লিখেছেন সেক্যুলার ফ্রাইডে
দৃষ্টি আকর্ষণের হাস্যকর প্রবণতায়, স্বল্পবিদ্যার স্ব-আরোপিত অহংফাঁদে নিজেকে আটকে রেখে, যুক্তিহীন অহমিকায়, সহিংস উগ্রতা প্রদর্শনের অপর নাম হল ধর্মানুভূতি।
ধর্মগ্রন্থে কী আছে, তা বিন্দু মাত্র পাঠ না করে, না বুঝে, কেবলমাত্র কথিত শ্রদ্ধাভাজনদের মুখে উল্টোপাল্টা ব্যাখ্যা আর ভুলভাল ইতিহাসকে ধ্রুব সত্য ধরে নিয়ে, যুক্তিহীনভাবে গড়ে ওঠা অন্ধত্বে ভর করে চলা বিশ্বাস যুক্তি প্রয়োগে আহত হয় বলেই ধর্মান্ধরা ধর্মানুভূতিতে আঘাত পাওয়ার ছিঁচকাঁদুনী নাকিকান্না আর কুযুক্তিতে আশ্রয় নেয় ।
নিজ নিজ মতের শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার ধার্মিকেরা নিজেরা কি যুগ যুগ ধরে একে অন্যকে আক্রমণ করে আসছে না? অবিশ্বাস বা অন্য বিশ্বাসের প্রতি বিদ্বেষবশে নোংরা, অশালীন শব্দ প্রয়োগ, সহিংস আচরণ, ধর্মযুদ্ধের নামে দাঙ্গা, হত্যা, লুটতরাজ, ধর্ষণ, উচ্ছেদসহ সকল অমানবিক কাজ কি তারা করেনি, বা আজও করছে না? ধর্মানুভুতিতে আঘাত পাওয়ার নামে ভিন্নমতকে আক্রমণ করে কি প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরাচ্ছে না? সে অন্যায়গুলো কেন তাদের কাছে অন্যায় হিসেবে বিবেচিত নয়?
আমার ধর্মই সবচেয়ে বড়, আমার ধর্মই শ্রেষ্ঠ আর সকলকে আমারই ছায়াতলে আসতে হবে, নয়তো শাস্তি পেতে হবে; হৃদয় ও মস্তিস্ক বন্ধক দেয়ার এই প্রবণতায় গড়ে ওঠা হিংস্র ধর্ম-অহং যখন ভয়াল নৃশংসতায় মানবাধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করে, তখন তাদের ধর্মানুভূতি আহত হয় না। ধর্মের নামে নিরীহ শিশুকে সন্ত্রাসবাদে দীক্ষিত করে জঙ্গি হামলায় উদ্বুদ্ধ করে তুললে তাদের ধর্মানুভূতি আহত হয় না। ধর্মরক্ষার নামে স্কুলপড়ুয়া বালিকাকে হত্যা প্রচেষ্টায় ধর্মানুভূতি আহত হয় না। ধর্মের ভ্রান্ত ব্যাখ্যায় স্কুলপড়ুয়া বালিকাদের অপহরণ করে যৌনদাসী বানানোর চক্রান্তে তাদের ধর্মানুভূতি আহত হয় না। নিজ উপাসনালয়ে বোমাহামলা করা, খুন করা, পরিকল্পিত সন্ত্রাসে গুঁড়িয়ে দিলেও তাদের ধর্মানুভূতি আহত হয় না। বর্বর আইনের মধ্যদিয়ে অঙ্গচ্ছেদ, শিরশ্ছেদে তাদের ধর্মানুভূতি আহত হয় না, বরং তা প্রশমিত হয়, সেটাতেও তারা যুক্তি খুঁজে পায়।
ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে তাদের ধর্মঅহং, সকল ধর্মচিন্তা আর ধর্মশিক্ষাকে গিলে খেলেও তাদের ধর্মানুভূতি আহত হয় না।
তাদের ধর্মানুভূতি শুধুমাত্র আহত হয় বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় ধর্মবাণীকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে, ভিন্নচিন্তার যৌক্তিক আক্রমণে, জীবনে অতীতঅভিমুখিনতার বিপরীতে প্রগতিমুখিনতার দাবিতে।
ধার্মিকের ধর্মচিন্তা ও ধর্মশিক্ষার তুলনায় ধর্মীয় অহংবোধ যত বেশি বড় হবে, সে তত বেশি হিংস্র হবে সেটাই বাস্তব, এবং প্রয়োজন সে অহং থেকে বেরিয়ে মানুষ হয়ে ওঠা।
কেন ধর্ম নিয়ে বিশ্লেষণমুলক, সমালোচনামুলক কোনো লেখাকে অপরাধ মনে করা হবে? কেন ধর্মানুভূতির মত খেলো একটি বিষয়কে রাষ্ট্র গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে? কেন রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মানুভূতিকে নিজ নিজ স্বার্থে ব্যবহারের সুযোগ পাবে? কেন রাষ্ট্রের সংবিধানে “রাষ্ট্রধর্ম” শব্দ যোগ করে তাকে কলুষিত করা হবে?
এই দ্বৈতনীতি ও দ্বিচারিতার মুখোশ উন্মোচনও প্রয়োজন।
ধর্মানুভূতি আহত হওয়ার নামে দমন-পীড়ন নয়, শান্তির জন্য সমাধানের পথ একটিই; ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধের মধ্য দিয়ে সকলের জন্য সমান আইনি অধিকার নিশ্চিত করা। ধর্ম ও রাষ্ট্রকে বাঁচাতেই ধর্ম ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ প্রয়োজন।
Leave a Reply