‘কন্যার বয়স ষোলো, পাত্রের ঊনিশ বছরে… দুজনের প্রেম হয়ে গেলো…’–শাবনাজ-নাঈম জুটির প্রথম মুভি–‘চাঁদনী’র একটি গান। খুব সম্ভবত বাংলাদেশের প্রথম ‘Teen Movie’।
‘কন্যার বয়স ষোলো’–বিষয়টা বাংলাদেশের আইনে বেআইনী ছিল–যে কোনো ভাবে কন্যার বয়স ১৮ হতে হবে। ইদানিং সেটাবে ‘বিশেষ অবস্থার’ দোহাই দিয়ে ১৬তে নামানো হয়েছে। এই আইনে যেখানে মেয়ের বয়স ১৬ হবে, সেখানে ছেলের বয়স নিয়ে কি কিছু উল্লেখ আছে?
এই আইন ধর্ষণ ও বাল্য বিবাহকে অনুপ্রাণিত করবে–এমন সমালোচনার মুখে অনেকে আইনের পক্ষে সাফাই গাইতে আমেরিকার আইনের প্রসঙ্গ তুলে বলছেন যে সেখানে মা-বাবার অনুমতিতে বাল্য-বিবাহের আইন চালু আছে।
ধর্ষণ বলতে আমরা সাধারণত জোর করে ইচ্ছের বিরুদ্ধে সেএণ্ডক্স করা বুঝি। আর বয়সের ব্যাপারটা ইচ্ছে করে এড়িয়ে যাই, কারণ তাহলে যে আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীজি ধর্ষণ ইস্যুতে ফেঁসে যাবেন। (নবী+আয়েশা কাহিনী)
একটি মেয়ে ঠিক কখন ‘বিয়ের যোগ্য’ হবে, তা আমরা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না। আর এই জন্যই সর্বসম্মতভাবে সবার জন্য সমান আইন করে একটা নির্দিষ্ট বয়স স্থির করে দেয়া হয়েছে–১৮। কিন্তু খোদ আমেরিকাতেই যদি ১৮-এর নিচে বিয়ে হতে পারে, তাহলে আমাদের দেশে হবে না কেন?–জটিল প্রশ্ন! তবে জানার আছে আরো অনেক কিছু।
আমেরিকাতে ১৬ বছরের আগেই প্রায় ৫০% মেয়ে সেএণ্ডক্সের অভিজ্ঞতা লাভ করে। বছরে এরকম সেএণ্ডক্সের সংখ্যা প্রায় কয়েক লক্ষের বেশি। এবং এর খুব কমই ‘ইচ্ছার বিরুদ্ধে’ বা ‘জোর করে’ হয়। অবশ্যই সেগুলো ‘ধর্ষণ’।
প্রশ্ন তুলতে পারেন–যেহেতু ১৮-এর নিচে কোনো মেয়ের সাথে সেএণ্ডক্স করা তো বেআইনী, সেহেতু এ সবই ‘ধর্ষণ’ হবে না কেনো?
এখানেই আমেরিকার ‘রোমিও এণ্ড জুলিয়েট ল’ আসবে। ১৮-এর নিচে কারো মিচুয়াল সেএণ্ডক্স পার্টনার যদি তার চেয়ে ৩ বছরের বেশি বড় না হয় তাহলে সেটা ধর্ষণ হবে না। পার্টনার ৩ বছরের বড় হলে, সেটা উভয়ের সম্মতিক্রমে হলেও বয়সে বড় পার্টনার (ছেলে বা মেয়ে) ধর্ষণের মামলায় ফেঁসে যাবে।
উদাহরণ–এক জনের বয়স ১২, আরেকজনের বয়স ১৫ হলে ইচ্ছানুসারে সেএণ্ডক্স করতে পারবে। কিন্তু একজনের বয়স যদি ১৬ হয়, তাহলে সে দোষী হবে। এক জনের বয়স ১৭, আরেকজনের বয়স ২০ হলে ইচ্ছানুসারে সেএণ্ডক্স করতে পারবে। কিন্তু একজনের বয়স যদি ২১ হয়, তাহলে সে দোষী হবে। অর্থাৎ অপ্রাপ্ত বয়সের হলে পার্টানারের সাথে বয়সের পার্থক্য ৩ বছরের বেশি হতে পারবে না। (ঠিক বুঝেছি তো? যারা এই আইনটার ব্যাপারে জানেন, তারা ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন।) আর একবার এডাল্ট হয়ে গেলে এডাল্টদের মধ্যে কোনো বয়সের হিসাব নেই, শুধু সম্মতি থাকলেই হবে।
এখন কথা হচ্ছে, ১৮-এর নিচে তারা এটা আইনত ভাবে স্বীকৃতি দিল কেন? কারণ বাস্তবে সমাজের অবস্থার দিক দিয়ে এটা প্রতিরোধ করার কোন উপায় নেই। আদিম কৌতূহল থেকে এই বয়সেই ছেলে-মেয়েরা সেএণ্ডক্সের ব্যাপার আগ্রহী হয়ে ওঠে। বিষয়টা স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ চায় না এই বয়সে সন্তান নিতে। আবার সেটা কিভাবে প্রতিরোধ করবে, সেই ‘সেএণ্ডক্স এডুকেশন’ এদের সবার থাকে না। তাই মা-বাবা বা স্কুল থেকেই তাদেরকে এই ব্যাপারে সতর্ক করা হয়, কিভাবে গর্ভরোধ করা যায়, সে ব্যাপারে সঠিক শিক্ষা দিয়ে থাকে, গর্ভরোধের উপায় এবং উপকরণ সরবরাহ করে থাকে। সোজা কথায়–কনডম সাপ্লাই দিয়ে থাকে।
এর পরেও কেউ প্রেগন্যাণ্ট হয়ে গেলে গর্ভপাত করার অপশনটা খোলা রাখতে চায়, কেউ আবার তার বিরোধিতা করে। (এটা অনেকটা পলিটিক্যাল/ধর্মীয় ইস্যু।) তো কেউ গর্ভপাত না করতে চাইলে কাউকে বাধ্যও করা হয় না। রাষ্ট্র এই বাচ্চার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে থাকে। কেউ চাইলে নিজের পরিবারে রেখেও বাচ্চা বড় করতে পারে, বা পুরো ভার সরকারের হাতে ছেড়ে দিতে পারে।
শুধু এই ভাবে নয়, সাধারণ ভাবে বাচ্চা হলেও বাচ্চার বার্থ-সার্টিফিকেট ফর্ম পূরণের সম্পূর্ণ ভার থাকে মেয়েদের উপর। বাচ্চার বাবার নামের ঘরটা অপশনাল। মেয়েদের উপর নির্ভর করে–ইচ্ছে করলে পূরণ করবে, না করলে না। আমেরিকার কোথাও বাবার নাম বাধ্যতামূলক নয়, কেউ এটা জিজ্ঞেসও করে না।
বাংলাদেশ ইউরোপ-আমেরিকাকে অনুসরণ করতে চায়, ভালো কথা। কিন্তু হুট করে আংশিক একটা বিষয় তুলে এনে দেশের উপর চাপিয়ে দেয়া যায় না। আইনের ‘যদি-তবে-কিন্তু’গুলো যদি ফাঁক থেকে যায় তাহলে ক্ষমতাশালী, প্রভাবশালী, অর্থবান, সুবিধাবাদীরা সেই আইনকে ‘ফাক’ করে দেবে–এই দিকটাও মাথায় রাখা উচিত।
Leave a Reply