লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮
রাতের অন্ধকারে বাণিজ্যফেরত নিরীহ কুরাইশ কাফেলার উপর মুহাম্মদ ও তাঁর মক্কাবাসী অনুসারীদের (মুহাজির) পর পর সাতটি ডাকাতি চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর প্রথম সফলতা আসে “নাখলা” নামক স্থানে। সময়টি ছিল জানুয়ারি, ৬২৪ সাল (রজব, হিজরি দ্বিতীয় বর্ষ)। সন্ত্রাসী কায়দায় জোরপূর্বক অন্যের সহায়-সম্পত্তি হস্তগত করে জীবিকাবৃত্তির এই প্রথম আটটি অভিযানের কোনোটিতেই কোনো আদি মদিনাবাসী মুহাম্মদ অনুসারীই (আনসার) অংশ গ্রহণ করেননি। ইসলামের ইতিহাসের সকল আদি বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিক অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় এই “নাখলা অভিযানের” বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন। [1] মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, আল ওয়াকিদি এবং আল তাবারী বর্ণনার সংক্ষিপ্তসার:
লুটপাট ও সন্ত্রাসের উপার্জন ‘গণিমত’!
ইবনে ইশাক < আল জুহরী < ইয়াজিদ বিন রুমান < উরওয়া বিন আল জুবায়ের থেকে উদ্ধৃত:
‘আল্লাহর নবী তাঁকে (আবদুল্লাহ বিন জাহাশ) একটি চিঠি লিখেন। কিন্তু তাঁকে আদেশ করেন যে দুই দিনের রাস্তা অতিক্রম করার আগে যেন তিনি সেই চিঠিটি না পড়েন। [2] দুই দিনের রাস্তা অতিক্রমের পর সেই চিঠিটি যেন তিনি পড়েন এবং চিঠিতে যে আদেশ লিখা আছে তা যেন তিনি পালন করেন। কিন্তু তিনি যেন তাঁর কোন সঙ্গীকেই তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঐ আদেশটি পালনে করতে বাধ্য না করেন। দুই দিনের রাস্তা অতিক্রান্তের পর আবদুল্লাহ বিন জাহাশ সেই চিঠিটি পড়েন। সেই চিঠিতে আদেশ ছিল, “তুমি মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী নাখলা নামক স্থানে যাও। সেখানে কুরাইশদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে জানার চেষ্টা করো যে তারা কি করছে”।—-সাদ বিন আবি ওয়াককাস এবং ওতবা বিন গাজওয়ান তাদের একটি উট হারিয়ে ফেলে। সেই উট টি তে তাঁরা পালাক্রমে আরোহণ করছিলেন। উঠটি খুঁজতে যাবার কারণে তাঁরা পিছিয়ে পরে। আবদুল্লাহ বিন জাহাশ তাঁর অবশিষ্ট সঙ্গীদের নিয়ে নাখলায় পৌঁছেন । নাখলায় পৌঁছে তিনি দেখতে পান যে কিসমিস, চামড়া ও অন্যান্য বাণিজ্য সামগ্রী ভর্তি কুরাইশদের কাফেলার বহর তাদের অতিক্রম করছে। আরোহী কুরাইশদের মধ্যে ছিলেন আমর বিন আল হাদরামি, ওসমান বিন আবদুল্লাহ এবং তার ভাই নওফল বিন আবদুল্লাহ ও আল হাকাম বিন কেইসুন। আরোহী কুরাইশরা তাঁদের কে (মুসলমান) দেখতে পেয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পরেন। কারণ, মুসলমানরা তাদের খুবই নিকটে অবস্থান নিয়েছিল। সে অবস্থায় তাঁরা মস্তক মুণ্ডিত (মাথার চুল কামানো) উককাশা বিন মিহসান কে দেখতে পায়। তাঁকে দেখে তাঁরা স্বস্তি ও নিরাপদ বোধ করেন এবং বলেন, “এরা উমরাহ্ (তীর্থ) যাত্রী পথিক, এদেরকে ভয় পাবার কোন কারণ নাই!”
মুসলমানেরা একে অপরের সাথে কুরাইশদের কাফেলা সম্পর্কে পরামর্শ করে। সেটি ছিল রজব মাসের শেষ দিন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁরা কুরাইশদের কাফেলা আক্রমণ করে যত জনকে পারবেন খুন করে তাদের কাছে যা কিছু আছে তা লুন্ঠন করবেন। ওয়াকিদ বিন আবদুল্লাহ আল তামিমি (মুসলমান) তাঁর ধনুকের তীর নিক্ষেপ করে আমর বিন আল-হাদরামী কে (কুরাইশ) নৃশংস ভাবে করে খুন। ওসমান বিন আবদ-আল্লাহ ও আল হাকাম বিন কেউসুন মুসলমানদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং নওফল বিন আবদ-আল্লাহ প্রাণভয়ে যান পালিয়ে। মুসলমানেরা তাকে ধরতে ব্যর্থ হয়।
আবদুল্লাহ বিন জাহাশ এবং তাঁর সঙ্গীরা কুরাইশদের বাণিজ্যফেরত কাফেলা বহর এবং দুইজন আরোহীকে বন্দী করে মদিনায় আল্লাহর নবীর কাছে প্রত্যাবর্তন করেন। …সেটি ছিল রজব মাসের শেষ দিন। আরবদের পবিত্র মাসের একটি। যে মাসে কোনোরূপ সহিংসতা বিশেষভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহর নবী কুরাইশদের বাণিজ্যফেরত কাফেলার মালামাল এবং দুইজন বন্দীকে হস্তগত করেন। কুরাইশরা তাঁর কাছে বন্দী ওসমান বিন আবদ-আল্লাহ ও আল হাকাম বিন কেউসুনের মুক্তির চেষ্টায় মুক্তিপণ পাঠায়। কিন্তু আল্লাহর নবী বলেন, “আমার দুইজন অনুসারী (সাদ বিন আবি ওয়াককাস ও ওতবা বিন গাজওয়ান) ফিরে আসার আগ পর্যন্ত এই বন্দীদেরকে আমরা মুক্তি পণের বিনিময়েও ছাড়বো না। কারণ, আমাদের আশংকা তোমরা তাদের ক্ষতি সাধন করতে পারো। যদি তোমরা আমাদের ঐ দুইজন সহকারীকে হত্যা করো, তবে আমরাও এই দুইজন বন্দী কে হত্যা করবো।” অত:পর, সাদ ও ওতবা ফিরে আসেন। আল্লাহর নবী বন্দী দুই জনকে মুক্তি পণের বিনিময়ে ছেড়ে দেন।…
আবদ আল্লাহ বিন জাহাশের পরিবারের কিছু লোক বর্ণনা করেন যে তিনি (আবদ আল্লাহ বিন জাহাশ) তাঁর অনুসারীদের বলতেন, “আল্লাহর নবী লুণ্ঠিত সম্পদের (গণিমত) এক-পঞ্চমাংশ নিজের অধিকারে রাখতেন।” এই ব্যবস্থাটি ছিল আল্লাহর নির্দেশিত বাধ্যতামূলক এক-পঞ্চমাংশ লুণ্ঠিত সম্পদ নবীর জন্য গচ্ছিত রাখার হুকুম জারীর পূর্বে (খুমস অথবা খামুস)। তিনি সেই লুণ্ঠিত সম্পদের এক-পঞ্চমাংশ নবীর জন্য সরিয়ে রেখে অবশিষ্ট লুণ্ঠিত সম্পদ তার অনুসারীদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেন।’ [3]
[ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রতিটি ইসলামবিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। (অনুবাদ – লেখক)]
EXPEDITION OF NAKHLAH
According to Ibne Ishaq < Al Zuhri and <Yazid bin Ruman < Urwa bin Al Zubayr: [1]
‘The messenger of God wrote him (Abdullah b Jahsh) a letter, but ordered him not to look at it until he had travelled for two days. [2] Then he was to look at it and to carry out what he was commanded in it but not to compel any of his companions to do anything against their will. When Abdullah bin Jahsh travelled two days, he opened the letter and looked at it, and it said, “When you look at my letter, march until you halt at Nakhla, between Mecca and Taif. Observe Quraysh there, and find out for us what they are doing”. – – – —-Sa’d b Abi Waqqas and Utbah b Ghazwan lost a camel of theirs which they were taking turns to ride. They stayed behind to search for it, but Abdullah bin Jahsh and the rest of his companions went on until he reached Nakhla. A caravan of Quraysh went past him carrying raisins, leather and other goods in which Quraysh traded. Among the Quraysh in it were Amr bin Al-Hadrami, Othman bin Abdullah and his brother Nawfal bin Abdullah, and Al-Hakam bin Kaysun. When they saw (Muslims) they were afraid of them, since they were halted close to them. Then Ukkashah bin Mihsan came into view and he had shaved his head, and when they saw him they felt safe and said, “They are on their way to the umrah (lesser pilgrimage), there is nothing to fear from them”. The Muslims consulted one another concerning them, this being the last day of Rajab. They- – – – -agreed to kill as many of them as they could and to seize what they had with them.
Waqid bin Abdullah Al Tamimi (Muslim) shot an arrow at Amr bin Al Hadrami (Quraysh) and killed him. Uthman bin Abd Allah and Al Hakam bin Kaysan surrendered to Muslims but Nawfal bin Abd Allah escaped and they (Muslims) were unable to catch him.
Then Abdullah bin Jahsh and his companions took the caravan and the two captives back to the messenger of god in Medina. – – – That was the last day of Rajab, a sacred month for the Arabs – prohibited for any hostility. – – – the messenger of God took possession of the caravan and the two prisoners. Quraysh sent to him to ransom Othman bin Abdallah and Al Hakam bin Kaysan, but the messenger of God said, “ We will not release them to you on payment of ransom until our two companions (meaning Sa’d bin Abi Waqqas and Utbah bin Ghazwan) get back, for we are afraid that you may harm them. If you kill them, we will kill your companions”. Sa’d and Utbah came back, however, the messenger of god released the prisoners on payment of ransom. —-
Some of the family of Abd Allah bin Jahsh relates that he said to his companions, “The messenger of God receives a fifth of the booty you have taken”. This was before God made (surrendering) a fifth of booty taken a duty. He set aside a fifth of the booty for the Messenger of God and divided the rest between his companions”. [3]
[2] The reason for the sealed orders was doughtless to prevent enemy agents in Medina from learning the destination and passing on the information to Mecca.
[3] The fifth, Khums or Khumus. In pre-Islamic Arabia it had been customary for a tribal chief to receive a fourth of any booty taken in order to cover what he expended on behalf of the tribe. Quran 8:41 prescribes that Muhammad should receive a fifth and is said to have been revealed after Badr but first applied in the case of the Jewish clan of Qaynuqa.
>>> ইসলামের ইতিহাসের অসংখ্য অতিকথার (Myth) একটি হলো – মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। কিন্তু কুরান, সীরাত ও হাদিসের পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনায় যে বিষয়টি স্পষ্ট, তা হলো – ইসলামের ইতিহাসের অনেক অনেক অতিকথার মতই এই দাবীরও আদৌ কোনো সত্যতা নেই। কেউ তাঁদেরকে তাড়িয়ে দেয়নি। সত্য হলো – স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নিজেই নিজ স্বার্থে তাঁর মক্কাবাসী অনুসারীদের (মুহাজির) বিভিন্ন হুমকি ও প্রলোভনের মাধ্যমে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য করেছিলেন [এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হিজরত তত্ত্বে করা হবে; এ পর্বে শুধু প্রাসঙ্গিক বিষয়েরই আলোচনা করবো]। হিজরতে অনিচ্ছুক অনুসারীদেরকে তিনি পার্থিব ও অপার্থিব সম্পদ ও সমৃদ্ধির অঙ্গীকার দিয়ে মদিনায় হিজরত করতে প্রলুব্ধ করেছিলেন।
মুহাম্মদের ভাষায়:
৪:১০০ – যে কেউ আল্লাহর পথে দেশত্যাগ করে, সে এর বিনিময়ে অনেক স্খান ও সচ্ছলতা প্রাপ্ত হবে| যে কেউ নিজ গৃহ থেকে বের হয় আল্লাহ্ ও রসূলের প্রতি হিজরত করার উদ্দেশে, অত:পর মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তবে তার সওয়াব আল্লাহ্র কাছে অবধারিত হয়ে যায়| আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, করুণাময়|
>>> কিন্তু হিজরত পরবর্তী বাস্তবতা ছিল মুহাম্মদের এই প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ বিপরীত! পূর্ববর্তী নবীদের মোজেজার অনুরূপ কোনো মোজেজা যেমন “মান্না ও সালওয়া’ জাতীয় বেহেশতী খাবার” মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের জন্য আনতে পারেন নাই (পর্ব ২৩-২৫); এমন কি সামান্য রুটি-খেজুর-পানির জন্যও তাঁরা ছিলেন আনসারদের ওপর নির্ভরশীল। মুহাম্মদ ও তাঁর প্রলুব্ধ মুহাজিররা মদিনায় এসে দীর্ঘকাল “সে এর বিনিময়ে অনেক স্থান ও সচ্ছলতা” প্রাপ্তি তো অনেক দূরের বিষয়, বেঁচে থাকার অবলম্বন কোনো ভদ্রোচিত চাকুরিও জোগাড় করতে পারেননি। তাঁদের না ছিল কোনো নিজস্ব আবাস, না ছিল কোনো জীবিকা! হিজরত (সেপ্টেম্বর ২৪, ৬২২ সালে) পরবর্তী বিগত ১৬টি মাস মুহাম্মদ ও মুহাজিররা ছিলেন সম্পূর্ণভাবে মদিনাবাসী আনসারদের স্বল্প আয়ের ওপর নির্ভরশীল। মদিনায় এসে তাঁরা জীবনের এক কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হন। বর্ণিত আছে, মদিনাবাসী মুহাম্মদ-অনুসারীরা (আনসার) মুহাম্মদ ও মুহাজিরদের সেই সংকটময় কঠিন পরিস্থিতিতে সর্বাত্মক সাহায্য ও সহযোগিতা করেছিলেন। যদি সে ইতিহাস ১০০% সত্যও হয়, তথাপি পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনবঞ্চিত পরবাসী জীবনে মাসের পর মাস বেকারত্ব ও পরমুখাপেক্ষী অনিশ্চিত জীবনের অভিজ্ঞতা ও মানসিক অবস্থা যে কোনো সুস্থ, বিবেকবান মানুষের জন্যই কোনো সুখকর অনুভূতি যে নয়, তা যে কোনো মুক্তবুদ্ধির মানুষ অতি সহজেই উপলব্ধি করতে পারেন। এই বেকারত্ব ও পরমুখাপেক্ষী জীবনের অবসান ঘটানোর জন্য মুহাম্মদ ও মুহাজিরদের সামনে শুধু একটি পথই খোলা ছিল; আর তা হলো, “জীবিকার কোনো না কোনো উপায় বের করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা”।
কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব? মুহাম্মদ ও মুহাজিরদের প্রতি আনসারদের হৃদ্যতা যত গভীরই হোক না কেন, কোনো চাকরি (কাজ) দিয়ে তাঁরা মুহাম্মদ ও মুহাজিরদের সাহায্য করবেন, এমন পদমর্যাদার অধিকারী তাঁরা ছিলেন না। মদিনাবাসী ইহুদীদের মত তাঁদের না ছিল কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-দোকানপাট, না ছিল প্রচুর ক্ষেত-খামার জাতীয় সম্পদ, যেখানে তাঁরা এই বহিরাগতদের কাজে লাগিয়ে জীবিকার একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। তাঁদের না ছিল যথেষ্ট আর্থিক সচ্ছলতা, যা দিয়ে তাঁরা করতে পারেন এই বহিরাগত বেকার পরমুখাপেক্ষীদের জীবিকার কোনো একটা উপায় ও পুনর্বাসন।
এমত চরম পরিস্থিতিতে স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জীবিকার উপায়স্বরূপ যে-পথটি বেছে নিয়েছিলেন, তা হলো বিভিন্ন অজুহাতে নৃশংস আগ্রাসী আক্রমণের মাধ্যমে অন্যের সহায় সম্পত্তি লুণ্ঠন! বেকারত্ব ও পরমুখাপেক্ষী জীবনের হাত থেকে মুক্তির আশায় মুহাম্মদ ও তাঁর মক্কাবাসী অনুসারীরা শুরু করলেন রাতের অন্ধকারে ওৎ পেতে অতর্কিত আক্রমণে জোরপূর্বক নিরীহ বাণিজ্যফেরত কাফেলা-আরোহীর সর্বস্ব লুণ্ঠনের পরিকল্পনা। পথিমধ্যে বাণিজ্যফেরত কুরাইশ কাফেলার উপর আক্রমণ করে তাঁদের সর্বস্ব লুণ্ঠন (ডাকাতি) করার চেষ্টা। প্রথম অভিযান-মার্চ, ৬২৩ সাল (পর্ব ২৮)। তারপর সুদীর্ঘ দশটি মাসের একের পর এক ব্যর্থতা! পরিশেষে নাখলায় এই প্রথম সফলতা!
এমত চরম পরিস্থিতিতে স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জীবিকার উপায়স্বরূপ যে-পথটি বেছে নিয়েছিলেন, তা হলো বিভিন্ন অজুহাতে নৃশংস আগ্রাসী আক্রমণের মাধ্যমে অন্যের সহায় সম্পত্তি লুণ্ঠন! বেকারত্ব ও পরমুখাপেক্ষী জীবনের হাত থেকে মুক্তির আশায় মুহাম্মদ ও তাঁর মক্কাবাসী অনুসারীরা শুরু করলেন রাতের অন্ধকারে ওৎ পেতে অতর্কিত আক্রমণে জোরপূর্বক নিরীহ বাণিজ্যফেরত কাফেলা-আরোহীর সর্বস্ব লুণ্ঠনের পরিকল্পনা। পথিমধ্যে বাণিজ্যফেরত কুরাইশ কাফেলার উপর আক্রমণ করে তাঁদের সর্বস্ব লুণ্ঠন (ডাকাতি) করার চেষ্টা। প্রথম অভিযান-মার্চ, ৬২৩ সাল (পর্ব ২৮)। তারপর সুদীর্ঘ দশটি মাসের একের পর এক ব্যর্থতা! পরিশেষে নাখলায় এই প্রথম সফলতা!
রাতের অন্ধকারে নিরীহ বাণিজ্যফেরত কুরাইশ কাফেলা আরোহীদের ওপর পর পর বেশ কয়েকটি ডাকাতি হামলা ব্যর্থ হবার পর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির মুহাম্মদ অনুমান করেছিলেন যে, তাঁর হামলা পরিকল্পনা মদিনাবাসী কোনো গুপ্তচরের মাধ্যমে কোনো না কোনোভাবে আগেভাগেই মক্কাবাসী কুরাইশরা জেনে ফেলছেন। সে কারণেই তিনি তাঁর এই (নাখলা) পরিকল্পনার কোনোকিছুই কাউকে না জানিয়ে ‘সীল-যুক্ত চিঠিটি’আবদুল্লাহ বিন জাহাশকে দিয়েছিলেন; এবং তাকে আদেশ করেছিলেন যে, দুইদিন পরিমাণ পথ পারাবারের আগে যেন সে সেই সীল-যুক্ত চিঠিটি না খোলে। আবদুল্লাহর নেতৃত্বে এই আটজন (মতান্তরে সাতজন) মুহাজীরদের একজন এসেছিল মস্তকমুণ্ডিত অবস্থায়। হজ্ব অথবা ওমরা পালনকারী পথিকের বেশে। মক্কাবাসী কুরাইশরা তাদের বাণিজ্যফেরত কাফেলার উপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের পূর্ববর্তী বিফল ডাকাতি চেষ্টার বিষয়ে সম্যক অবহিত ছিলেন। তাই কাফেলা-আরোহী কুরাইশরা তাদের কাফেলার খুবই নিকটে আবদুল্লাহ বিন জাহাশের দলটিকে অবস্থান নিতে দেখে আক্রমণের আশংকায় ছিলেন শঙ্কিত। কিন্তু তাদের মস্তকমুণ্ডিত লোকটিকে দেখতে পেয়ে তাঁরা স্বস্তি পেয়েছিলেন এই ভেবে যে, এই লোকগুলি কোনো হজ /ওমরা প্রত্যাবর্তনকারী নিরীহ পথিক। কিন্তু তাঁদের সেই ভ্রান্তি দূর হয় অতি অল্প সময়েই। তাঁরা আবদুল্লাহ বিন জাহাশ ও তার দলের অতর্কিত হামলার সম্মুখীন হন। তাঁদের একজনকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়, দুইজনকে করা হয় বন্দী!
আবদুল্লাহ বিন জাহাশের নেতৃত্বে নাখলার এই নিরীহ বাণিজ্য ফেরত কাফেলায় ডাকাতি, একজন নিরপরাধ আরোহীকে খুন এবং দুইজন নিরপরাধ মুক্ত-মানুষকে বন্দীর কদর্য ঘটনাটি যে রাত্রিতে সংঘটিত হয়, তা ছিল রজব মাসের শেষ দিন। আরবরা বংশ-পরম্পরায় যে মাসটিকে পবিত্র জ্ঞানে যাবতীয় হামলা, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও খুন-খারাবী পরিহার করে এসেছেন। তৎকালীন আরবে যিলকদ, যিলহ্জ, মুহররম ও রজব- এই চারটি মাসকে “সম্মানিত মাস” রূপে বিবেচনা করা হতো। [4] এ মাস গুলোতে কোনো প্রকার বিবাদ-ফ্যাসাদ, খুনাখুনি ও যুদ্ধ-বিগ্রহ করাকে আরবরা খুবই গর্হিত বিবেচনা করতেন।
পবিত্র মাসেও স্বঘোষিত আখেরি নবী মুহাম্মদের এহেন নৃশংস আগ্রাসী কর্মকাণ্ডকে যখন আরবরা ধিক্কার দেয়া শুরু করেছিলেন, মুহাম্মদ ঘোষণা দিলেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ও তার দলবলকে অভিযানে পাঠিয়েছেন সত্যি কিন্তু তাদেরকে তিনি কোনো আক্রমণ ও সংঘর্ষের আদেশ দেননি। বোঝাতে চাইলেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ও তার দলবলের উপর মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন। আরবদের এই ধিক্কারের জবাবে মুহাম্মদের এই আচরণে অবাক হবার কোনো কারণ নেই। পর পর বেশ কয়েকটি অনুরূপ হামলাচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এই লুণ্ঠন অভিযানে আবদুল্লাহ ও তার সঙ্গীদেরকে এক চিঠিসহ তিনি দুই দিনের ও বেশী মরুভূমির রাস্তা অতিক্রম করে শুধু কুরাইশদের বাণিজ্য ফেরত কাফেলা ও তার আরোহীদের গতিবিধির পর্যালোচনা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন, “কিন্তু” আরবদের পবিত্র মাসের সম্মান রক্ষার্থে কোনোরূপ আক্রমণ ও সংঘর্ষের আদেশ দেননি, এমন অজুহাত কোন সুস্থ চিন্তার মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। বস্তুত মুহাম্মদ তাঁর প্রচারণায় কখনোই তাঁর মতবাদের বাইরে অন্য কোন ধর্ম, কৃষ্টি ও প্রথাকে সম্মান করেন নাই।
তাঁর প্রচারণার সবচেয়ে প্রাথমিক ও মূল শিক্ষায় হলো, “জগতের একমাত্র সত্য হলো মুহাম্মদ (আল্লাহ) ও তাঁর মতবাদ। বাকি সবই অসত্য এবং/অথবা বিকৃত”। সুতরাং, পৌত্তলিকসহ তৎকালীন সকল আরব বংশ পরম্পরায় যে সকল মাসকে পবিত্র জ্ঞানে সহিংসতা পরিহার করে আসছেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে মুহাম্মদও সহিংসতা পরিহার করতে চেয়েছিলেন, এমনটি ভাবার কোনোই কারণ নেই। কিন্তু সেই মুহূর্তে আরবদের এমনতর দোষারোপ ও নিন্দাকে সরাসরি উপেক্ষা করার মত পরিস্থিতি মুহাম্মদের ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে মুহাম্মদ ছিলেন ধনে-মানে-জনে দুর্বল। মক্কায় ১২-১৩ বছরের চরম ব্যর্থতার পর মদিনায় স্বেচ্ছা-নির্বাসন, তারপর বিগত ষোলটি মাসের বেকার ও পরমুখাপেক্ষী জীবনের চরম অভিজ্ঞতা, এবং তারপর বিগত দশটি মাসের সকল পরিকল্পিত ব্যর্থ ডাকাতি চেষ্টার পর “সর্বপ্রথম সফলতা”। সেই দুর্বল পরিস্থিতিতে আরবদের এমনতর দোষারোপ ও নিন্দার জবাবে তাঁকে বাধ্য হয়েই এই অজুহাতের আশ্রয় নিতে হয়েছিল। উদ্দেশ্য হলো, প্রতিপক্ষকে ধারণা দেয়া যে, তিনিও “পবিত্র মাসকে” সম্মান করেন।
কিন্তু গণিমতের মালের কী হবে? সন্ত্রাস ও হত্যার বিনিময়ে অর্জিত লুণ্ঠন সামগ্রী – সর্বপ্রথম উপার্জন! গণিমতের এই মালকে হালাল করার কি কোনো উপায়ই নেই? বিগত দশটি মাসে একের পরে এক সাতটি ডাকাতিচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর মুহাম্মদ ও মুহাজিরদের “সর্বপ্রথম” সফলতাকে বৈধতা দেয়ার কি কোনো ব্যবস্থাই করা যায় না? কোনো নির্বোধ লোকও কি পারে এত পরিকল্পনা ও আয়োজনের পর “পবিত্র মাসেও নবীর এই সহিংসতা” জাতীয় নিন্দার অভিযোগে বিগত দশটি মাসের চেষ্টার সর্বপ্রথম ফসল হাত ছাড়া করতে? মুহাম্মদ বিন আবেদ-আল্লাহ নির্বোধ ছিলেন না। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান! কিন্তু কীভাবে সম্ভব এই লুণ্ঠনকৃত মালামাল হালাল করা? কীভাবে সম্ভব পবিত্র মাসে একজন নিরীহ আরোহীকে নৃশংসভাবে হত্যা ও দুইজনকে বন্দি করার বৈধতা প্রদান? বিশেষ করে এই পবিত্র মাসে? গত ১৬টি মাসের বেকারত্বের পর আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রাপ্ত “গণিমতের মাল”-কে আরবদের নিন্দা ও অভিযোগের কারণে হাতছাড়া করবেন এমন অবিবেচক মুহাম্মদ ছিলেন না।
এই নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটাতেই তীক্ষ্ণ বুদ্ধির মুহাম্মদ ঘোষণা করলেন:
২:২১৭ – “সম্মানিত মাস সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে যে, তাতে যুদ্ধ করা কেমন? বলে দাও এতে যুদ্ধ করা ভীষণ বড় পাপ| আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে-হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিস্কার করা, আল্লাহর নিকট তার চেয়েও বড় পাপ| আর ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহা পাপ| বস্তুত: তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে যদি সম্ভব হয়| তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে| আর তারাই হলো দোযখবাসী| তাতে তারা তারা চিরকাল বাস করবে”। [5][6]
>>> কী উত্তম ব্যবস্থা! ব্যস, হালাল হয়ে গেল খুন! হালাল হয়ে গেল লুণ্ঠনকৃত উপার্জন সামগ্রী! হালাল হয়ে গেল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ধৃত বন্দীদের মুক্তিপণের উপার্জন! ধৃত বন্দিদের আত্মীয়-স্বজনরা মুক্তিপণের বিনিময়ে মুহাম্মদের কাছ থেকে তাঁদেরকে ফিরিয়ে নেন মক্কায়। স্রষ্টার নামে এমন “অনৈতিক লাভজনক ব্যবসা” ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মে আছে কি?
পাঠক, ওপরোক্ত বর্ণনা আর একটু মনোযোগের সাথে খেয়াল করুন! উক্ত ঘটনার বর্ণনায় আমরা আরও জানতে পারছি যে “কোন রূপ প্রমাণ ছাড়াই” মুহাম্মদ সন্দেহ করেছিলেন যে তাঁরই নির্দেশে নাখলায় ডাকাতি অভিযানে অংশগ্রহণকারী দুইজন অনুসারীকে (সাদ বিন আবি ওয়াককাস এবং ওতবা বিন গাজওয়ান, যারা তাদের হারানো উট খুঁজতে গিয়ে অন্ধকারে পিছিয়ে পড়েছিল) কুরাইশরা বন্দী করেছে। এই নিছক অনুমান ও সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে মুহাম্মদ তৎক্ষণাৎই ঘোষণা করেন যে, যদি মক্কাবাসী কুরাইশরা তাঁর ঐ দুইজন অনুসারীকে হত্যা করে তবে এই নিরীহ ও নিরপরাধ বন্দী দু’জনকে (ওসমান বিন আবদুল্লাহ ও আল হাকাম বিন কাসান) তিনি খুন করবেন। কী চরিত্র ও মানসিকতার মানব সন্তান “শুধু সন্দেহের বশে” নিরীহ দু’জন বন্দীকে ঠাণ্ডা মাথায় নৃশংসভাবে খুন করার আদেশ জারী করতে পারে? শুধু মাত্র সন্দেহের বশে কোনো মানুষকে খুন করার অভিপ্রায়কারী কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে যদি বিবেকবর্জিত নিষ্ঠুর সন্ত্রাসী রূপে আখ্যায়িত না করা হয়, তবে সন্ত্রাসের সংজ্ঞা কী? ফিরতে দেরী হওয়া দু’জন অনুসারীর বিষয়ে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লার সন্দেহ সত্য ছিল না। তাঁর অনুসারীদের কেউই ধরে নিয়ে যায়নি। তাদের ফিরতে দেরী হয়েছিল হারিয়ে যাওয়া উটটি খুঁজতে যাওয়ার কারণে।
পাঠক আসুন, আদি বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের ওপরে বর্ণিত ঘটনা এবং ধৃত দুইজন বন্দীর ব্যাপারে মুহাম্মদের ঐ আদেশটিকে আমরা একটু ভিন্ন আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি। কল্পনা করুন, মুহাম্মদের সন্দেহ ১০০% সত্য ছিল। মুহাম্মদ নিশ্চিত হয়েছেন যে, তাঁর আদেশকৃত (ডাকাতি) কর্মে গিয়ে তাঁর দুইজন অনুসারী কুরাইশদের হাতে ধরা পড়ে শাস্তিভোগ করেছে। মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীর আগ্রাসী অভিযানে আক্রান্ত ক্ষতিগ্রস্ত স্বজনহারা কুরাইশরা তাঁদের এক ব্যক্তিকে খুন, দুই ব্যক্তিকে বন্দী এবং এবং তাঁদের বেঁচে থাকার অবলম্বন জীবিকা সামগ্রী লুণ্ঠনের কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সেই ডাকাত দলে অংশগ্রহণকারী দু’জন ডাকাতকে হাতে-নাতে ধরতে পেরে খুন করেছে। কুরাইশদের সেই কর্মের জন্য কি এই দু’জন বাণিজ্যফেরত কাফেলা আরোহীকে (যারা কোনোভাবেই সেই ঘটনার সাথে জড়িত নয়) অপরাধী সাব্যস্ত করে “হত্যা করা” পৃথিবীর কোনো সভ্য সুস্থ-মস্তিষ্ক মানুষের পক্ষে সম্ভব? কোন চরিত্রের মানুষ নিরপরাধ মানুষকে বন্দী করে নিয়ে এসে ওপরে বর্ণিত অজুহাতে তাদেরকে খুন করার আদেশ জারী করতে পারে? এহেন আদেশ জারীকৃত ব্যক্তিকে কি মানব ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ রূপে আখ্যায়িত করা যায়? নৃশংস কর্মকাণ্ডে অনুপ্রেরণাদায়ী ও অংশগ্রহণকারী এহেন কোনো ব্যক্তি কি হতে পারে সর্বকালের সকল মানুষের একমাত্র অনুকরণীয় চরিত্র?
মুহাম্মদ তাঁর সুদীর্ঘ ১০ বছরের মদিনা জীবনে কমপক্ষে ৬০ টিরও বেশী (মতান্তরে এক শত) সংঘর্ষে জড়িত ছিলেন। গড়ে প্রতি ছয় সপ্তাহে একটি। বিশিষ্ট আদি মুসলিম ঐতিহাসিকদের মতে একমাত্র ওহুদ ও খন্দক ছাড়া আর সবখানেই প্রথম আক্রমণকারী ছিলেন মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ ও তাঁর দুর্ধর্ষ বাহিনী। [7] মুহাম্মদের শক্তি বৃদ্ধির পর অনুরূপ হামলার জন্য শুধু একটা উপলক্ষই যথেষ্ট ছিল! আর তা হলো,
“মুহাম্মদ আল্লাহর রসুল! রসুলের বশ্যতা স্বীকার করে মুসলামনিত্ব বরণ করো! অন্যথায় পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকো!”
কারণ মুহাম্মদের দাবী, “ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহা পাপ (২:২১৭)”| সুতরাং, যারা মুহাম্মদের আদেশ ও নিষেধকে অস্বীকার করে, সমালোচনা করে, কিংবা করে তাঁর আগ্রাসনের প্রতিবাদ ও বিরুদ্ধাচরণ। মুহাম্মদের এই “২:২১৭ ফর্মুলায়” সেই ব্যক্তি অথবা জন গুষ্ঠির অপরাধ নরহত্যার চেয়েও বেশী পাপ। আর সেই পাপীদের যাবতীয় সম্পত্তি লুণ্ঠন করা, তাদেরকে খুন করা, জোরপূর্বক ধরে নিয়ে এসে তাদের আত্মীয়–স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের জন্য বৈধ। অর্থাৎ, মুহাম্মদের বশ্যতা অস্বীকারকারী প্রতিটি মানুষই বিপথগামী ও পথভ্রষ্ট! তারা (আল্লাহ ও) রসুলের শত্রু! আর সেই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই (জিহাদ) করা প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসীর ইমানী দায়িত্ব! মুহাম্মদ কি নৃশংসতায় তাঁর বশ্যতা অস্বীকারকারী ও বিরুদ্ধবাদীদের খুন, জখম ও শায়েস্তা করার ফরমান জারী করেছিলেন, তার বীভৎস বর্ণনা কুরানের পাতায় পাতায় বর্ণিত আছে।
নাখলায় ওয়াকিদ বিন আবদুল্লাহ আল তামিমির হাতে আমর বিন আল হাদরামীর এই খুনটিই হলো ইসলামের ইতিহাসের “সর্বপ্রথম খুনের ঘটনা যা সকল বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকই পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে বর্ণনা করেছেন”। ইসলামের ইতিহাসের এই প্রথম খুনটি সংঘটিত করেছে একজন মুহাম্মদ অনুসারী! কুরাইশরা নয়! [5] এই খুনের পূর্বে মুহাম্মদের মক্কা জীবনে ক্রীতদাস আমর বিন ইয়াসিরের মা সামিয়াকে হত্যার যে গল্পটি ইসলামী পণ্ডিত ও ইসলাম বিশ্বাসীরা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে গত ১৪০০ বছর ধরে প্রচার করে আসছেন তার আদি ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল ও বিতর্কিত। শুধু সর্বপ্রথম খুনই নয়, মুহাম্মদের মক্কা অবস্থানকালীন সময়ের সেই দুর্বল অবস্থায়ও যে ব্যক্তি কুরাইশদের একজনকে শারীরিক আঘাতে “সর্বপ্রথম রক্তাক্ত করেছিল” সেও ছিল একজন মুহাম্মদ অনুসারী (মুসলমান)! কুরাইশরা নয়! সেই আঘাতকারীর নাম, সা’দ বিন আবি-ওয়াককাস।
ইসলামের ইতিহাসে “নাখলা অভিযান” একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কমপক্ষে পাঁচটি কারণে এই অভিযানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
১) মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের প্রথম সফল ডাকাতি অভিযান ও সহিংস যাত্রার গোড়াপত্তন।
২) মুহাম্মদ ও কুরাইশদের মধ্যে পরবর্তী যাবতীয় সহিংস সংঘর্ষের আদি কারণ হলো নাখলায় এই বাণিজ্য কাফেলা ডাকাতি ও সহিংসতা। আর রক্তক্ষয়ী এই সহিংসতার সূত্রপাত করেছিলেন মুহাম্মদ এবং তাঁর আদি মক্কাবাসী অনুসারীরা, কুরাইশরা নয়।
৩) ইসলামের ইতিহাসের সর্বপ্রথম খুনটি হয় এই নাখলায়। আর এই প্রথম খুনটি সংঘটিত করেছিল একজন মুহম্মদ অনুসারী, কুরাইশরা নয়!
৪) শত্রু পক্ষের নিরীহ লোককে জিম্মি করে মুক্তিপণের মাধ্যমে অর্থ-উপার্জনের বৈধতার গোড়াপত্তন।
৫) জোর-পূর্বক অন্যের সহায় সম্পত্তি লুণ্ঠনের মাধ্যমে পার্থিব জীবিকা উপার্জনের ইসলামী বৈধতার গোড়াপত্তন।
গত ১৪০০ বছর যাবত নিবেদিত প্রাণ মুহাম্মদ অনুসারীরা বিভিন্ন কসরতের মাধ্যমে মুহাম্মদ ও তাঁর সহকারীদের যাবতীয় আগ্রাসী ও অমানবিক কর্মকাণ্ডের শুধু বৈধতা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা আক্রান্ত জনগোষ্টিকেই অপরাধী বলে সাব্যস্ত করেছে। মুহাম্মদের মদিনা জীবনের যাবতীয় সন্ত্রাসী কর্ম-কাণ্ডের বৈধতা দিতে তারা মুহাম্মদের মক্কায় অবস্থানকালীন (৬১০-৬২২ সাল) কিছু “গৎবাঁধা ঘটনার” ফিরিস্তি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করেন। আদি মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনার আলোকে সেই গৎবাঁধা ঘটনাগুলোর বিস্তারিত আলোচনা ও বিশ্লেষণ আইয়্যামে জাহিলিয়াত তত্ত্বে করা হবে। সেই ঘটনাগুলোর উদাহরণ টেনে যে সকল ইসলামী পণ্ডিত ও বিশ্বাসী শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবত বিভিন্ন কসরতের মাধ্যমে নিরীহ বাণিজ্যফেরত কুরাইশ কাফেলার ওপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের অতর্কিত হামলা করে সর্বস্ব লুণ্ঠন, তার আরোহীদের খুন অথবা বন্দী করে নিয়ে এসে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার বৈধতা দিয়ে এসেছেন, সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অজ্ঞতার সুযোগে তাদেরকে ইচ্ছামত বিভ্রান্ত করে এসেছেন, তাদেরকে কি কোনো সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ রূপে আখ্যায়িত করা যায়? অবশ্য এ ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো পথই খোলা নাই। কেন নেই তার আলোচনা দশম পর্ব (জ্ঞান তত্ত্ব) করা হয়েছে। ইসলামের মৌলিক শিক্ষা হলো মুহাম্মদের যাবতীয় কাজের বৈধতা দান।
যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) প্রচার করেছেন যে, তাঁর বর্ণিত বাণী বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা (‘আল্লাহ’) হতে প্রাপ্ত এবং তাঁর কর্ম ও শিক্ষা সেই সৃষ্টিকর্তার মনোনীত একমাত্র জীবনবিধান। যে জীবনবিধান পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার (কিয়ামত) পূর্ব পর্যন্ত জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বকালের সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য; এবং তা পালন, প্রচার ও প্রসার করা সকল ইসলাম বিশ্বাসীর অবশ্য কর্তব্য ইমানী দায়িত্ব”। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী মুহাম্মদের মৃত্যুর ১৪০০ বছর পরেও তাঁর এই শিক্ষাকে শুধু মনে-প্রাণে ধারণ, লালন ও পালনই করেন না, তাঁরা মুহাম্মদের এহেন আগ্রাসী অনৈতিক কর্ম ও শিক্ষাকে সর্বকালের সকল মানুষের “একমাত্র জীবন বিধান” রূপে প্রতিষ্ঠিত করার ব্রতে ব্রতী! ইসলাম বিশ্বাসীদের এহেন মানসিকতাই বিশ্বব্যাপী অমুসলিমদের মূল সমস্যা। এমনটি না হলে সপ্তম শতাব্দীর এক আরব বেদুইন কবে কোথায় কেন এবং কতজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে, বন্দি করে তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে বণ্টন করছে, তাঁদের সর্বস্ব লুণ্ঠন করেছে, উন্মুক্ত শক্তি প্রয়োগে তাঁদের ভিটে-মাটি থেকে বিতাড়িত করে তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছে, তা নিয়ে কারুরই কোন উৎকণ্ঠার কারণ ছিল না। সে ক্ষেত্রে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের ঘটানো সেই নৃশংস অমানবিক ঘটনাগুলো হতো শুধুই ‘কেতাবি কচাল (Academic Discussion)’। মৃত মুহাম্মদ কোনো মানুষেরই কোনো সমস্যার কারণ হতে পারেন না! সমস্যা হলো “তাঁর অনুসারীরা”; যারা ১৪০০ বছর আগে মৃত সেই মানুষটির যাবতীয় কর্মকাণ্ডের অনুরূপ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার ব্রতে ব্রতী।
আদি মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণিত এ সকল তথ্যের পর্যালোচনায় যে বিষয়টি আবার ও অত্যন্ত স্পষ্ট তা হলো:
“বিনা উস্কানিতে সাধারণ নিরপরাধ পথচারীদের অতর্কিত আক্রমণকারী, হত্যাকারী, বন্দিকারী ও লুণ্ঠনকারী গোষ্ঠী হলেন মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ও তাঁর অনুসারী!”
(চলবে)
[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি–বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।
পাদটীকা ও তথ্য সূত্র:
[1] নাখলায় প্রথম সফল ডাকাতি
১) “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ২৮৬-২৮৯
২) “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-88706-344-6 [ISBN 0-88706-345-4 (pbk)], পৃষ্ঠা (Leiden) ১২৭৪-১২৭৯
৩) “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক: আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬, পৃষ্ঠা ১৩-১৯
৪) কিতাব আল–তাবাকাত আল–কাবির – লেখক ‘মুহাম্মদ ইবনে সা‘দ (৭৮৪–৮৪৫ খৃষ্টাব্দ)’, অনুবাদ এস মইনুল হক, প্রকাশক কিতাব ভবন, নয়া দিল্লি, সাল ২০০৯(3rd Reprint). ISBN 81-7151-127-9 (set). ভলুউম ২, পার্ট– ১, পৃষ্ঠা ৭-৯
http://muslim-library.blogspot.com/2011/09/tabqaat-ibn-e-saad.html#!/2011/09/tabqaat-ibn-e-saad.html
[2] গালা-যুক্ত গোপন চিঠি ও নির্দেশ নি:সন্দেহে দেয়া হয়েছিল এই কারণে, যেন কোন মদিনা-বাসী গুপ্তচর হামলার স্থান ও পরিকল্পনার বিষয়টি আগেই জেনে গিয়ে তা মক্কাবাসীদের কাছে পৌঁছাতে না পারে।
[3] খুমস অথবা খামুস
প্রাক ইসলামী আরবের প্রথা অনুযায়ী গোত্রীয় প্রধানরা লুণ্ঠিত মালের এক-চতুর্থাংশ হিস্যা গ্রহণ করতো, যার দ্বারা তারা তদের গোত্রের খরচের জোগান দিতো। কুরানের (সুরা আনফাল: ৮:৪১) এর বাধ্যতা মূলক নির্দেশ মোতাবেক মুহাম্মদ লুণ্ঠিত সম্পদের এক-পঞ্চমাংশের অধিকারী। বলা হয়ে থাকে, এই হুকুমটি ঘোষিত হয়েছিল বদর যুদ্ধের পর। কিন্তু তা সর্ব-প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল বনি কেউনুকা গোত্রকে বিতাড়িত করার ঘটনায়।
[4]সম্মানিত মাস
সহি বুখারি: ভলুউম ৪, বই ৫৪, নম্বর ৪১৯
http://www.hadithcollection.com/sahihbukhari/87/4100-sahih-bukhari-volume-004-book-054-hadith-number-419.html
http://www.hadithcollection.com/sahihbukhari/87/4100-sahih-bukhari-volume-004-book-054-hadith-number-419.html
Narrated Abu Bakra: The Prophet said. “(The division of time has turned to its original form which was current when Allah created the Heavens and the Earths. The year is of twelve months, out of which four months are sacred: Three are in succession Dhul-Qa’ da, Dhul-Hijja and Muharram, and (the fourth is) Rajab of (the tribe of) Mudar which comes between Jumadi-ath-Thaniyah and Sha ban.”
[5] Tafsir al-Jalalayn, translated by Feras Hamza
[6]Tafsir Ibne Kathir
Leave a Reply