ধর্ম আর জাতীয়তা – প্রচন্ডপরিমানে অপছন্দ করি
লিখেছেন : কাজল দাস
দুইটা জিনিসরে আমি প্রচন্ডপরিমানে অপছন্দ করি; তার একটা হইলো ধর্ম আর অন্যটা জাতীয়তা। আমার কাছে এই দুইটা বিষয়ই প্রচন্ডপরিমানে সাম্প্রদায়িকতা উদ্রেকের অন্যতম কারন বলে মনে হয়। যদিও এই দুইটা ছাড়াও আরও অনেক কিছুতেই সাম্প্রদায়িকতা আসতে পারে! সে অন্য আলাপ, আজ সে আলাপ নয়। প্রথাগত ধর্ম বা অর্গানাইজ রিলিজিওন সাম্প্রদায়িকতাকে কিভাবে প্রমোট করে তা নিয়ে আর আলাপ করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কারন, যারা ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্থান-আফগানিস্তানের মত দেশগুলোতে জন্মেছেন বা এই কালচারের মধ্যে বড় হয়েছেন তারা প্রতিটি মানুষই এই বিষয়টাকে প্রত্যক্ষ করেছেন- এটাই আমার ধারনা। যদিও আমার ধারনা কিছু মানুষ বা পরিবারের ক্ষেত্রে ভূলও হতে পারে। সব থেকে মজার ব্যপার হলো যে- এরা যখন দেশের বাইরে কোন সভ্য বা উন্নত দেশে বসবাস করেন, তখনও এরা এদের মগজের মধ্যে এই ধর্ম ও জাতীয়তাকে লালন করেন।
কি? বিশ্বাস হয় না?
তাহলে বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো লক্ষ্য করুন। যদি কোন বাংলাদেশী-ভারতীয়-পাকিস্থানী-আফগানী মানুষ সভ্য কোন দেশ! যেমন ধরুন- ইউরোপের কোন দেশ বা আমেরিকা বা ইংল্যান্ডে কোন সফলতা অর্জন করে তখন এসব দেশের মানুষেরা তা দেখে এবং শুনে জাতীয়তার গর্বে গর্ভবতী হয়ে যান। এইটা এক ধরনের অর্গাজমের সুখ বলতে পারেন! এই অভ্যাসটা এদের পুরনো। যেমন ধরুন সম্প্রতি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন একজন ভারতীয় বংশদ্ভুত- ঋষি সুনক নামের এক ব্যাক্তি। যে আনন্দে অনেকেই আনন্দিত। আবার নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের প্রজেক্টে পৃথিবীর বহু দেশের বহু মানুষ অংশগ্রহণ করেছে; এর মধ্যে জার্মান, কানাডা, ভারত, আমেরিকান….. বিভিন্ন দেশের মানুষ আছে। সেই সুবাদে একটি বাংলাদেশি মেয়েও আছে। যার নাম লামিয়া- যিনি কানাডাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরাশুনা শেষ করেছেন এবং কানাডা থেকে সেই প্রজেক্টে যুক্ত হয়েছেন। এবার দেখুন বাঙ্গালী; মানে বাংলাদেশিরা সে আনন্দে কত আনন্দিত!
আচ্ছা আপনারা কেউ আমাকে বলতে পারবেন, এই ঋষি সুনক যদি ভারতে থাকতো তবে এই অসভ্য রাজনীতিতে এই মানুষটা প্রধানমন্ত্রীতো বহুত দূর কি বাত- একজন কমিশনারও হতে পারতো? আপনি খুব ভালো করেই জানেন- পারতো না।
আবার এই লামিয়া যদি বাংলাদেশে থাকতো? তাকে নিশ্চই শুনতে হতো- তুমি হিজাব কেন পরো না? বোরকা কেন পরো না? মাথার চুল খোলা কেন? তোমার ছেলে বন্ধু কেন? তুমি জিন্স পরো- আচ্ছা নামাজ পড়োতো? রোজা রাখার ফজিলত জানো তো? আরে, এত পইড়া হবেটা কি? মেয়েরা তো কেলাশ ফাইভ পর্যন্ত পড়লেই হয়- স্বামীর সেবা করতে হবে! হালিতে হালিতে বাচ্চা পয়দা করতে হবে!……… আরও কত কি। যা প্রতিদিন আপনারা আপনাদের মেয়েদের করতে বাধ্য করাচ্ছেন। আচ্ছা, আপনারা আমারে বুকে হাত দিয়া বলতে পারবেন- এই লামিয়া দেশে থাকলে সে এই প্রজেক্টে যেতে পারতো? ভাইরে. আপনারা সত্যিই কি চান আপনাদের মেয়েরা ছেলেদের মতই সমান সুযোগ পেয়ে বেড়ে উঠুক? বা আপনার সমাজটাও এমন সভ্য আর আধুনিক হোক? আমি জানি- আপনারা তা চান না।
তাইতো আপনাদের এইসব ডুয়েল ক্যারেক্টার বার-বার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয়। ধর্মের নামে- জাতীয়তার নামে এসব ভন্ডামি আর অসভ্যতা এখন বন্ধ করেন; দোহাই আল্লাহর!
Leave a Reply