হে খোদা, তোর এই বিচার আমি মানি না–গ্রামের মানুষের মুখে এককালে হুট-হাট কইরা এই ধরনের তীব্র আর্তনাদ শোনা যেত। খোদা শব্দের ব্যবহার কমে গিয়ে যখন থেকে আল্যা হওয়া শুরু করল, তখন থেকে বেশি শোনা যেতে লাগল–ও আল্যা এ তুই আমার কী সর্বনাশ করলি! এখনো তীব্র বেদনায়, চরম দুঃখে কষ্টে মানুষ যখন চিৎকার করে কাঁদে, তখন খেয়াল করলে এ ধরনের কথা কিছুটা হলেও শোনা যাবে।
বিষয়টা হলো–বিদ্রোহ! খুব শান্তশিষ্ট, নিরীহ, সৎ মানুষগুলা কর্মে ফাঁকি না দিয়েও জীবনযুদ্ধে পরাজিত হলে বা নিজের প্রতি কোনো অন্যায়-অবিচার হলে বা ভাগ্যের কাছে হেরে গেলে হঠাত করে এরকম প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। আর তাদের অভিযোগটা আল্যার বিরুদ্ধে। প্রায় প্রতিটা ধর্মের আস্তিকরাই মাঝে মাঝে এমন করে থাকে। আর এভাবে শুরু হয় আল্য-ঈশ্বরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
জীবনের উপর একের পর এক আঘাত আসা শুরু হলে বেঁচে থাকার তাগিদেই এরা ধীরে ধীরে বাস্তবতা বুঝতে শেখে। এগুলা আল্যার পরীক্ষা বলে হুজুররা যতই ওয়াজ করুক, আল্যা নামক ভুজংভাজুং জিনিসের প্রতি মানুষ বিশ্বাস হারাতে শুরু করে, বাস্তববাদী হতে শুরু করে।
কিন্তু এরা সামাজিক জীব বিধায় সমাজকে অস্বীকার করে বেশি দিন বাঁচতে পারবে না। তাই অস্তিত্বের খাতিরে এদের বিদ্রোহটা বা উপলব্ধিটা উগ্র আকারে প্রকাশ করে না। বিশ্বাসী ভাব ধরে থাকে, সামাজিকতার খাতিরে বা অভ্যাসের বশে ধর্মকর্ম করে যায়, কিন্তু বিশ্বাসে চিড় ধরতে থাকে। এক সময় ফাঁটলও ধরে বড় আকারে। এদের এই বিশ্বাসে চিঁড় ধরা বিদ্রোহটার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কিছুটা হলেও অবদান রাখে পরবর্তী প্রজন্মের নাস্তিকতার ভিট গড়ে দিতে।
পরের প্রজন্মকে এরা চেষ্টা করে ভালো স্কুল-কলেজে দিতে, নিজের পায়ে দাঁড় করাতে, ভালো পরিবেশে মানুষ করতে, ইসলামিক দেশ থেকে পারলে ইহুদি-নাসারাদের উন্নত দেশে পাঠিয়ে দিতে চায়। কারণ এরা অভিজ্ঞতা থেকে বুঝে যায়–মুখ দিয়াছেন যিনি আহার তিনি দেন না, আহার নিজেকেই জোগাড় করে নিতে হয়; যার কেউ নাই, তার আল্যাও নাই।
Leave a Reply