লিখেছেন নিলয় নীল
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩
পুরুষ স্ত্রীকে চায় সর্বগুণ সমন্বিত দাসীর রূপে। তারা সংসারে কর্মঠ যন্ত্রবিশেষ হবে, কিন্তু কোন কণ্ঠস্বর থাকবে না। এই বিষয়ে আমরা আলোচনা করবো বৌদ্ধ শাস্ত্রের ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকের জাতক কাহিনীর অন্তর্ভুক্ত সুজাতা জাতক নিয়ে। জাতক কাহিনীর ২৬৯ নম্বর এই জাতকের অতীতবস্তুতে জানা যায় বিশাখার কনিষ্ঠা ভগিনী সুজাতা স্বামীগৃহে যাবার সময় অনেক দাসদাসী সঙ্গে নিয়েছিলো, এ জন্য তার মধ্যে অহংকার ছিলো।
সে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি কাউকেই গ্রাহ্য করতো না, বাড়ির দাসদাসীকে তর্জন গর্জন এমনকি প্রহার পর্যন্ত করতো। একদিন বোধিসত্ত্ব (একাদশ পর্বে বোধিসত্ত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা দ্রষ্টব্য) ঐ বাড়িতে আহার করতে এসে সুজাতার স্বভাব জানতে পেরে তাকে সাত প্রকার ভার্যা সম্পর্কে জ্ঞান দান করে এবং তার নিজের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য বলে।
১. বধকা নারী: এই প্রকারের নারীরা অর্থ অপচয়কারিণী, দুষ্টমতি এবং স্বামীকে ঘৃণা করে।
২. চৌরী নারী: এই প্রকারের নারীরা স্বামীর সম্পত্তি হরণ করে, কিন্তু স্বামীর কষ্টের কথা ভাবে না।
৩. আর্যাপ্রচন্ডা নারী: এরা অলস, পেটুক, দুর্মুখ, নির্দয়, পীড়নকারিণী।
বাকি চার প্রকার নারীই ভদ্র এবং এরাই সমাজের কাম্য। সতিসাধ্বী নারীদের প্রকৃতি সম্পর্কে বোধিসত্ত্বের মতামতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
– সব সময় স্ত্রী পতির যত্ন করবে।
– স্ত্রী তার পতির সেবা শুশ্রুষা করবে।
– স্বামীকে সব সময় সম্মান করবে
– স্ত্রী সর্বদা তার পতির বশবর্তী হয়ে থাকবে।
– লজ্জায় মুখ থেকে কথা বের হবে না।
– নির্যাতনেও কখনোই অসন্তোষ প্রকাশ করবে না।
– স্বামীর ভয়ে সব সময় কম্পমান থাকবে।
এরাই হচ্ছে বোধিসত্ত্বের মতে সতী নারী। যারা সংসারে সুখ নিয়ে আসতে পারে। বোধিসত্ত্বের নীতিগাথাটি নিম্নে দেয়া হলো যার মাধ্যমে সতী নারী সম্পর্কে আপনিও স্পষ্ট ধারণা পাবেন:
চিত্ত যার সর্বদা হিতব্রতপরায়ণ
পতির সম্পত্তি যত্নে করে সংরক্ষণ
যেরূপ যতনে মাতা, পুত্রের লালনে রতা
পতির শুশ্রুষা তথা করে অনুক্ষণ
মাতৃসমা হেন ভার্যা বলে সর্বজন
কনিষ্ঠা ভগিনী যথা জ্যেষ্ঠ সহোদরে
নিয়ত সম্মান করে প্রফুল্ল অন্তরে
সেইরূপ যে গৃহিণী, পতির বশবর্তিনী
লজ্জাবশে যার মুখে না সরে বচন,
সে ভার্যা ভগিনীসমা বলে সর্বজন।
বিলম্বে সখার সঙ্গে ঘটিলে মিলন
সখী যথা সুখী তার নেহারি বদন
হেরিলে পতির মুখ, তেমতি যে পায় সুখ
সুজাতা, সুশীলা, সাধ্বী রমণীরতন
হেন ভার্যা সখীসমা বলে সর্বজন
উৎপীড়নে অসন্তোষ না উপজে যার
দণ্ডভয়ে কম্পমান সদা কলেবর
সুশীলা তিতিক্ষাবতী, ক্রোধহীনা যেন সতী
তুষিতে পতির মন রত অনুক্ষণ,
দাসী সেই ভার্যা ইহা বলে সর্বজন।
বোধিসত্ত্ব উপরের গাথাটি বলে সুজাতাকে প্রশ্ন করলেন, সে কেমন ভার্যা হতে চায়? সুজাতা কিন্তু শেষ পর্যন্ত দাসী হতেই চেয়েছে। প্রতিটি ধর্মের মতো বৌদ্ধধর্মেও সেই দাসী হওয়াই নারীর নিয়তি!
(চলবে)
Leave a Reply