ড এবং মুহাম্মদের যাবতীয় কাজের বৈধতা দানকারী পণ্ডিতদের কর্মকাণ্ডের জন্য মুহাম্মদকে কি দায়ী করা যায়? দায়ী সেই ব্যক্তিরা, যারা সেই কর্মের সাথে জড়িত। কোনো মৃত ব্যক্তি নয়!
Leave a Reply