লিখেছেন: Juela Zebunnessa Khan
আল্লামা শফির নারীর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যে সারাদেশে তোলপাড়। একজন নারীর গর্ভ নিয়ে তিনি কটূক্তি করেছেন। তিনি তরুন সমাজকে উস্কে দিয়েছেন গার্মেন্টসের অল্প বয়েসি কিশোরী স্রমিকদের দেখে লালা ঝরানোর জন্য। এই বয়েসে নিজের অবদমিত ইচ্ছাকে প্রকাশ করতে না পেরে অন্যদেরকে নারীর প্রতি অসম্মানজনক, অপমানজনক, এমনকি ধর্ষকের মনোভাবের প্রস্তুতিতে প্ররোচিত করছেন। এটা অন্যায়, চরমভাবে অবমাননাকর এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।এভাবে কিছু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত সমাজের সহজ সরল মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করার উদ্দেশ্য কি? এই সকল নোংরা বক্তব্যের জন্য তাকে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে। এধরনের অসভ্য, নিম্ন শ্রেণীর বচন পরিবেশন করে তিনি কিভাবে হেফাজতে ইসলাম নামে একটি ধর্মীয় দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ধর্মের নামে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে এসব বয়ান একটি সমাজকে তথা রাষ্ট্রকে কলুষিত করছে। তার বয়েসের কারনে ভীমরতি হয়েছে এটা বলে ক্ষমা পাওয়া যাবেনা। কারন যেখানে ধর্মের অবমাননা হয়েছে বলে অনলাইনে লেখালেখির কারনে প্রকাশ্যে তরুণদেরকে কুপিয়ে মারা হয়, এমনকি মাসের পর মাস কারাগারে বন্দী জীবন কাটাতে হয়, সেখানে একজন বয়স্ক অভিজ্ঞ লোক ধর্মের নেতৃত্ব দেয়ার নামে তরুন প্রজন্মসহ একটি বিশাল গোষ্ঠীকে নারীবিদ্বেষী বয়ান দিয়ে নারী সমাজের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে লেলিয়ে দিচ্ছেন। এই ধরনের অসভ্য উক্তির জবাব দিতে নারী সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এখনই সময় তা না হলে বড় বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। এদেরকে প্রশ্রয় দেয়ার কারনে আজ তারা প্রকাশ্যে এতটা উদ্ধ্যত এবং নির্লজ্জভাবে নিজেরা স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছে।
আল্লামা শফি আপনাকে বলছি, আপনার চোখ খুলুন, সামনের দিকে আপনার দৃষ্টি প্রসারিত করুন, দেখুন সেখানে আছে আপনার মাতা, স্ত্রী, কন্যা, ভগিনী, নাতনির মত অসংখ্য নারী। আজকের যুগে নারী পুরুষের মাঝে কোন বৈষম্য নেই। সকলে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছে একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়বে বলে। আপনার মত একজন বয়োবৃদ্ধের কাছে এই প্রজন্ম অনেক কিছু প্রত্যাশা করে যা তাদেরকে নতুন পথের সন্ধান দেবে। নেতৃত্বের একটা দায়বদ্ধতা থাকে তা ভুলে যাবেননা।
গত ২১ এপ্রিল দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত নারীনেত্রী এবং সংগঠক ফরিদা আখতারের লেখা “হেফাজতের ১৩ দফা ও ‘নারী নীতি’ নিয়ে বিভ্রান্তি” নিয়ে লেখাটিতে তিনি বলেছিলেন, “হেফাজতে ইসলাম তাদের ১৩ দফায় এতো কথা বলেননি, তারা শুধু বলেছেন নারী নীতি ইসলামবিরোধী” আমার মনে হয় তিনি তার লেখায় তিনি খুব একটা দূরদর্শিতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। আজ নিশ্চয়ই ধারনা করতে পারছেন কেন বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলামের তের দফা দাবির প্রতিবাদে ঢাকায় ব্যতিক্রমী একটি নারী সমাবেশে অংশ নিয়ে নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার নারীরা তাদের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র রোখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে দশটি দাবি তুলে ধরেছিল? নারীর হাজার বছরের সংগ্রামের ইতিহাসকে সমূলে উৎপাটন করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ব্লগাররা যখন তাদের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড অনলাইনের মাধ্যমে প্রকাশ করে জনগণকে সচেতন করে তুলছিল তখনই শুরু হল তাদের মুখ বন্ধ করার ষড়যন্ত্র। সকলেই মিলে আসুন রুখে দাড়াই। একসাথে প্রতিবাদ করি।
Leave a Reply